Type Here to Get Search Results !

ভূমিরূপ প্রক্রিয়া / অন্তর্জাত প্রক্রিয়া / বহির্জাত প্রক্রিয়া

 ভূমিরূপ প্রক্রিয়া 

পৃথিবীর অন্তঃস্থ ও বহি:স্থ বিভিন্ন শক্তির মাধ্যমে ভৌত ও রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় ভূমিরূপের যে পরিবর্তন ও বিবর্তন ঘটে, তাকেই ভূমিরূপ প্রক্রিয়া বলে।

ভূমিরূপ প্রক্রিয়ার শ্রেণীবিভাগ:

উৎপত্তি অনুসারে ভূমিরূপ প্রক্রিয়াকে মূলত দুটি ভাগে ভাগ করা যায়। যথা- 

ক. পার্থিব প্রক্রিয়া (Terrestrial Processes): 

পৃথিবীর অভ্যন্তরে এবং ভূপৃষ্ঠের উপরিভাগে সংঘটিত ভূমিরূপ প্রক্রিয়াকে পার্থিব প্রক্রিয়া বলে।

পার্থিব প্রক্রিয়া মূলত দুই প্রকার। যথা- 

অ. অন্তর্জাত প্রক্রিয়া (Endogenetic Processes) 

ইংরেজি Endogenetic শব্দটির উৎপত্তি দুটি গ্রিক শব্দ Endon (অন্তরভাগ ) ও Genesis (উৎপত্তি) থেকে এসেছে, যার অর্থ হল অন্তর্জাত।

ভূ-অভ্যন্তরে সৃষ্ট যে সকল ধীর ও আকস্মিক বল ভূমিরূপের পরিবর্তন ঘটায় তাকে অন্তর্জাত প্রক্রিয়া বলে। এই বল স্থানীয় বা আঞ্চলিকভাবে ভূমিরূপের পরিবর্তন ঘটায়।

অন্তর্জাত প্রক্রিয়ার বৈশিষ্ট্য:

  • অন্তর্জাত প্রক্রিয়া মূলত ভূ- অভ্যন্তরে সৃষ্টি হয়।
  • এই প্রক্রিয়ার কাজ মূলত গঠনমূলক।
  • ভূ-অভ্যন্তরে ধীর এবং আকস্মিকভাবে এই প্রক্রিয়া কার্যকর হয়।
  • ভূ-অভ্যন্তরের উত্তপ্ত অবস্থা এই প্রক্রিয়া সৃষ্টির জন্য দায়ী।
  • ভূপৃষ্ঠের ভূমিরূপ বিবর্তনকে এই প্রক্রিয়া প্রভাবিত করে।

অন্তর্জাত প্রক্রিয়ার প্রকারভেদ: অন্তর্জাত প্রক্রিয়াকে মূলত দুইটি ভাগে ভাগ করা যায়। যথা - 

A. ধীর আলোড়ন: ভূ-অভ্যন্তরে সৃষ্ট ধীরগতিসম্পন্ন যেসকল প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ভূত্বকের পরিবর্তন সাধিত হয়, সেই সব শক্তিকে ধীর আলোড়ন বলে। ধীর আলোড়নকে দুটি ভাগে ভাগ করা যায়, যেমন - (1) মহীভাবক আলোড়ন, (2) গিরিজনি আলোড়ন।


1. মহিভাবক আলোড়ন (Epeirogenic Movement) : ইংরেজি 'Epeirogenic' শব্দটি এসেছে গ্রিক শব্দ 'Epiros' অর্থাৎ ‘মহাদেশ' ও 'Genesis' বা 'উৎস' বা 'গঠন' থেকে। যার অর্থ মহাদেশ গঠনকারী ভূ-অভ্যন্তরীণ বল।

যে বল পৃথিবীর ব্যাসার্ধ বরাবর বা উলম্বভাবে কার্যকর হয়ে ভূত্বকের বিস্তীর্ণ অংশ খাড়া ভাবে উপরে উঠে গিয়ে মহাদেশ অথবা নিচে বসে গিয়ে মহাদেশের অংশ সমুদ্রে পরিণত হয় তাকে মহীভাবক আলোড়ন বলে।

বৈশিষ্ট্য:

  • মহিভাবক আলোড়ন ভূপৃষ্ঠে উল্লম্বভাবে বা ব্যাসার্ধ বরাবর কাজ করে।
  • মহাদেশীয় ভূমির উত্থান ও অবনমন ঘটে থাকে।
  • মহিভাবক আলোড়নে শিলাস্তরে কোনো বিরূপণ (Deformation) হয় না অর্থাৎ এর নতি ও অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হয় না।
  • মহাদেশ গঠনকারী ধীর অন্তর্জাত বল ।
  • আলোড়ন ব্যাপক আকারে সমগ্র মহাদেশ জুড়ে ঘটে। তবে স্থানীয় বা আঞ্চলিকভাবে এর প্রভাব দেখা যায়।

