বাণিজ্য কাকে বলে?
কোন পণ্যদ্রব্যের স্থানীয়, দেশীয় এবং বৈদেশিক বাজারে বিনিময়, লেনদেন ও আমদানি-রপ্তানি সংক্রান্ত কাজকর্মকে বাণিজ্য বলে।
বাণিজ্য |
বাণিজ্যের ফলে উৎপাদক এবং ভোগকারীদের মধ্যে বিনিময় সংক্রান্ত কোনো বাধা থাকেনা।
বাণিজ্যের শ্রেণীবিভাগ (Classification of Trade)
বাজারের অবস্থানের ভিত্তিতে বাণিজ্যকে দুই ভাগে ভাগ করা যায় যেমন- ক) অভ্যন্তরীণ বা অন্তর্দেশীয় বাণিজ্য এবং খ) আন্তর্জাতিক বা বৈদেশিক বাণিজ্য।
ক) অভ্যন্তরীণ বা অন্তর্দেশীয় বাণিজ্য
পণ্যসামগ্রী যখন দেশের মধ্যে আদান-প্রদান করা হয় তখন তাকে অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য বলে। যেমন- দার্জিলিংয়ের চা কলকাতায় বিক্রি হওয়া।
অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য আবার দুই প্রকার। যথা- 1) পাইকারী বাণিজ্য এবং 2) খুচরো বাণিজ্য।
1) পাইকারী বাণিজ্য
উৎপাদকদের কাছ থেকে সরাসরি ডিলাররা বিপুল পরিমাণ পণ্য অপেক্ষাকৃত কম দামে সংগ্রহ করে। এই ধরনের কাজকর্ম পাইকারি বাণিজ্য নামে পরিচিত।
2) খুচরো বাণিজ্য
পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে খুচরো বিক্রেতারা পণ্য সংগ্রহ করে এবং সরাসরি ক্রেতাদের কাছে খুচরো বিক্রি করে।
খ) আন্তর্জাতিক বা বৈদেশিক বাণিজ্য
পণ্য সামগ্রী যখন একাধিক দেশের মধ্যে আদান-প্রদান করা হয়, তখন তাকে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বলে।
আন্তর্জাতিক বাণিজ্য আবার তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যথা- 1) আমদানি বাণিজ্য 2) রপ্তানি বাণিজ্য এবং 3) পুনঃরপ্তানি বাণিজ্য।
1) আমদানি বাণিজ্য
পণ্য সামগ্রী যখন অন্য দেশ থেকে নিজের দেশে আনা হয় তখন তাকে আমদানি বাণিজ্য বলে। যেমন- ভারত বিদেশ থেকে খনিজ তেল আমদানি করে।
2) রপ্তানি বাণিজ্য
পণ্যদ্রব্য যখন কোন দেশ থেকে অন্য দেশে পাঠানো হয়, তখন তাকে রপ্তানি বাণিজ্য বলে। যেমন- ভারত অন্য দেশে চাল বিক্রি করে।
3) পুনঃরপ্তানি বাণিজ্য
কোন পণ্য যখন এক দেশ থেকে অন্য দেশে রপ্তানি হয় এবং ওই দেশ পুনরায় অন্য আরেকটি দেশকে ঐ পণ্য রপ্তানি করে, তখন তাকে পুনঃরপ্তানি বাণিজ্য বলে। যেমন- ভারত খনিজ তেল আমদানি করে সেই তেল নেপালের কাছে বিক্রি করে।
আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্ব
বিশ্বায়নের সঙ্গে সঙ্গে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গুরুত্ব ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়েছে। নিচে এই গুরুত্বগুলি আলোচনা করা হলো,-
১. শিল্পের উন্নতি
আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ফলে শিল্পের উৎপাদন দ্রুতহারে বৃদ্ধি পেয়েছে শিল্পোন্নত দেশগুলি শিল্পজাত দ্রব্য উৎপাদন করে অনুন্নত দেশগুলিতে রপ্তানি করে। অনুন্নত দেশগুলি থেকে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানি করে। যেমন- ভারত পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ফ্রান্স রাশিয়া থেকে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি আমদানি করে।
২. কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি
আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বৃদ্ধি পাওয়ায় কৃষি এবং শিল্পের উন্নতি ঘটেছে অন্য সামগ্রীর আদান প্রদানের জন্য পরিবহন ব্যবস্থার ও উন্নতি ঘটেছে বাণিজ্য সংক্রান্ত ব্যাপারে বিভিন্ন অফিসের কাজের প্রয়োজন হয় এই সমস্ত ক্ষেত্রে একত্রে কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি পেয়েছে।
