Type Here to Get Search Results !

পরিকল্পনা অঞ্চল

 

গ্লাসন (Glasson,1974) বাহ্যিক অঞ্চল এবং ক্রিয়ামূলক অঞ্চল- এই দুই অঞ্চলের সম্মিলনে আরেক পৃথক ধরনের অঞ্চলের ধারণা দিয়েছিলেন। যা পরিকল্পনা অঞ্চল নামে পরিচিত। তবে বিভিন্ন ভৌগোলিকদের মত অনুযায়ী পরিকল্পনা অঞ্চলের সংজ্ঞা বিভিন্ন রকম ভাবে দেওয়া যেতে পারে।

পরিকল্পনা অঞ্চল কাকে বলে?

    বুদেভিল (Boudeville) এর মতে- পরিকল্পনা অঞ্চল হল এমন একটি ক্ষেত্র যেখানে এক বা একাধিক অর্থনৈতিক বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে সংহতি রয়েছে।

     উদাহরণস্বরূপ DVC কে পরিকল্পিত অঞ্চল বলা যেতে পারে কারণ দামোদর নদীর বন্যা প্রতিরোধের জন্য এই পরিকল্পনা অঞ্চল গঠন করা হয়।


বিভিন্ন ধরনের পরিকল্পনা অঞ্চল বা পরিকল্পিত অঞ্চলের স্তর ক্রম (Hierarchy of Planning Region) 

         বিভিন্ন অঞ্চলের সমস্যা যেরকম ভিন্ন প্রকৃতির হয় তেমনই কোন অঞ্চলের সামগ্রিক উন্নয়নের পরিকল্পনা ভিন্ন প্রকৃতির হয়ে থাকে।অঞ্চলের পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নের সুবিধা অনুসারে এবং অঞ্চল গুলির আয়তনের ভিত্তিতে পরিকল্পনা অঞ্চল গুলিকে একটি ত্রিস্তরীয় ব্যবস্থার অধীনে তিনটি ক্রম বা অঞ্চলে বিভক্ত করা যায়।


ক) ক্ষুদ্রায়তন পরিকল্পনা অঞ্চল বা ক্ষুদ্র অঞ্চল (Micro Planning Region)

      পরিকল্পনা অঞ্চল গুলির মধ্যে এটি আয়তনে সবচেয়ে ছোট। সাধারণত কোন একটি নির্দিষ্ট সমস্যার সমাধানের উদ্দেশ্যে এই ধরনের ক্ষুদ্র পরিকল্পনা অঞ্চলগুলি চিহ্নিত করা হয়। আঞ্চলিক উৎপাদনের দিক থেকে ক্ষুদ্রায়তন পরিকল্পনা অঞ্চলের গুরুত্ব অপরিসীম। যেমন-পর্যটন শিল্পের বিকাশের জন্য হিমাচল প্রদেশ, জম্মু-কাশ্মীর, কেরল; জীবমন্ডল সুরক্ষার উদ্দেশ্যে সুন্দরবন সংরক্ষিত জীবমণ্ডল ইত্যাদি। 

ক্ষুদ্রায়তন পরিকল্পনা অঞ্চলগুলির সুবিধা হল যে এদের আয়তন ছোট। সমস্যা এবং সম্ভাবনা একই ধরনের হয় বলে পরিকল্পনা গ্রহণ এবং রুপায়ন অতি সহজ সাধ্য হয়। 

উদ্দেশ্য

i. বিভিন্ন স্তরে অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর করা।

ii. দারিদ্র্য এবং নিরক্ষরতা দূরীভূত করা।

iii. স্থানীয় স্তরে কর্মসংস্থান বৃদ্ধির জন্য কর্মসূচি গ্রহণ করা।

iv. স্থানীয় স্তরে পরিকাঠামগত সুযোগ সুবিধার উন্নতি ঘটানো।

v. উন্নয়নযোগ্যে স্থানীয় মানুষজনের যোগদান সুনিশ্চিত করা।


বৈশিষ্ট্য

i. পরিকল্পনা অঞ্চল বিবেচনায় এটি কোন গ্রাম, শহর বা সিডি ব্লক ভিত্তিক হয়।

ii. সম্পূর্ণ সমধর্মী বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন অঞ্চল।

iii. এই অঞ্চল কোন সম্পদে পরিপূর্ণ হয় না।

iv. স্বল্পমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়।

v. এই অঞ্চল সমস্যা সংকুল এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষুদ্রতম একক।


উপস্তর: ক্ষুদ্র পরিকল্পনা অঞ্চল তিনটি উপস্তরে বিভক্ত- 

(a) জেলাস্তর: জেলাকে একক হিসেবে ধরে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয় জেলাস স্তরে কৃষি জলসেচ পশুপালন শিল্প শিক্ষা জনস্বাস্থ্য প্রভৃতি বিষয়ক উন্নতির জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। জেলা পরিকল্পনার তদারকি করে District Planning and Development Council. জেলাস স্তরে পরিকল্পনার দায়িত্বে থাকেন District Collector or District Magistrate.


(b) ব্লক স্তরের পরিকল্পনা: প্রত্যেক জেলাকে কতকগুলি ব্লক এ ভাগ করা হয় এবং ব্লক ভিত্তিক পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। এই স্তরে কৃষি, ক্ষুদ্র সেচ প্রকল্প, পশুপালন, পোল্ট্রি, মৃত্তিকা সংরক্ষণ, জলসম্পদ ব্যবস্থাপনা, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প, মৎস্য চাষ, বনভূমি সংরক্ষণ, বিভিন্ন সামাজিক পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। ব্লক স্তরে পরিকল্পনার দায়িত্ব থাকে Block Development Officer.