ফলাফল: মহাদেশ, মহাসাগর, চ্যুতি, গ্রস্ত উপত্যকা, প্রবাল প্রাচীর, দ্বীপ, ভৃগুতট ও স্তূপ পর্বত সৃষ্টি হয়।

উদাহরণ: ভারতের বিন্ধ্য ও সাতপুরা স্তূপ পর্বত; নর্মদা নদীর গ্রস্ত উপত্যকা এইভাবে সৃষ্টি হয়েছে।


2. গিরিজনি আলোড়ন (Orogenic Movement): ইংরেজি শব্দ Orogenic-এর উৎপত্তি গ্রিক শব্দ oros (পর্বত) এবং genesis (জন্ম) থেকে, যার অর্থ পর্বত গঠনকারী অন্তর্জাত বল।

যে আলোড়ন ভূ-পৃষ্ঠে অনুভূমিকভাবে কাজ করে ভঙ্গিল পর্বত সৃষ্টি করে, তাকে গিরিজনি আলোড়ন বলে।

বৈশিষ্ট্য:

  • পৃথিবীর স্পর্শক বরাবর বা অনুভূমিক ভাবে কাজ করে।
  • অনুভূমিকভাবে প্রধানত টান এবং সংনমন বল কার্যকর হয়।
  • ব্যাপক বা বিশাল অঞ্চল জুড়ে কাজ করে।
  • এটি ভঙ্গিল পর্বত গঠনকারী ধীর অন্তর্জাত বল।
  • সাধারণত মহাসাগর তলদেশে বা উপকূল অঞ্চলে সংঘটিত হয়।


সৃষ্ট ভূমিরূপ: ভঙ্গিল পর্বত, চ্যুতি, ন্যাপ, পর্বতবেষ্টিত মালভূমি এর ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপ।

উদাহরণ : আন্দিজ, হিমালয়, রকি ইত্যাদি ভঙ্গিল পর্বতমালা এই আলোড়নে সৃষ্টি হয়েছে।


B. আকস্মিক আলোড়ন: ভূঅভ্যন্তরে সৃষ্ট দ্রুতগতি সম্পন্ন যেসকল প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ভূত্বকের আকস্মিক পরিবর্তন লক্ষ করা যায়, সেই শক্তিকে আকস্মিক আলোড়ন বলে। যেমন – (1) ভূমিকম্প, (2) অগ্ন্যুৎপাত।


আ. বহির্জাত প্রক্রিয়া( Exogenetic Process): 

ইংরেজি Exogenetic শব্দটির উৎপত্তি দুটি গ্রিক শব্দ Exo (বহির্ভাগ) ও Genesis (উৎপত্তি) থেকে। এর অর্থ হল বহির্জাত।

বিভিন্ন প্রাকৃতিক শক্তির মাধ্যমে যান্ত্রিক ও রাসায়নিকভাবে ভূপৃষ্ঠের পরিবর্তনকে বলা হয় বহির্জাত প্রক্রিয়া।

বহির্জাত প্রক্রিয়াসমূহ সাধারণত তিনটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। যেমন- 

A. অবরোহণ প্রক্রিয়া (Degradation process) : যে সকল প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ভূপৃষ্ঠের উঁচু অংশ ধীরে ধীরে ক্ষয় হয়ে ক্রমশ নীচু হয়, সেই প্রক্রিয়াগুলিকে সম্মিলিতভাবে অবরোহণ প্রক্রিয়া বলে। অবরোহণ প্রক্রিয়া আবহবিকার, ক্ষয়ীভবন ও পুঞ্জিত ক্ষয় এই তিনভাবে কাজ করে।

B. আরোহণ প্রক্রিয়া (Aggradation process) : যে সকল প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ভূপৃষ্ঠের উচ্চতা ক্রমশ বৃদ্ধি পায়, তাকে আরোহণ প্রক্রিয়া বলে। নদী, বায়ু, হিমবাহ, সমুদ্রতরঙ্গ ইত্যাদি এই প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

C. জৈবিক প্রক্রিয়া (Biotic process) : বিভিন্ন উদ্ভিদ ও প্রাণী ক্ষয় ও সঞ্চয়ের মাধ্যমে ভূমিরূপের যে পরিবর্তন সাধিত হয়, তাকে জৈবিক প্রক্রিয়া বলে। যেমন—নদী বাঁধ নির্মাণ, ঝুম চাষ, খনিজ সম্পদ উত্তোলন, রাস্তা তৈরি, ইটভাটা নির্মাণ ইত্যাদি কাজে মানুষ ভূমিরূপের পরিবর্তন ঘটায়।