৩. চাহিদা পূরণ
পৃথিবীর সকল দেশে সব ধরনের পণ্য উৎপাদন হয় না। যে সকল দেশে কোন দ্রব্যের অভাব রয়েছে তারা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের মাধ্যমে অন্য দেশ থেকে সেই সকল দ্রব্য এনে অভাব পূরণ করে। যেমন- ভারত মধ্যপ্রাচ্যের দেশ গুলি থেকে খনিজ তেল আমদানি করে অভাব পূরণ করে।
৪. বিভিন্ন সংস্কৃতির মিলন
আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের মাধ্যমে পণ্য দ্রব্যের আমদানি রপ্তানির সময় বিভিন্ন দেশের বহু লোকের সমাগম ঘটে। ফলে তাদের মধ্যে বিভিন্ন সংস্কৃতির আদান প্রদান ঘটে।
৫. বাজার সৃষ্টি
আন্তর্জাতিক বাজারে বিশেষ বিশেষ দ্রব্যের চাহিদা থাকে এক একটি দেশ এক একটি দ্রব্য উৎপাদনে দক্ষ হয় সেই সকল দ্রব্য উৎপাদিত অঞ্চল গুলি এক একটি বাজার সৃষ্টি করে। যেমন- জাপান বৈদ্যুতিক দ্রব্যের একটি বিশাল বাজার।
৬. সম্পর্ক স্থাপন
বাণিজ্যিক লেনদেন ঘটার ফলে দুটি দেশের মধ্যে সুসম্পর্ক স্থাপিত হয়।
৭. স্বনির্ভরতা লাভ
আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের প্রসার ঘটের ফলে কোন দেশ কৃষি শিল্প বিজ্ঞান প্রযুক্তিতে স্বনির্ভরতা অর্জন করে। যেমন- কৃষি প্রযুক্তি আমদানি করে সবুজ বিপ্লবের ফলে ভারত খাদ্যশস্য উৎপাদনে স্বনির্ভর হয়েছিল।
৮. অর্থনৈতিক উন্নয়ন
আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের মাধ্যমে কোন দেশ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে আর্থিক দিক থেকে শক্তিশালী হয়।
৯. আধিপত্য ও প্রভাব বিস্তার
উন্নত দেশগুলি শিল্প উৎপাদনে অগ্রণী হওয়ায় এবং শিল্পজাত দ্রব্য অনুন্নত দেশগুলোতে রপ্তানি করায় অনুন্নত দেশগুলি উন্নত দেশের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকে। ফলে উন্নত দেশগুলি অন্যতম দেশের ওপর প্রভাব বিস্তার করে।
বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (World Trade Organization)
অবাধ বাণিজ্য বাণিজ্যের প্রসার এবং বিশ্বায়নের লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য ভারত সহ বেশ কিছু দেশ চুক্তিবদ্ধ হয়। যা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও সমঝতা চুক্তি বা গ্যাট (General Agreement on Tariffs and Trade- GATT) নামে পরিচিত।
এই চুক্তির ফলশ্রুতি হিসেবে 1995 খ্রিস্টাব্দের 1 জানুয়ারি বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা WTO আত্মপ্রকাশ করে। বর্তমানে এর সদস্য সংখ্যা 164 টি দেশ।
বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার উদ্দেশ্য
বাণিজ্যের ক্ষেত্রে পৃথিবী ব্যাপী বৈষম্য দূর করা। পৃথিবী ব্যাপী একটি সুসংহত ও স্থায়ী বাণিজ্য প্রতিষ্ঠিত করা। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যকে অবাধ এবং স্বচ্ছ করা। বাণিজ্যের সম্প্রসারণ ঘটানো। বিশ্ব বাণিজ্যের সঙ্গে সম্পর্কিত মেধাস্বত্ব অধিকারনীতি মেনে চলা।
বিস্তৃত বিবরণের জন্য ক্লিক করুন
ওপেক (OPEC)
পৃথিবীর প্রধান খনিজদের উত্তোলনকারী দেশগুলি বিশ্ববাজারে তেলের দাম তেলের উৎপাদন এবং সরবরাহের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে রাখতে ওপেক নামক একটি সংগঠন গড়ে তোলে 1960 সালের এই সংস্থা তৈরি করা হয়।OPEC এর প্রধান সদস্য দেশ গুলি হল সৌদি আরব, ইরাক, কুয়েত, সংযুক্ত আরব আমিরশাহী, কাতার, ভেনিজুয়েলা, নাইজেরিয়া, গ্যাবন, লিবিয়া, ইন্দোনেশিয়া, আলজেরিয়া ।
বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন
পরিবহন(Transport)
পরিবহন কাকে বলে?
