আবহাওয়ার বিভিন্ন উপাদান, যেমন- উষ্ণতা, বৃষ্টিপাত, বায়ুর আর্দ্রতা, বায়ু চাপ প্রভৃতির দ্বারা শিলাখন্ড যখন ভেঙ্গে যায় এবং সেই স্থানে অবস্থান করে তখন তাকে আবহবিকার বলে। আবহবিকারের ফলে ভেঙে যাওয়া শিলাখন্ড একই স্থানে অবস্থান করে। শুধুমাত্র বায়ুমন্ডলের উপাদান আবহবিকার ঘটাতে সাহায্য করে না। আবহবিকারে প্রাণীদের ভূমিকা যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া উদ্ভিদ আবহবিকার ঘটাতে সহায়তা করে। উদ্ভিদ এবং প্রাণী দ্বারা সৃষ্ট আবহবিকারকে জৈবিক অববাহিকার বলে।
আবহবিকারের শ্রেণীবিভাগ:
আবহবিকারকে মূলত তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়। যথা- যান্ত্রিক আবহবিকার, রাসায়নিক আবহবিকার এবং জৈবিক আবহবিকার বা জীব দ্বারা সংঘটিত আবহবিকার।
জৈবিক আবহবিকার কাকে বলে:
যে প্রক্রিয়ায় উদ্ভিদ এবং প্রাণী দ্বারা শিলাস্তর যান্ত্রিকভাবে চূর্ণ-বিচূর্ণ হয় এবং রাসায়নিক ভাবে বিয়োজিত হয় তাকে জৈবিক আবহবিকার বলে। এই প্রকার আবহবিকার দুইভাবে সংঘটিত হয়। যথা -
জৈবিক আবহবিকারে প্রাণীদের ভূমিকা:
জৈবিক আবহবিকার |
ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র জীব থেকে বৃহৎ প্রাণী দ্বারা যদি শিলাস্তর যান্ত্রিকভাবে চূর্ণ-বিচূর্ণ এবং রাসায়নিকভাবে বিরোজিত হয়, তবে তাকে প্রাণী দ্বারা সৃষ্ট জৈবিক আবহবিকার বলে। প্রাণী দ্বারা সৃষ্ট ও আবহবিকার ধরন অনুযায়ী আবহবিকার দুই প্রকারের হয়,-
(i) প্রাণী দ্বারা সৃষ্ট যান্ত্রিক আবহবিকার:
এক্ষেত্রে শিলাস্তর যান্ত্রিকভাবে ভেঙে চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়। কেঁচো, পিঁপড়ে, খরগোশ, ইঁদুর, খেকশিয়াল শিলাস্তরে গর্ত করে অথবা আঁচড় কেটে শিলাস্তরকে টুকরো টুকরো করে।
মানুষ চাষবাস করার সময় রাস্তাঘাট নির্মাণ খনিজ পদার্থ আহরণ করার সময় শিলার স্তর গুলিকে যান্ত্রিকভাবে ভেঙে টুকরো টুকরো করে। এর ফলে এই ধরনের আবহবিকারের সৃষ্টি হয়।
(ii) প্রাণী দ্বারা সৃষ্ট রাসায়নিক আবহবিকার:
প্রাণীদেহ থেকে নির্গত পদার্থ যখন শিলাস্তরকে রাসায়নিকভাবে বিয়োজিত করে তখন তাকে প্রাণী দ্বারা সৃষ্ট রাসায়নিক আবহবিকার বলে। এই প্রকার আবহবিকারে মূল শিলার সঙ্গে আবহবিকার প্রাপ্ত শিলার কোন মিল থাকেনা।
প্রাণীদের মৃত দেহাবো শেষ পৌঁছে যে জৈব অম্ল সৃষ্টি হয় তার সঙ্গে শিয়ার বিয়োজন ঘটায় মূল শিলা ভেঙে যায়।
শিলায় বসবাসকারী বিভিন্ন কিট ও জীবাণুর দেহ নিঃসৃত রস, মলমূত্র শিলার রাসায়নিক আবহবিকারে সহায়তা করে।
জৈবিক আবহবিকারে উদ্ভিদের ভূমিকা:
উদ্ভিদের বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গের মাধ্যমে শিলাস্তর যখন যান্ত্রিকভাবে এবং রাসায়নিকভাবে ভেঙে যায়, তখন তাকে উদ্ভিদ দ্বারা সৃষ্ট জৈবিক আবহবিকার বলে। এই আবহবিকার দুই প্রকার হতে পারে।
(i) উদ্ভিদের সৃষ্ট যান্ত্রিক আবহবিকার:
উদ্ভিদের কোন অঙ্গের মাধ্যমে শিলাস্তর যখন যান্ত্রিকভাবে চূর্ণ-বিচূর্ণ হয় তখন তাকে উদ্ভিদ দ্বারা সৃষ্ট যান্ত্রিক আবহবিকার বলে। শিলাস্তরের ফাটলের মধ্যে গাছের শিকড় প্রবেশ করে ফাটলকে বাড়িয়ে দেয়। এইভাবে কালক্রমে শিলা খণ্ডবিখন্ড হয়ে যায়।
(ii) উদ্ভিদ দ্বারা সৃষ্ট ও রাসায়নিক আবহবিকার:
মৃত উদ্ভিদ অথবা উদ্ভিদের দেহ নিঃসৃত কোন পদার্থ দ্বারা বিয়োজিত হলে তাকে উদ্ভিদ দ্বারা সৃষ্ট রাসায়নিক আবহবিকার বলে। উদ্ভিদের শিকড়, ডাল, পাতা প্রভৃতি পচে গিয়ে সৃষ্ট জৈব অ্যাসিড যেমন- হিউমিক, ল্যাকটিক, সাইট্রিক অ্যাসিড শিলার খনিজের সঙ্গে বিক্রিয়া করে শিলাকে মাটিতে পরিণত করে।