Type Here to Get Search Results !

এল নিনো

             এল নিনো একটি স্পেনীয় শব্দ, যার অর্থ শিশু খ্রীষ্ট (Christ Child)। ডিসেম্বর মাসে বড়দিনের সময়ে প্রশান্ত মহাসাগরের পূর্ব দিকে উষ্ণ সমুদ্র স্রোতের সৃষ্টি হয়, তাকে এল নিনো বলে। দক্ষিণ আমেরিকার সংলগ্ন প্রশান্ত মহাসাগরের পেরু উপকূলে এইরকম অস্থির এবং অনির্দিষ্ট উষ্ণ সমুদ্রস্রোতের আবির্ভাব ঘটে।

এল নিনো 


উৎপত্তির কারণ 

     এল নিনোর উৎপত্তি সম্পর্কে বিভিন্ন রকম মতবাদ প্রচলিত রয়েছে । যেমন -

1. সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা পার্থক্য

             স্বাভাবিক অবস্থায় দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরের পূর্ব দিকে অর্থাৎ পেরু এবং চিলি উপকূলে শীতল হাম্বল স্রোত প্রবাহিত হয় হামবোল্ড স্রোত ঊর্ধ্বগামী হওয়ার ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠে শীতল জল অবস্থান করে। এই সময়ে প্রশান্ত মহাসাগরের পূর্ব দিকে শীতল স্রোত 

থাকার জন্য উচ্চচাপ অবস্থান করে। দক্ষিণ-পূর্ব আয়ন বায়ুর প্রভাবে এই জলরাশি পশ্চিম দিকে অর্থাৎ উষ্ণ অঞ্চলের দিকে স্থানান্তরিত হয়। ফলে পশ্চিম ভাগে নিম্নচাপ বিরাজ করে। ক্রমাগত সমুদ্র জল পশ্চিম দিকে স্থানান্তরিত হওয়ার ফলে দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরের পূর্ব দিকের তুলনায় পশ্চিম দিকে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়তে থাকে ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠ বরাবর একটি পূর্বমুখী ঢালের সৃষ্টি হয়। পশ্চিমভাগ এর তুলনায় পূর্ব ভাগের জলের পার্থক্য যখন 50 থেকে 100 সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয় তখন জল সমতা রক্ষা করার জন্য পশ্চিমের উষ্ণ সমুদ্র জল পূর্বদিকে অগ্রসর হয় হয়ে পেরু চিলির পশ্চিম উপকূলে উপস্থিত হয় এই উষ্ণ জল উষ্ণ সমুদ্র স্রোত রূপে দক্ষিনে অগ্রসর হয় অর্থাৎ এল নিনোর আবির্ভাব ঘটে এর ফলে পশ্চিম দিকে র নিম্নচাপ পূর্বদিকে অবস্থান করে এবং বৃষ্টিপাত হয় পশ্চিম দিকে এই সময়ে উচ্চচাপ অবস্থান করার জন্য আবহাওয়া এবং বৃষ্টিহীন থাকে এই সময় দক্ষিণী দোলন ( Southern Oscillation) হয়।

          এরপর যখন সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতার মধ্যে সমতা আসে তখন এল নিনোর প্রভাব রাস পায় এবং সমুদ্র স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে সাধারণত 2 থেকে 7 বছর অন্তর এই রকম ঘটনা ঘটে এবং এই ঘটনা নয় মাস থেকে 2 বছর পর্যন্ত স্থায়ী হয়। 


2. সমুদ্র তলদেশে ভূমিকম্প এবং অগ্নুৎপাত এর অবস্থান

          কোন কোন সমুদ্র বিজ্ঞানী মনে করেন প্রশান্ত মহাসাগরের তলদেশে অবস্থিত সামুদ্রিক শৈলশিরা থেকে যে ভূমিকম্প এবং অগ্নুৎপাত ঘটে তার ফলে এল নিনোর আবির্ভাব হয় ।


3. উষ্ণ স্থান

          আবহবিজ্ঞানীরা ভি বার্ক নেস এর মতে পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরের বুকে কোথাও স্থানে উষ্ণ স্থান এর উৎপত্তি হলে এল নিনোর আবির্ভাব হয় 

        এল ননো সম্পর্কে অনেক কিছু এখন পর্যন্ত জানা সম্ভব হলেও এটি কেন উৎপত্তি হয় সে সম্পর্কে সঠিক তথ্য এখনো জানা সম্ভব হয়নি।


এল নিনোর লক্ষণ:

(i) ভারত মহাসাগরের পূর্ব ভাগ, অস্ট্রেলিয়া, ইন্দোনেশিয়া এবং প্রশান্ত মহাসাগরের পশ্চিম ভাগে বায়ুর চাপ বৃদ্ধি পায়।

(ii) প্রশান্ত মহাসাগরের মধ্য এবং পূর্বভাগে বায়ুর চাপ হ্রাস পায়।

(iii) প্রশান্ত মহাসাগরের পূর্বভাগে ক্রান্তীয় অঞ্চলে সৃষ্ট দক্ষিণ পূর্ব আয়ন বায়ু দুর্বল হয়ে পড়ে এবং পশ্চিম দিক থেকে পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়।

(iv) পেরু দেশের মরুভূমি অঞ্চলে আর্দ্র আবহাওয়া বিরাজ করে এবং বৃষ্টিপাত হয়।

(v) পূর্ব ভারত মহাসাগর এবং পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরের উষ্ণ জল পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরের দিকে বয়ে যায়। বৃষ্টিপাত পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগর থেকে ধীরে ধীরে পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরের দিকে অগ্রসর হয়।

(vi) পেরু উপকূলের নিকট দিয়ে প্রবাহিত হামবোল্ড স্রোতের পরিবর্তে দক্ষিণ দিকে উষ্ণ নিরক্ষীয় প্রতিস্রোত বয়ে যায়।


এল নিনোর প্রভাব:

(i) যে বছরগুলিতে এল নিনো আবির্ভাব হয় সেই বছরগুলিতে ইন্দোনেশিয়ার সহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশ অস্ট্রেলিয়া ও ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ হ্রাস পায়। ফলে খরা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।

(ii) দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের পেরু উপকূল এবং আটাকামা মরুভূমিতে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।

(iii) পেরুর উপকূলে এল নিনোর বছরগুলিতে উষ্ণ সমুদ্রস্রোত প্রবাহিত হওয়ার জন্য মাছের খাদ্য প্লাঙ্কটন জন্মাতে পারে না। ফলে মৎস্য আহরণের পরিমাণ কমে যায়।

(iv) পশ্চিম গোলার্ধের আবহাওয়া স্বাভাবিক অবস্থার থেকে উষ্ণ হয়।

(v) দক্ষিণ এশিয়া এবং আফ্রিকার পূর্ব উপকূলে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর আগমন বাধাপ্রাপ্ত হয়। ফলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমে যায়।


কোন মহাসাগরে এল নিনো ঘটে?

উ: প্রশান্ত মহাসাগরে এল নিনো দেখা যায়।


এল নিনো শব্দের অর্থ কি ?

উ: এল নিনো একটি স্পেনীয় শব্দ, যার অর্থ শিশু খ্রীষ্ট (Christ Child)।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Top Post Ad

Below Post Ad

Ads Area