স্থানান্তরযোগ্য দ্রব্যসামগ্রী এবং মানুষকে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থাকে পরিবহন বলে। যানবাহন পথ এবং সংশ্লিষ্ট নিয়ম-কানুনকে একত্রে পরিবহন ব্যবস্থা (Transport System) বলে।
পরিবহনের গুরুত্ব লেখো
১. প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণ
পরিবহন ব্যবস্থার জন্য কোন দ্রব্য এক স্থান থেকে অন্য স্থানে নিয়ে যাওয়ার সুবিধা হয়েছে। ফলে প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণ করার পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে প্রাকৃতিক সম্পদ উৎস অঞ্চল থেকে অন্য স্থানে পরিবহনের মাধ্যমে স্থানান্তরিত করা হয়।
পরিবহন |
২. বাণিজ্যের সম্প্রসারণ
পরিবহন ব্যবস্থার জন্য যেমন কৃষির উন্নতি হয়েছে তেমন শিল্পেরও উন্নতি হয়েছে। কৃষিজাত পণ্য এবং শিল্পজাত দ্রব্য স্থানান্তরের মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ এবং বৈদেশিক বাণিজ্য বৃদ্ধি পেয়েছে।
৩. কর্মসংস্থান সৃষ্টি
পরিবহন ব্যবস্থার সঙ্গে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে প্রচুর মানুষ যুক্ত। রেলপথ-সড়কপথ নির্মাণ, বিভিন্ন যানবাহন চালানো, ব্যবস্থাপনা, বিভিন্ন দ্রব্যকে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে পাঠানো প্রভৃতি কাজে প্রচুর কর্মসংস্থান হয়।
৪. দ্রব্যমূল্যের স্থিতিশীলতা
পরিবহন ব্যবস্থার মাধ্যমে বিভিন্ন পণ্য বা দ্রব্য উদ্বৃত্ত অঞ্চল থেকে ঘাটতিযুক্ত অঞ্চলে স্থানান্তরের মাধ্যমে দ্রব্যমূল্যের স্থিতিশীলতার রক্ষা করা হয়।
৫. প্রতিরক্ষা
পরিবহন ব্যবস্থার মাধ্যমে সেনাকর্মীরা দ্রুত তাদের গন্তব্যস্থলে পৌঁছে যেতে পারে। তেমনি সামরিক সরঞ্জাম পরিবহনের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় স্থানে স্থানান্তর করা হয়।
৬. ত্রাণ
দুর্যোগপূর্ণ অঞ্চলে দ্রুত খাদ্যসামগ্রী, চিকিৎসা সংক্রান্ত সরঞ্জাম ও অন্যান্য দ্রব্য পৌঁছে দেওয়ার জন্য সড়ক পথ, রেলপথ এবং আকাশ পথের সাহায্য নেওয়া হয়।
৭. শিক্ষা ও সংস্কৃতির বিনিময়
মানুষ শিক্ষা গ্রহণের জন্য এক স্থান থেকে অন্য স্থানে গমন করে। ফলে বিভিন্ন অঞ্চলের সংস্কৃতির মধ্যে মেলবন্ধন ঘটে।
৮. শহর ও নগর সৃষ্টি
জনবসতি স্থাপন হওয়ার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান পরিবহন। সড়ক পথের তীরবর্তী অঞ্চল, রেল স্টেশন বা বিমানবন্দরের নিকটবর্তী অঞ্চলে অধিক জনবসতি লক্ষ্য করা যায়। এই জনবসতিকে কেন্দ্র করে শহর এবং নগর সৃষ্টি হয়।
৯. জীবনযাত্রার মানের উন্নতি
পরিবহনের মাধ্যমে মানুষ বিভিন্ন স্থানে কাজের উদ্দেশ্যে গমন করে। ফলে পরিবারের আর্থিক অবস্থার উন্নতি হয় এবং জীবনযাত্রার মানেরও বদল হয়।
১০. আঞ্চলিক বৈষম্য হ্রাস
পরিবহনের মাধ্যমে উদ্বৃত্তযুক্ত অঞ্চল থেকে ঘাটতিযুক্ত অঞ্চলে দ্রব্য, পণ্য সহজে স্থানান্তর করা সম্ভব হয় বলে আঞ্চলিক বৈষম্য দূরীভূত হয়।