(c) পঞ্চায়েত স্তরে পরিকল্পনা: ব্লকগুলি কতগুলি পঞ্চায়েতে বিভক্ত করে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। পঞ্চায়েতের তিনটি অংশ থাকে- গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদ। নির্দিষ্ট বছর অন্তর নির্বাচনের মাধ্যমে এই তিনটি অংশের প্রতিনিধিদের নির্বাচিত করা হয়। গ্রাম পঞ্চায়েত হল পরিকল্পনা স্তরের ক্ষুদ্রতম একক।


খ) মধ্যম আয়তন বিশিষ্ট পরিকল্পনা অঞ্চল বা মধ্যম অঞ্চল (Meso planning region)

অনেকগুলি ক্ষুদ্রায়তন পরিকল্পনা অঞ্চলের সমষ্টি হল মধ্যমা আয়তন বিশিষ্ট পরিকল্পনা অঞ্চল বা মধ্যম অঞ্চল।

সংজ্ঞা: সম্পদের যথাযথভাবে আহরণ, সংরক্ষণ ও ব্যবহারের উদ্দেশ্যে যখন বৃহদাকার অঞ্চলকে কতগুলি প্রধান অর্থনৈতিক এককে ভাগ করা হয় তখন দ্বিতীয় ক্রমের সেই উপবিভাগগুলিকে মধ্যম আয়তন বিশিষ্ট পরিকল্পনা অঞ্চল বা মধ্যম অঞ্চল বলে। ভারতের বৃহৎ পরিকল্পনা অঞ্চলের মধ্যে এই ধরনের পরিকল্পনা অঞ্চল লক্ষ্য করা যায়।

বৈশিষ্ট্য

i. রাজ্যস্তরে এই পরিকল্পনা গৃহীত হয়।

ii. এগুলি মাঝারি বা দ্বিতীয় শ্রেণীর অঞ্চল।

iii. এই অঞ্চলের পরিকল্পনা জাতীয় এবং ক্ষুদ্র স্তরের মধ্যে যোগসূত্র স্থাপন করে।

iv. সমগ্র ভৌগোলিক পরিবেশে একই রকম বৈশিষ্ট্য দেখা যায়।

v. অর্থনৈতিক বিষয়গুলিকে অধিক মাত্রায় গুরুত্ব দেওয়া হয়।

vi. ক্ষেত্রমান মাঝারি প্রকৃতির।


উদ্দেশ্য

i. রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলের মধ্যে বৈষম্য দূরীকরণ।

ii. সমগ্র রাজ্যের সামগ্রিক উন্নয়ন।

iii. স্থানীয়, জাতীয় এবং আঞ্চলিক স্তরের মধ্যে যোগসূত্র স্থাপন।

iv. সম্ভাব্য সম্পদ সৃষ্টি করা।


গ) বৃহদায়তন পরিকল্পনা অঞ্চল বা বৃহৎ অঞ্চল (Macro planning region) 

পরিকল্পনা অঞ্চল গুলির মধ্যে সর্বাধিক আয়তন যুক্ত হল বৃহদায়তন পরিকল্পনা অঞ্চল এই ধরনের অঞ্চলের সম্পদের বৈচিত্র লক্ষ্য করা যায়।

সংজ্ঞা: বৃহৎ অঞ্চল জুড়ে যখন জাতীয় স্তরে পরিকল্পনা অঞ্চল গড়ে তোলা হয় তখন তাকে বৃহৎ পরিকল্পনা অঞ্চল বলে। 

1952 খ্রিস্টাব্দে ভারতের জাতীয় উন্নয়ন পরিষদ এই ধরনের পরিকল্পনা গ্রহণ করে থাকে। বৃহৎ পরিকল্পনা অঞ্চলের পরিকল্পনা রুপায়নের জন্য ভারত সরকার পরিকল্পনা কমিশন নামে একটি মন্ত্রক গঠন করে।


বৈশিষ্ট্য:

i. পরিকল্পনা অঞ্চলে সবচেয়ে উপরের স্তর।

ii. দেশের অর্থনীতির উন্নয়নের জন্য রূপায়িত হয়।

iii. আর্থসামাজিক উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করে।

iv. বৃহৎ অঞ্চল জুড়ে গড়ে ওঠে।

v. পরিকল্পনাটি কেন্দ্রীয় সরকারের অর্থ দপ্তর ও জাতীয় পরিকল্পনা কমিশন দ্বারা পরিচালিত হয়।

vi. একটি রাজ্য বা একাধিক রাজ্য নিয়ে গঠিত হতে পারে।

vii. প্রাকৃতিক পরিবেশের বিপুল বৈচিত্র লক্ষ্য করা যায়।

viii. অর্থনৈতিক দিক থেকে শক্তিশালী এবং স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়।


উদ্দেশ্য

i. দেশের সার্বিক উন্নয়ন।

ii. কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারের মধ্যে সুসম্পর্ক স্থাপন করা।

iii. জাতীয় এবং মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি করা।

iv. দেশের সামাজিক এবং অর্থনৈতিক বৈষম্যকে দূরীভূত করা।


উপবিভাগ: সময়ের ভিত্তিতে বৃহদায়তন পরিকল্পনা অঞ্চলে তিন ধরনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয় 

(a) স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনা: এই ধরনের পরিকল্পনা 2 থেকে 5 বছরের জন্য গ্রহণ করা হয়।

(b) মধ্য মেয়াদি পরিকল্পনা: এই ধরনের পরিকল্পনা 5 বছর থেকে 10 বছর মেয়াদকালের জন্য গ্রহণ করা হয়।

(c) দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা: এই ধরনের পরিকল্পনা 15 বছরের বেশি সময়ের জন্য গ্রহণ করা হয়।


উদাহরণ- দাক্ষিণাত্য মালভূমি।



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Top Post Ad

Below Post Ad

Ads Area