চা এর মত কফি মৃদু উত্তেজক পানীয় আফ্রিকার ইথিওপিয়া দেশের আবিসিনিয়া উচ্চভূমির কাফা অঞ্চলে সর্বপ্রথম এই গাছের সন্ধান পাওয়া যায় বলে এর নাম হয়েছে কফি।
কফির শ্রেণীবিভাগ
কফির নাম | বিশেষ বৈশিষ্ট্য |
---|---|
১. আরবীয় বা মোচা কফি | উৎকৃষ্ট শ্রেণীর, স্বাদ ও গন্ধে অতুলনীয়। |
২. রোবাস্টা কফি | নিম্নশ্রেণীর, পোকার আক্রমণ কম। |
৩. লাইবেরীয় কফি | ইনস্ট্যান্ট কফি। |
৪. জামাইকান বা ব্লু মাউন্টেন কফি | তীব্র গন্ধযুক্ত। |
ভারতে কফি চাষের অনুকূল ভৌগলিক অবস্থার বিবরণ দাও। বা দক্ষিণ ভারতে অধিক কফি চাষ হয় কেন?
ভারতের দক্ষিণে কর্ণাটক, কেরালা ও তামিলনাড়ু রাজ্যে প্রায় সম্পূর্ণ কফি উৎপাদিত হয়। এই অঞ্চলে অ্যারাবিকা ও রোবাস্টা এই দুই ধরনের কফি চাষ করা হয়। এই অঞ্চলে অধিক কফি উৎপাদিত হওয়ার কারণগুলি হল-
ক) প্রাকৃতিক কারণ
i) ভূপ্রকৃতি
কফি বাগিচা গড়ে তোলার উপযোগী বন্ধুর, অসমতল পাহাড়ি জমি দক্ষিণ ভারতের বাবাবুদান, নীলগিরি, কার্ডামম প্রভৃতি পাহাড়ি অংশে দেখা যায়। এখানে 500 থেকে 1000 মিটার উচ্চতায় রোবাস্টা ও 1000 থেকে 1500 মিটার উচ্চতায় অ্যারাবিকা কফির চাষ করা হয়।
ii) বৃষ্টিপাত
দক্ষিণ ভারতের নীলগিরি, আনাইমালাই, পালনি,কার্ডামম পাহাড়ি অঞ্চলে বছরে 100 - 250 সেন্টিমিটার বৃষ্টিপাত ঘটে, প্রকৃতপক্ষে অ্যারাবিকা কফির জন্য 150-250 সেন্টিমিটার ও রোবাস্টা কফির জন্য 100-200 সেন্টিমিটার বৃষ্টিপাতের প্রয়োজন হয়, যা এই অঞ্চলে সহজেই ঘটে থাকে।
iii) উষ্ণতা
কফি চাষের জন্য 15° -30° সেলসিয়াস উষ্ণতার প্রয়োজন হয়, যা দক্ষিণ ভারতের কর্ণাটক, কেরালা ও তামিলনাড়ু রাজ্যে পরিলক্ষিত হয়।
iv) মৃত্তিকা
জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ, অম্লধর্মী মৃত্তিকা কফি চাষের জন্য উপযুক্ত। তামিলনাড়ুর নীলগিরি ও কর্ণাটকের বাবাবুদান পাহাড় অঞ্চলের লাল রঙের জৈবপদার্থযুক্ত লৌহ সমৃদ্ধ মৃত্তিকা কফি চাষের উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি করে।
খ) ঐতিহাসিক কারণ
ব্রিটিশ শাসনকালে ইংরেজরা দক্ষিণ ভারতে কফি চাষ শুরু করে বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী জানা যায় ইংরেজরা বাণিজ্যিক ভিত্তিতে কফি চাষ শুরু করেন 1840 সাল নাগাদ। এই কারণে দক্ষিণ ভারতে কফি চাষের একদেশীভবন ঘটেছে।
দক্ষিণ ভারতের কফি উৎপাদক অঞ্চলের বিবরণ দাও।