পরিবহনের মাধ্যম গুলি কি কি? (Modes of Transportation)
পরিবহনের মাধ্যমকে প্রধানত তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়। যথা- 1) স্থলপথ 2) জলপথ এবং 3) আকাশ পথ।
1) স্থলপথ(Roadways)
স্থলভাগে যে পথ গড়ে ওঠে তাকে স্থল পথ বলে স্থল পথ দুই ধরনের যেমন- সড়কপথ এবং রেলপথ। সড়কপথে বাস, লরি, টেম্পু, ভ্যান, রিক্সা, অটো প্রভৃতি যানবাহন চলে।
2) জলপথ(Waterways)
নদীপথ সমুদ্র পথ এবং খাল পথ কে একত্রে জলপথ বলে। এই পথে নৌকা, ছোট জাহাজ, বড় জাহাজ, স্টিমার প্রভৃতি চলে।
3) আকাশ পথ (Airways)
আকাশ পথে বিমান, রকেট, হেলিকপ্টার প্রভৃতি চলাচল করে।
4) নলপথ (Pipeline)
খনিজ তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস, জল প্রভৃতি এক স্থান থেকে অন্যস্থানে পরিবহন করার জন্য নলপথের ব্যবহার করা হয়। অসমের ডিগবয় অঞ্চলের অপরিশোধিত খনিজ তেল বিহারের বারাউনি তৈল শোধনাগারে নলপথের মাধ্যমে পরিবহন করা হয়।
5) রজ্জুপথ (Ropeway)
বিস্তৃত জানার জন্য ক্লিক করুন
সড়কপথ(Roadways)
সড়ক পথ পরিবহনের সুবিধা (Advantages of Road Transport)
i) দুর্গম স্থান
দেশের মধ্যে দুর্গম স্থানগুলিতে পরিবহনের জন্য রেলপথ, জলপথ অথবা বিমানপথে যাতায়াত করা সম্ভব নয়। এই সকল অঞ্চলে সড়কপথই একমাত্র পরিবহনের মাধ্যম।
ii) অল্প দূরত্ব
অল্প দূরত্বে পরিবহনের জন্য সড়কপথ সবচেয়ে উপযোগী। উৎপাদিত অঞ্চল থেকে পণ্য খুব সহজেই সড়কপথের মাধ্যমে অল্প দূরত্বে পরিবহন করা যায়।
iii) পচনশীল দ্রব্য পরিবহন
নিত্য প্রয়োজনীয় পচনশীল দ্রব্য যেমন- দুধ, শাকসবজি প্রভৃতি খুব দ্রুত বাজারে পাঠানো সম্ভব হয়।
iv) সময় সূচি
সড়কপথে যে কোন সময় যাত্রী এবং পণ্য এক স্থান থেকে অন্য স্থানে পরিবহন করা যায়।
v) ব্যয়
সড়ক পথের নির্মাণ এবং রক্ষণাবেক্ষণের রেলপথের তুলনায় অনেক কম।
vi) প্রতিরক্ষায় গুরুত্ব
প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রে সড়কপথের গুরুত্ব অপরিসীম। অতি দুর্গম স্থানে সেনা, খাদ্য এবং যুদ্ধের সরঞ্জাম পাঠাতে সড়ক পথের গুরুত্ব সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য।
vii) কর্মসংস্থান
সড়কপথ পরিবহনে স্বনির্ভর কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে। এছাড়া প্রচুর মানুষ প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে সড়কপথ পরিবহনের ওপর নির্ভর করে জীবিকা নির্বাহ করে।
viii) সময়ের পরিবর্তনশীলতা
সড়কপথে পরিবহনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনমতো সময়সূচির পরিবর্তন ঘটানো যেতে পারে। যা অন্যান্য পরিবহনের ক্ষেত্রে প্রায় অসম্ভব।
ix) যানবাহনের প্রকৃতি
পণ্যের প্রকৃতি অনুযায়ী সড়কপথে হালকা মাঝারি ও ভারী ধরনের যানবাহন ব্যবহার করা যায়।
সড়ক পথ পরিবহনের অসুবিধা (Disadvantages of Road Transport)
