১. বহির্জাত প্রক্রিয়া কাকে বলে?
যে প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ায় যান্ত্রিকভাবে এবং রাসায়নিকভাবে ভূপৃষ্ঠের পরিবর্তন এবং বিবর্তন হয় তাকে বহির্জাত প্রক্রিয়া বলে।
২. বহির্জাত প্রক্রিয়ার বৈশিষ্ট্য
- বহির্জাত প্রক্রিয়ায় শক্তির মূল উৎস সূর্য।
- এই প্রক্রিয়া ভূমিরূপের ভাস্কর্য তৈরি করে।
- ভূপৃষ্ঠের ওপর ক্রিয়াশীল একটি প্রক্রিয়া।
- এটি একটি অত্যন্ত ধীর প্রক্রিয়া।
৩. বহির্জাত প্রক্রিয়া কত প্রকার? ও কি কি?
বহির্জাত প্রক্রিয়া দুই প্রকার। যথা-
i) স্থিতিশীল (উষ্ণতা, আর্দ্রতা, মেঘাচ্ছন্নতা ইত্যাদি)
ii) গতিশীল (নদীপ্রবাহ, হিমবাহ, বায়ু, সমুদ্রতরঙ্গ)
৪. বহির্জাত প্রক্রিয়ায় শক্তির প্রধান উৎস কি?
উ:- সূর্য
৫. পর্যায়ন বা Gradation শব্দটি প্রথম কে ব্যবহার করেন?
উ:- Chamberlain এবং Salisbury ।
৬. গ্রেড (Grade) শব্দটি প্রথম কে ব্যবহার করেন?
উ:- G. K Gilbert ।
৭. ক্ষয়ের শেষ সীমা কি?
উ:- সমুদ্রতল বা সমুদ্রপৃষ্ঠ।
৮. অবরোহণ কি?
যেসব প্রক্রিয়ায় কোন উঁচু ভূমি ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে ধীরে ধীরে নিচু ভূমিতে পরিণত হয় তাকে অবরোহন প্রক্রিয়া বলে। অবরোহন প্রক্রিয়ার অপর নাম ক্ষয়সাধন।
প্রক্রিয়া: অবরোহন তিনটি প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন হয়। যেমন- আবহবিকার, পুঞ্জিত ক্ষয় ও ক্ষয়সাধন(যেমন- নদী, হিমবাহ, বায়ুপ্রবাহের ক্ষয়কার্য)।
ফলাফল:
i. ভূমির উত্তল ও অবতল ঢাল তৈরি হয়।
ii. বিভিন্ন প্রকার ক্ষয়জাত ভূমিরূপ সৃষ্টি হয়।
iii. ভূ-পৃষ্ঠ মসৃণতা লাভ করে।
৯. আরোহন কি?
যেসব প্রক্রিয়ায় কোন নিচু স্থানে পলি, বালি প্রবৃদ্ধি সঞ্চিত হয়ে স্থানটি উঁচু হয় তাকে আরোহন প্রক্রিয়া বলে। আরোহন প্রক্রিয়ার অপর নাম সঞ্চয়।
প্রক্রিয়া: নদী, হিমবাহ, বায়ু, সমুদ্রতরঙ্গ প্রভৃতি প্রাকৃতিক শক্তির সঞ্চয় কার্যের ফলে সৃষ্টি হয়।
ফলাফল:
i. ভূমির উচ্চতা বৃদ্ধি পায়।
ii. ভূমির ঢাল হ্রাস পায়।
iii. বিভিন্ন প্রকার সঞ্চয়জাত ভূমিরূপ সৃষ্টি হয়।
১০. পর্যায়ন কি?