ভারতে কফি উৎপাদনের অধিকাংশই দক্ষিণ ভারতের তিনটি রাজ্যে (কর্ণাটক, কেরল ও তামিলনাড়ু রাজ্যে) উৎপাদিত হয়। কর্ণাটক রাজ্যে দেশের মোট কফি উৎপাদনের তিন চতুর্থাংশ উৎপাদিত হয়। ভারতের প্রায় 3.94 লক্ষ হেক্টর জমিতে 3.20 লক্ষ মেট্রিক টন (2019) কফি উৎপন্ন হয়। কফি উৎপাদনে ভারত পৃথিবীতে সপ্তম স্থান অধিকার করে। নিম্নে দক্ষিণ ভারতের কফি উৎপাদক অঞ্চলের বিবরণ দেওয়া হলো,-
ক) কর্ণাটক
কর্নাটকে ভারতের সবচেয়ে বেশি কফি উৎপাদিত হয়। রাজ্যে প্রায় দুই লক্ষ হেক্টর জমিতে 2.19 লক্ষ টন(2019) কফি উৎপাদিত হয়, যা দেশের মোট উৎপাদনের 70 শতাংশ। হাসান, চিকমাগালু ু কোদাগু ু মাইসোর, শিমোগা প্রভৃতি জেলায় কফি উৎপাদিত হয়। কোদাগু জেলায় এই রাজ্যের সবচেয়ে বেশি কফি উৎপাদিত হয়।
খ) কেরল
কেরল রাজ্য কফি উৎপাদনে ভারতের দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে। রাজ্যে 80 হাজার হেক্টর জমিতে 71 হাজার টন (2019) কফি উৎপাদিত হয়, যা দেশের মোট উৎপাদনের প্রায় 22 শতাংশ। ওয়াইনাড, পালাক্কাড, ইদুক্কি প্রভৃতি জেলায় সবচেয়ে বেশি কফি উৎপাদিত হয়। ওয়াইনাড জেলায় এই রাজ্যের সবচেয়ে বেশি কফি উৎপাদিত হয়।
গ) তামিলনাড়ু
কফি উৎপাদনের তামিলনাড়ু ভারতের তৃতীয় স্থান অধিকার করে। রাজ্যে প্রায় 18 হাজার হেক্টর জমিতে 18 হাজার টন (2019) কফি উৎপাদিত হয়, যা দেশের মোট উৎপাদনের 5.3 %। এই রাজ্যে নীলগিরি, সালেম, কোয়েম্বাটুর, মাদুরাই, তিরুণেলভেলী প্রভৃতি রাজ্যে কফি উৎপাদিত হয়।
রাজ্য | উৎপাদন, লক্ষ মেট্রিক টন | এলাকা, লক্ষ হেক্টর | শতকরা পরিমাণ % |
---|---|---|---|
কর্ণাটক | 2.16 | 1.79 | 70.3 |
কেরল | 0.71 | 0.78 | 20.8 |
তামিলনাড়ু | 0.17 | 0.18 | 5.5 |
অন্ধ্রপ্রদেশ | 0.07 | 0.67 | 2 |
ঘ) অন্ধ্রপ্রদেশ
কফি উৎপাদনে অন্ধ্রপ্রদেশ ভারতের চতুর্থ স্থান অধিকার করে। এই রাজ্যে প্রায় 11 হাজার টন কফি উৎপাদিত হয়, যা দেশের মোট উৎপাদনের 2% । বিশাখাপত্তনমের আরাকু উপত্যকায় কফি উৎপাদিত হয়।
পৃথিবীর কফি উৎপাদনের পরিমাণ,2019
দেশ | কফি উৎপাদন (লক্ষ মেট্রিক টন) |
---|---|
১. ব্রাজিল | 38.36 |
২. ভিয়েতনাম | 21.31 |
৩. কলম্বিয়া | 9.45 |
৪. ইন্দোনেশিয়া | 7.07 |
৫. ইথিওপিয়া | 4.86 |
৬. হন্ডুরাস | 4.29 |
৭. ভারত | 3.2 |
কফি SAQ
১. ভারতের কফি গবেষণা কেন্দ্র কোথায় রয়েছে?
উ: কর্ণাটক রাজ্যের চিকমাগালু শহরে।
২. ভারতের প্রধান কফি কি?
উ: আরবিয় কফি।
৩. ভারত কোন কোন দেশে কফি রপ্তানি করে?
উ: ব্রিটিশ যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, অস্ট্রেলিয়া প্রভৃতি দেশে।
৪. ভারত কোন বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি কফি রপ্তানি করে?
উ: চেন্নাই বন্দর দিয়ে।