i) নির্মাণ এবং রক্ষণাবেক্ষণ
সড়ক পথের নির্মাণ এবং রক্ষণাবেক্ষণের ব্যয় যথেষ্ট বেশি।
ii) পরিবহন ব্যয়
রেলপথ এবং জলপথের তুলনায় সড়কপথে পরিবহন ব্যয় বেশি।
iii) যাত্রী এবং পণ্যের পরিমান
রেলপথ এবং জলপথের মাধ্যমে যত সংখ্যক যাত্রী এবং পণ্য পরিবহন করা যায়, সড়কপথের মাধ্যমে ততটা করা যায় না।
iv) অধিক দূরত্ব
অধিক দূরত্বে সড়ক পথের মাধ্যমে যাত্রী এবং পণ্য পরিবহন অধিক ব্যয় এবং সময় সাপেক্ষ।
v) গতিবেগ
রেলপথ বা আকাশপথের মতো দ্রুতগতিতে পণ্য এবং যাত্রী পরিবহন করা যায় না।
vi) বৈদেশিক বাণিজ্য
স্থল সীমানার সঙ্গে যুক্ত দেশের সঙ্গে সড়কপথের মাধ্যমে বাণিজ্য করা গেলেও অধিকাংশ বৈদেশিক বাণিজ্য রেলপথ অথবা জলপথের মাধ্যমে হয়।
vii) যানজট
সড়কপথে পরিবহনের ক্ষেত্রে যানজট একটি সমস্যা এর ফলে যাত্রী এবং অন্য পরিবহনে বিঘ্ন ঘটে।
viii) ঋতুভিত্তিক অসুবিধা
বর্ষাকালের বৃষ্টি অথবা শীতকালে তুষারপাতের ফলে কোন কোন অঞ্চলে সড়কপথের পরিবহন সম্পূর্ণ অচল হয়ে পড়ে এবং রাস্তাঘাট চলাচলের অযোগ্য হয়ে ওঠে।
ix) পরিবেশ দূষণ
সড়কপথের যানবাহনগুলি মূলত খনিজ তেল, প্রাকৃতিক গ্যাসের মাধ্যমে চলে। এর ফলে যানবাহন থেকে নির্গত ধোঁয়ার মাধ্যমে পরিবেশ দূষণ ঘটায়। এছাড়া যানবাহনের হর্নের আওয়াজ শব্দ দূষণের জন্য দায়ী।
x) পরিবহন ব্যয়
জলপথ এবং রেলপথের তুলনায় সড়কপথে পরিবহন ব্যয় বেশি।
xi) জ্বালানির অভাব
যানবাহনগুলি মূলত পেট্রোল, ডিজেল, প্রাকৃতিক গ্যাসের মাধ্যমে চলাচল করে। পৃথিবীর সর্বত্র এই ধরনের জ্বালানি সহজপ্রাপ্য নয়।
রেলপথ (Railways)
স্থলপথে পরিবহনের সর্বশ্রেষ্ঠ মাধ্যম হলো রেলপথ।
রেলপথ পরিবহনের সুবিধা(Advantages of Railway Transport)
i) গতিবেগ
স্থলপথ পরিবহনের মধ্যে রেলপথ সবচেয়ে দ্রুত গতি সম্পন্ন। যাত্রী এবং পণ্য অতি দ্রুত এক স্থান থেকে অন্য স্থানে পরিবহন করা যায়।
ii) সময়
রেলপথে যাত্রী এবং পন্য পরিবহনের ক্ষেত্রে অপেক্ষাকৃত কম সময় লাগে।
iii) পরিবহন ব্যয়
সড়কপথ এবং বিমানপথ অপেক্ষা রেলপথে পরিবহন ব্যয় কম।
iv) পণ্যের প্রকৃতি
রেলপথের মাধ্যমে ভারী পণ্য এক স্থান থেকে অন্য স্থানে পাঠানো সুবিধাজনক। কারণ, গুদাম থেকে পণ্য বোঝাই করা এবং যথাস্থানে পণ্য পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা রেল কর্তৃপক্ষের আছে।
v) কর্মসংস্থান
রেলপথ পরিবহন ব্যবস্থার মাধ্যমে প্রচুর মানুষের কর্মসংস্থানের ঘটে।
vi) ক্ষতিপূরণ ব্যবস্থা
রেলের মাধ্যমে পাঠানো পণ্য নষ্ট হলে রেল ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করে। এছাড়া যাত্রীদের কোন ক্ষতি হলে রেল আর্থিক সহায়তা প্রদান করে।
vii) প্রতিরক্ষা
দেশের অভ্যন্তরের শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষা অথবা বহি: শত্রুর আক্রমণ প্রতিরোধ করতে রেলপথের মাধ্যমে সৈন্য, অস্ত্র, খাদ্যদ্রব্য যুদ্ধক্ষেত্রে অতিদ্রুত পাঠানো সম্ভব হয়।
