খাদ্য প্রস্তুতের সময় উদ্ভিদ মৃত্তিকা থেকে যেসব খনিজ উপাদান সংগ্রহ করে সেগুলিকে বলে উদ্ভিদের পুষ্টিমৌল। উদ্ভিদ এই পুষ্টি মৌলগুলিকে জলে দ্রবীভূত অবস্থায় গ্রহণ করে।
উদ্ভিদের পুষ্টিমৌলের শ্রেণীবিভাগ (Classification of Plant Nutrients)
একটি পূর্ণাঙ্গ বৃদ্ধিপ্রাপ্ত উদ্ভিদে প্রায় ৯০ টি পুষ্টি মৌল থাকে এদের মধ্যে অল্প সংখ্যক পুষ্টি মৌল উদ্ভিদের বৃদ্ধি ও বিকাশে সরাসরি প্রভাব বিস্তার করে। নিম্নে বিভিন্ন প্রকার পুষ্টি মৌল আলোচনা করা হল,-
ক. প্রয়োজনীয়তার ভিত্তিতে (Based on necessity)
i. অপরিহার্য মৌল (Essential elements) : যেসব মৌলের অনুপস্থিতিতে উদ্ভিদের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও বিকাশ ব্যাহত হয়, তাকে অপরিহার্য মৌল বলে। সাধারণত 20টি মৌলকে অপরিহার্য বলে বিবেচনা করা হয়। এই 20টি অপরিহার্য মৌল হল—কার্বন, হাইড্রোজেন, অক্সিজেন, নাইট্রোজেন, ফসফরাস, পটাশিয়াম, ক্যালশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, সালফার, লোহা, ম্যাঙ্গানিজ, তামা, দস্তা, মলিবডেনাম, ক্লোরিন, সোডিয়াম, কোবাল্ট, সিলিকন, ভ্যানাডিয়াম ও নিকেল।
ii. উপকারী মৌল (Beneficial elements) : যে সব মৌল উদ্ভিদের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে এবং এই মৌলগুলির অনুপস্থিতি গাছের বৃদ্ধি ও বিকাশে বিশেষ প্রভাব ফেলে না, তাকে উপকারী মৌল বলে। যেমন—ক্রোমিয়াম, আর্সেনিক, স্ট্রনসিয়াম প্রভৃতি।
খ. পরিমাণের ভিত্তিতে (Based on quantity)
i. অতিমাত্রিক মৌল (Macro nutrient) : যে মৌলগুলি উদ্ভিদের পুষ্টিতে অত্যন্ত প্রয়োজন, তাদের অতিমাত্রিক মৌল বলে। যেমন—কার্বন, হাইড্রোজেন, অক্সিজেন, নাইট্রোজেন, সালফার, ফসফরাস ( CHONSP ) প্রভৃতি।
ii. স্বল্পমাত্রিক মৌল (Micro nutrient) : যে অপরিহার্য মৌলগুলি উদ্ভিদের পুষ্টিতে খুব কম পরিমাণে প্রয়োজন হয়, তাকে স্বল্পমাত্রিক মৌল বলে। যেমন—ম্যাঙ্গানিজ, দস্তা, তামা, মলিবডেনাম, কোবাল্ট, সিলিকন প্রভৃতি।
গ. উৎপত্তিগত বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে (Based on genetic characteristics)
i. জৈব মৌল ( Organic nutrients) : জীবদেহ থেকে সৃষ্ট মৌলকে জৈব মৌল বলে। যেমন- ফ্যাটি অ্যাসিড, গ্লিসারল, অ্যামাইনো অ্যাসিড।
ii. অজৈব বা খনিজ মৌল (Mineral nutrients) : যে সকল পুষ্টিমৌল অজৈব প্রক্রিয়ায় সৃষ্টি হয় তাকে অজৈব মৌল বা খনিজ মৌল বলে। এই সকল মৌল গুলির সুনির্দিষ্ট রাসায়নিক সংযুক্তি ও পারমাণবিক গঠন থাকে। যেমন- পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, লোহা, তামা (ধাতব মৌল ) হাইড্রোজেন, অক্সিজেন, নাইট্রোজেন (অধাতব মৌল) প্রভৃতি।
ঘ. কাজের ভিত্তিতে (Based on functional properties) :
i. সাংগঠনিক মৌল (Framework elements) যে সকল মৌল উদ্ভিদদেহে কোশ প্রাচীর গঠনে সহায়তা করে , তাকে সাংগঠনিক মৌল বলে। যেমন—কার্বন, হাইড্রোজেন, অক্সিজেন প্রভৃতি।
ii. প্রোটোপ্লাজমীয় মৌল (Protoplasmic elements) : যে সকল মৌল উদ্ভিদদেহে প্রোটোপ্লাজম তৈরিতে অংশগ্রহণ করে, তাকে প্রোটোপ্লাজমীয় মৌল বলে। যেমন— নাইট্রোজেন, ফসফরাস প্রভৃতি।
iii. সংকটপূর্ণ মৌল (Critical elements) : যে সব মৌল উদ্ভিদের পুষ্টিতে অত্যন্ত বেশি পরিমাণে প্রয়োজন তাদের সংকটপূর্ণ মৌল বলে। এগুলি হল—নাইট্রোজেন, ফসফরাস ও পটাশিয়াম (NPK)।
iv. অনুঘটক মৌল (Catalytic elements) : যে সব মৌল উদ্ভিদদেহে জৈব রাসায়নিক বিক্রিয়ায় অংশ নেয়, তাদের অনুঘটক মৌল বলে। যেমন—ম্যাঙ্গানিজ।
পরিপোষক বা মৌল (Nutrient) কি?