খ. অপার্থিব বা মহাজাগতিক প্রক্রিয়া: 

 অপার্থিব বা মহাজাগতিক প্রক্রিয়া বলতে সাধারণভাবে মহাকাশ থেকে ছুটে আসা উল্কার (meteor) পতন এবং তার ফলে ভূমিরূপের যে পরিবর্তন হয় তাকে বোঝায়।

উদাহরণ: আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনা রাজ্যের মেটিওর ক্রেটার (meteor crater) নামে সুবিশাল গর্ত বা খাদটি এইভাবে সৃষ্টি হয়েছে।


➤ভূ-বিপর্যয় (Diastrophism):

গ্রীক শব্দ ‘Diastropho' অর্থ 'turned, twisted, destorted"।

পৃথিবীর যে সব আলোড়নের ফলে কঠিন ভূ-ত্বকের আপেক্ষিক স্থানান্তর ঘটে, তাকে ভূ-বিপর্যয় বলে। গিলবার্ট (1890) মহীভাবক ও গিরিজনী আলোড়নকে সম্মিলিতভাবে ডায়াসট্রফিজম বলেছেন।

বৈশিষ্ট্য : 

i) পর্বত, মালভূমি ইত্যাদি প্রথম শ্রেণীর ভূমিরূপ গঠিত হয়।

ii) ভূ-বিপর্যয় ধীর (Slow) ও আকস্মিক (Sudden) এই দুই ভাগে বিভক্ত।


➤ সমস্থিতিক আলোড়ন (Isostatic movement): পৃথিবীতে যে ভূ-আলোড়নের মাধ্যমে পর্বত, মালভূমি, সমভূমি ও সমুদ্রতলের মধ্যে ভারসাম্য সাধিত হয়, সেই আলোড়নকে সমস্থিতিক আলোড়ন বলে ।

➤ ইউস্ট্যাটিক আলোড়ন (Eustatic Movement) : বিশ্বব্যাপী সমুদ্রের জলধারণ ক্ষমতার হ্রাসবৃদ্ধির ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উত্থান-পতনের পরিবর্তন হওয়াকে ইউস্ট্যাটিক আলোড়ন বলে।

➤ পর্যায়ন প্রক্রিয়া (Gradational Process) : যে প্রক্রিয়ায় অসমতল ও বন্ধুর ভূমি ক্ষয়সীমার সাপেক্ষে ক্ষয় ও সঞ্চয় কার্যের মাধ্যমে সমতলে পরিণত হয় তাকে পর্যায়ন বা ক্রমায়ন বলে। ক্ষয় ও সঞ্চয়ের মধ্যে ভূমির সাম্য অবস্থা বিরাজ করলে তাকে পর্যায়িত ভূমি বলে।

➤ Chamberlin ও Salisbury (1904) প্রথম 'পর্যায়ন' বা ‘Gradation' শব্দটি ব্যবহার করেন।

➤ 1876 সালে G. K. Gilbert সর্বপ্রথম 'গ্রেড' (Grade) বা 'ক্রম' শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন।


➤ পীড়ন : বাইরের বলের মাধ্যমে কোনো বস্তুর ওপর চাপ দিলে ওই চাপকে প্রতিরোধ করার জন্য বস্তুর ভিতর থেকে যে প্রতিক্রিয়া বলের সৃষ্টি হয় তাকে পীড়ন বলে।


➤ নগ্নীভবন (Denudation) : আবহবিকার, পুঞ্জিত ক্ষয় ও ক্ষয়ীভবন—এই তিনটি পদ্ধতির যৌথ ক্রিয়াশীলতায় ভূপৃষ্ঠের উপরিভাগের শিলাস্তর বিচ্ছিন্ন হয়ে অপসারিত হয় এবং নীচের শিলাস্তর ভূপৃষ্ঠে উন্মুক্ত হয়। এই অবরোহণ প্রক্রিয়াকে নগ্নীভবন বলে।

নগ্নীভবন = আবহবিকার + পুঞ্জিত ক্ষয় + ক্ষয়ীভবন।

➤ মহিখাত তত্ত্বের প্রবক্তা কে?  

উঃ মহিখাত তত্ত্বের প্রবক্তা হলেন আলফ্রেড কোবার।

➤ তাপ সংকোচন মতবাদের প্রবক্তা কে?

উঃ  তাপ সংকোচন মতবাদের প্রবক্তা হ্যারল্ড জেফ্রিজ।

➤ পরিচলন স্রোত মতবাদের প্রবক্তা কে?

উঃ পরিচলন স্রোত মতবাদের প্রবক্তা হলেন আর্থার হোমস্ ।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Top Post Ad

Below Post Ad

Ads Area