viii) নিরাপত্তা
রেলপথ পরিবহন অনেক বেশি নিরাপদ এবং আরামদায়ক।
ix) জীবনযাত্রার মান
রেলপরিবহন ব্যবস্থার সম্প্রসারণের ফলে দেশের সামাজিক এবং আর্থিক উন্নয়ন ঘটেছে। ফলে মানুষের জীবনযাত্রার মানেরও উন্নতি ঘটেছে।
x) জাতীয় আয় বৃদ্ধি
রেলপথ পরিবহন ব্যবস্থার উন্নতি ঘটলে সে দেশের জাতীয় আয় উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়।
xi) শিল্প এবং বাণিজ্যের উন্নতি
দেশের শিল্প এবং বাণিজ্যের উন্নতিতে রেলপথ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শিল্প কেন্দ্রগুলিতে কাঁচামাল সরবরাহ এবং উৎপাদিত দ্রব্য বাজারে পৌঁছে দেওয়ার জন্য রেলপরিবহন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
xii) প্রাকৃতিক বিপর্যয়
বিভিন্ন প্রাকৃতিক বিপর্য ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলিতে রেলপথের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় দ্রব্য অতি দ্রুত পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হয়।
xiii) সভ্যতা ও সংস্কৃতির বাহন
শিক্ষা-দীক্ষা, সভ্যতা এবং সংস্কৃতির আদান প্রদানের অন্যতম বাহক হল রেলপথ। এক দেশের শিক্ষা ও সংস্কৃতি অন্যদেশে আমদানিতে এর জুড়ি মেলা ভার।
xiv) আন্তর্জাতিক পরিবহন
রেলপথের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন পণ্য এবং যাত্রী আসা-যাওয়া করে।
রেলপথ পরিবহনের অসুবিধা (Disadvantages of Railway Transport)
i) নির্মাণ ব্যয়
রেলপথ নির্মাণ এবং রক্ষণাবেক্ষনের জন্য প্রচুর অর্থের প্রয়োজন। এই কারণে দেশের সব জায়গায় রেলপথের বিস্তার সম্ভব হয় না।
ii)সর্বত্র পরিবহন
বন্ধুর ভূপ্রকৃতি বা পার্বত্য অঞ্চলে রেলপথ নির্মাণ এবং রক্ষণাবেক্ষণ অত্যন্ত ব্যয়বহুল। এই কারণে সমভূমি অঞ্চলে রেলপথের বিস্তার সবচেয়ে বেশি লক্ষ্য করা হয়।
iii) অপরিবর্তনীয় পথ
রেলপথের ওপর দিয়েই শুধুমাত্র ট্রেন চলাচল করতে পারে। ইচ্ছামতো ট্রেন অন্যদিকে গমন করতে পারে না। এই কারণে গতিবেগ নির্দিষ্ট।
iv) জটিল নিয়ম
রেলপথে পরিবহনের নিয়ম সবচেয়ে জটিল। এই কারণে অনেকে রেলপথের মাধ্যমে পরিবহনে উৎসাহ দেখায় না।
v) সময়
যাত্রী পরিবহনের সময় কম লাগলেও পণ্য পরিবহনের সময় অনেক বেশি লাগে। এই কারণে পচনশীল পণ্য রেলপথের মাধ্যমে পরিবহন করা যায় না।
vi) পরিবহন ব্যয়
দূরবর্তী অঞ্চলে পন্য পরিবহনের জন্য ব্যয় কম হলেও অল্প দূরত্বে পরিবহন ব্যয় বেশি।
vii) আধিপত্য বিস্তার
রেলপথ ব্যবসা-বাণিজ্যের একচেটিয়া আধিপত্যের জন্ম দেয়।
viii) দুর্ভোগ
রেললাইনের ওপরে কোন গাড়ি খারাপ হয়ে গেলে বা লাইনচ্যুত হলে অন্যান্য সমস্ত গাড়ির চলাচলের বাধা পায়। ফলে দুর্ভোগের সীমা থাকে না।
ix) নির্দিষ্ট স্থানে ওঠানামা