যে সব জৈব ও অজৈব বস্তু জীবের সবরকমের শারীরবৃত্তীয় কাজে অংশ নিয়ে জীবের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও বিকাশ বজায় রাখতে সাহায্য করে, তাকে পরিপোষক বা মৌল বলে।
(Trace Elements) কি?
যেসব উপাদান গাছের বৃদ্ধি ও পুষ্টির জন্য অতি নগণ্য পরিমাণে প্রয়োজন হয়, তাদের Trace Elements বলে। যেমন - সিলিকন, অ্যালুমিনিয়াম, কোবাল্ট ও আয়োডিন ।
পুষ্টিচক্র (Nutrient Cycle) কি?
পরিবেশের বিভিন্ন পুষ্টিকর উপাদানগুলি (যেমন—নাইট্রোজেন, ফসফরাস, অক্সিজেন, কার্বন ডাই অক্সাইড প্রভৃতি) যেমন পরিবেশ থেকে উদ্ভিদ বা জীবদেহে যায়, আবার তেমন জীবদেহ বা উদ্ভিদ দেহ থেকে ওগুলি পরিবেশেই ফিরে আসে। এই চক্রাকার প্রক্রিয়াকে বলা হয় পুষ্টিচক্র।
মাটিতে নাইট্রোজেন স্থাপনকারী জীবাণুর নাম কি?
উ: বায়ুজীবী অ্যাজোটোব্যাক্টর (Azotobactor) ও অবায়ুজীবী ক্লসট্রিডিয়াম (Clostridium) ব্যাকটেরিয়া।
উদ্ভিদ নাইট্রোজেন কোথা থেকে সংগ্রহ করে?
উ: জৈব পদার্থের থাকা অ্যামোনিয়াম, নাইট্রাইট ও নাইট্রেট গাছের নাইট্রোজেনের মূল উৎস।
উদ্ভিদের ফসফরাসের প্রধান উৎস কি?
উ: অ্যাপেটাইট খনিজ এবং ফসফেটিক নুড়ি।
উদ্ভিদের পটাশিয়ামের প্রধান উৎস কি?
উ: পটাশ মাইকা, মাস্কোভাইট মাইকা, বায়োটাইট মাইকা, অর্থক্লেজ ।
ক্লোরোফিলের একমাত্র ধাতব উপাদান কোনটি?
উ: ম্যাগনেসিয়াম।
ক্লোরোসিস কি?
উ: কিছু খনিজ মৌলের অভাবে গাছের পাতা হলুদ হয়ে যায়। একে ক্লোরোসিস বলে। যেমন- পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, লোহা প্রভৃতি পুষ্টি মৌলের অভাবে ক্লোরোসিস রোগ দেখা যায়।
নেক্রোসিস কি?
উ: ক্লোরোসিস হওয়ার পর হলুদ হয়ে যাওয়া পাতা শুকিয়ে যায়। এই লক্ষণকে নেক্রোসিস বলে।
হাইড্রোপনিকস কি?
উ: যখন মাটিহীন অবস্থায় কেবলমাত্র বায়ুভরা পরিপোষক দ্রবণের মধ্যে উদ্ভিদ জন্মানো হয় তখন তাকে বলা হয় হাইড্রোপনিকস (Hydroponics)।
মাটিতে কার্বন-নাইট্রোজেন অনুপাত বা C : N অনুপাত থাকে 8 : 1 থেকে 15: 1 ।