ক্ষয়সীমার সাপেক্ষে ক্ষয়, বহন ও সঞ্চয়ের মাধ্যমে অসমতল ও বন্ধুর ভূমি সমতলে পরিণত হওয়াকে পর্যায়ন বলে। পর্যায়ন শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন Chamberlain এবং Salisbury ।
প্রক্রিয়া: অবরোহন এবং আরোহণের মিলিত ফল হল পর্যায়ন। অবরোহন প্রক্রিয়ায় উচ্চভূমি ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে নিম্নভূমিতে পরিণত হয়। আরোহন প্রক্রিয়ায় ক্ষয়প্রাপ্ত পদার্থ নিচু স্থানে জমাটবদ্ধ হয়ে ভূমির উচ্চতা বৃদ্ধি করে। এর ফলে সমগ্র ভূমিটির সমতীলীকরণ ঘটে যা পর্যায়ন নামে পরিচিত।
১১. পর্যায়ন কোন কোন প্রক্রিয়ার ফল?
উ:- অবরোহণ এবং আরোহন।
১২. নগ্নীভবন কি?
আবহবিকার পুঞ্জিত ক্ষয় এবং খই ভবন ভবন এই তিনটি প্রক্রিয়ায় ভূপৃষ্ঠের উপরিভাগের পদার্থ ক্ষয় প্রাপ্ত হয়ে অপসারিত হয় ফলের নিচের শিলা উন্মুক্ত বা নগ্ন হয়। এই প্রক্রিয়াকে নগ্নীভবন বলে।
নগ্নীভবন= আবহবিকার+ পুঞ্জিত ক্ষয় + ক্ষয়ীভবন
১৩. ক্ষয়সীমা কি?
ভূপৃষ্ঠের ওপর কর্মরত বিভিন্ন ক্ষয়কারী শক্তি, যেমন- নদী, হিমবাহ, বায়ু প্রভৃতি ভূপৃষ্ঠের নিচে যতটা পর্যন্ত ক্ষয় করতে পারে তা হলো ক্ষয়সীমা। সমুদ্রপৃষ্ঠ বা সমুদ্রতল হল ক্ষয়ের নিম্নসীমা।পাওয়েল হলেন ক্ষয়সীমা ধারণার প্রবর্তক।
১৪. পর্যায়িত ভূমি কি?
ক্ষয়, বহন ও সঞ্চয় কার্যের মাধ্যমে বন্ধুর বা উঁচুভূমি সমতলে পরিণত হলে সেই ভূমিকে পর্যায়িতভূমি বলে।
১৫. পুঞ্জিত ক্ষয় কি?
আবহবিকারের ফলে সৃষ্ট আলগা পদার্থ অভিকর্ষের টানে ঢাল বরাবর নিচে নেমে এলে তাকে পুঞ্চিত ক্ষয় বলে। পাহাড়ি অঞ্চলে এই প্রকার ক্ষয় লক্ষ্য করা যায়।
১৬. অবরোহন ও আরোহণের পার্থক্য লেখ।
অবরোহন | আরোহণ |
---|---|
১. এই প্রক্রিয়ায় কোন উঁচু স্থান ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে নিচু ভূমিতে পরিণত হয়। | ১. এই প্রক্রিয়ায় কোন নিচু স্থান সঞ্চয় কার্যের মাধ্যমে উঁচু ভূমিতে পরিণত হয়। |
২. ভূমির উচ্চতার হ্রাস পায়। | ২. ভূমির উচ্চতা বৃদ্ধি পায়। |
৩. বিভিন্ন প্রকার প্রাকৃতিক শক্তির ক্ষয়কার্যের মাধ্যমে হয়। | ৩. বিভিন্ন প্রকার প্রাকৃতিক শক্তির সঞ্চয়কার্যের মাধ্যমে হয়। |
১৭. কোন অঞ্চলে কোন বহির্জাত প্রক্রিয়া কার্যকরী?
- নদীর কার্য ➡ বৃষ্টি যুক্ত আর্দ্র অঞ্চল
- হিমবাহের কার্য ➡ উচ্চ অক্ষাংশ বা মেরু অঞ্চল এবং উচ্চ পার্বত্য অঞ্চল।
- বায়ুর কার্য ➡ মরুভূমি মোর উপায় অঞ্চল এবং উপকূল অঞ্চল।
- সমুদ্র তরঙ্গের কার্য ➡ উপকূলবর্তী অঞ্চল।
- ভৌমজলের কার্য ➡ চুনাপাথর গঠিত অঞ্চল।