Type Here to Get Search Results !

সম্পদ সৃষ্টির উপাদান


প্রকৃতিতে যে সকল বস্তু পাওয়া যায় সেগুলিকে মানুষ তার জ্ঞান, বুদ্ধি ও প্রযুক্তির মাধ্যমে নিজেদের প্রয়োজনীয় উপাদান বা সম্পদে পরিণত করে। অর্থাৎ বলা যায় সম্পদ সৃষ্টির উপাদান হল- প্রকৃতি, মানুষ এবং সংস্কৃতি। এই তিনটি উপাদানের পারস্পরিক ক্রিয়ায় সম্পদ সৃষ্টি হয়।

ক) সম্পদ সৃষ্টিতে প্রকৃতির ভূমিকা: 

সম্পদ সৃষ্টির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো প্রকৃতি। সৌরশক্তি, শিলামন্ডল, বারিমন্ডল এবং বায়ুমণ্ডল প্রভৃতি নিয়ে প্রকৃতি গড়ে ওঠে। মানুষ প্রকৃতির বুক থেকে সম্পদ সৃষ্টি করে। প্রকৃতির মধ্যে সমস্ত বস্তু নিরপেক্ষ উপাদান হিসাবে থাকে। মানুষ তার জ্ঞান, বুদ্ধি, দক্ষতা ও কারিগরি প্রচেষ্টার মাধ্যমে নিরপেক্ষ উপাদানকে সম্পদে পরিণত করে। তাই বলা যায় প্রকৃতি হলো সম্পদের উৎস।

নিরপেক্ষ বস্তুকে মানুষ সহজে সম্পদে পরিণত করতে পারেনা। বিভিন্ন বাধাকে মানুষ তার কর্মকুশলতার মাধ্যমে অতিক্রম করে নিরপেক্ষ বস্তুকে সম্পদে পরিণত করে।

সম্পদ সৃষ্টির ক্ষেত্রে প্রকৃতি কিছু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যেমন- 

i. অনুকূলতা: 

অনেক ক্ষেত্রে প্রকৃতি সম্পদ সৃষ্টিতে সহায়তা করে। যেমন- গাঙ্গেয় সমভূমির পলিমাটি ধান উৎপাদনে সহায়ক।

ii. প্রতিকূলতা: 

অনেক ক্ষেত্রে প্রকৃতি সম্পদ তৈরিতে বাধা সৃষ্টি করে। যেমন- হিমালয়ের পার্বত্য অঞ্চলে কৃষিকাজে বাধা সৃষ্টি হয়।

iii. দরাজভাব: 

প্রকৃতি কখনো কখনো সম্পদ সৃষ্টির বিষয় গুলিকে প্রচুর পরিমাণে সরবরাহ করে। যেমন- দাক্ষিণাত্য মালভূমিতে কৃষ্ণ মৃত্তিকা, প্রয়োজনীয় বৃষ্টিপাত প্রচুর পরিমাণে তুলা উৎপাদনের সহায়ক।

iv. কৃপণতা: 

কখনো কখনো প্রকৃতি সম্পদ সৃষ্টির বিষয়গুলিকে কম সরবরাহ করে। যেমন- মরু অঞ্চলে কৃষিকাজ করার প্রয়োজনীয় বিষয়গুলির সরবরাহ কম।


খ) সম্পদ সৃষ্টিতে মানুষের ভূমিকা: 

মানুষ নিজেই সম্পদ। মানুষের শ্রমশিলতা এবং কর্মদক্ষতা মানবসম্পদ হিসেবে বিবেচিত হয়। মানুষ সম্পদ সৃষ্টি করে, সম্পদ ভোগ করে এবং সম্পদের বিনাশ ঘটায়।

i. সম্পদ সৃষ্টিকারী রূপে মানুষ: 

মানুষ তার দৈহিক শ্রম, জ্ঞান, বুদ্ধি এবং নিজেদের সৃষ্ট প্রযুক্তির মাধ্যমে প্রাকৃতিক উপাদানকে সম্পদে পরিণত করে। যেমন- অরণ্যের কাঠ থেকে মানুষ আসবাবপত্র তৈরি করে। হ্যামিলটনের মতে-  "প্রয়োগ কৌশলই জড় বস্তুকে সম্পদে পরিণত করে"।

ii. সম্পদ ভোগকারী রূপে মানুষ: 

মানুষ খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, বিনোদন প্রভৃতি চাহিদা পূরণ করার জন্য সম্পদ ভোগ করে। মানুষের চাহিদা আছে বলেই নিত্যনতুন বিভিন্ন সম্পদের সৃষ্টি হয়।

iii. সম্পদ ধ্বংসকারী রূপে মানুষ: 

অবৈজ্ঞানিক এবং অপরিকল্পিত কাজকর্মের মাধ্যমে মানুষ সম্পদ ধ্বংস করে। যেমন- বৃক্ষচ্ছেদন, অতিরিক্ত মৎস আহরণ প্রভৃতি।


গ) সম্পদ সৃষ্টিতে সংস্কৃতির ভূমিকা: 

সংস্কৃতি হল মানবিক গুণ। জিমারম্যানের ভাষায় সংস্কৃতি বলতে শিক্ষা, জ্ঞান-বিজ্ঞান, অভিজ্ঞতা, ধর্ম, মার্জিত ব্যবহার, যুদ্ধের পরিবর্তে সহযোগিতা প্রভৃতিকে বোঝায়। সংস্কৃতির সাহায্যে মানুষ সম্পদ সৃষ্টির বাধাকে অতিক্রম করে নিরপেক্ষ সামগ্রীকে সম্পদে পরিণত করতে পেরেছে এবং ভন্ড মানুষ আজ সুসভ্য উন্নত মানুষে পরিণত হয়েছে। তাই বলা যায় জ্ঞান শ্রেষ্ঠ সম্পদ এবং সকল সম্পদের প্রকৃত জননী।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Top Post Ad

Below Post Ad

Ads Area