রেলপথে পরিবহনের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট ষ্টেশন ছাড়া পণ্য বা যাত্রী ওঠানামা করতে পারে না। তাই স্টেশন পর্যন্ত পণ্য বা যাত্রী পরিবহনের জন্য অতিরিক্ত পরিবহনের ব্যবস্থা করতে হয়।
x) গতিবেগ
সড়কপথ ও বিমানপথে পরিবহনের তুলনায় রেলপথে পণ্য পরিবহন ধীরগতিসম্পন্ন।
জলপথ (Waterways)
জলপথ পরিবহনের সুবিধা(Advantages of Waterways Transport)
i)পরিবহন ব্যয়
জলপথে যাত্রী এবং পণ্য পরিবহনের ভাড়া সড়ক পথ এবং রেলপথের তুলনায় কম।
ii) নির্মাণ ব্যয়
জলপথ নির্মাণ এবং রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কোন খরচ নেই বললেই চলে।
iii) পন্য পরিবহন
জলপথ হল ভারী, বৃহৎ, ভঙ্গুর পণ্য পরিবহনের একটি উপযোগী মাধ্যম।
iv) কর্মসংস্থান
কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে জলপথ পরিবহন একটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে।
v) যানজট
বন্দর সংলগ্ন অঞ্চল ছাড়া উন্মুক্ত সমুদ্র কোন দেশের অন্তর্ভুক্ত না হওয়ার জন্য যানজটের কোন সম্ভাবনা থাকে না।
vi) বাণিজ্য
বিপুল পরিমাণ পণ্যসামগ্রী অল্প ব্যয়ে অনেকদূর পাঠানো যায় বলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য জলপথের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি করা হয়।
vii) জ্বালানি খরচ
জলপথ পরিবহন ব্যবস্থায় ব্যবহৃত যানগুলির জ্বালানি খরচ খুব কম।
viii) পরিবহন ক্ষমতা
জলপথে পরিবহন ক্ষমতা সড়কপথ এবং রেলপথের তুলনায় অনেক বেশি।
ix) পরিবেশ দূষণ
জলপথ পরিবহন ব্যবস্থায় পরিবেশ দূষণের সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
জলপথ পরিবহনের অসুবিধা(Disadvantages of Waterways Transport)
i) ধীরগতি
জলযানগুলি অতি ধীরগতিসম্পন্ন। গন্তব্যস্থলে পৌঁছতে অনেক বেশি সময় লাগে বলে পচনশীল সামগ্রী জলপথে পরিবহন করা যায় না।
ii)ঝুঁকিপূর্ণ এবং অনিশ্চয়তা
প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সময় পরিবহন ব্যবস্থা মোটেই নিরাপদ নয়। কোন কোন ক্ষেত্রে নদীতে জোয়ার না আসলে জলযান চলাচল করতে পারেনা।
iii) পলি অপসারণ ব্যয়
জলপথ নির্মাণ এবং রক্ষণাবেক্ষণের ব্যয় না থাকলেও নদী এবং খাল পথগুলির গভীরতা সঠিকভাবে বজায় রাখতে পলি অপসরণের জন্য প্রচুর খরচ করতে হয়।
iv) প্রাকৃতিক প্রতিবন্ধকতা
শীতপ্রধান অঞ্চলে অনেক সময় নদীর জল জমে বরফে পরিণত হয়। ফলে জলযান চলাচল করতে পারে না।
v) যাত্রী এবং পণ্য ওঠানামা
সড়কপথের মতো যেখানে সেখানে জাহাজ থামিয়ে যাত্রী এবং পণ্য সামগ্রী উঠানো বা নামানো যায় না।
vi) অন্যান্য ব্যয়
জলপথ পরিবহনে প্রান্তিক ব্যয়, পণ্য বোঝাই এবং খালাসের জন্য অনেক বেশি খরচ প্রয়োজন।
vii) নির্ভরশীলতা
সমুদ্রপথে যানচলাচল সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করে অনুকূল আবহাওয়ার উপর। আবহাওয়া খারাপ হলে সমুদ্রপথে জাহাজ বা জলযান চলাচল করতে পারে না।