Type Here to Get Search Results !

শ্রীলঙ্কা নারকেল চাষে উন্নত কেন ( Coconut Cultivation in Sri Lanka)

 শ্রীলঙ্কার নারকেল চাষ


         নারকেল অর্থকরী এবং বাণিজ্যিক ফসল। শ্রীলঙ্কায় নারকেল তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ (চা এবং রাবার এর পর) অর্থনৈতিক ফসল। নারকেলের বহুবিধ গুণের জন্য নারকেল গাছকে তৃণরাজ বলা হয়। শ্রীলঙ্কায় ডাবের জলের অসামান্য উপকারিতার জন্য ডাবকে লিভিং ফার্মেসি(Living pharmacy) বা জীবন্ত ঔষধালয় বলে।



নারকেল চাষের অনুকূল ভৌগোলিক অবস্থা বর্ণনা কর ।

        নারকেল 26° উত্তর থেকে 26° দক্ষিণ অক্ষাংশের মধ্যে জন্মায়। বিশ্বের 40 টি দেশে নারকেল গাছ দেখা যায়। নারকেল চাষের জন্য প্রয়োজনীয় ভৌগোলিক অবস্থান নিম্নে আলোচনা করা হলো,- 

ক) জলবায়ু

ক্রান্তীয় ও উপক্রান্তীয় জলবায়ু অঞ্চলে বাগিচা ফসল রূপে নারকেল চাষ হয়।

 i) উষ্ণতা: নারকেল চাষের জন্য 27° থেকে 32° সেলসিয়াস উষ্ণতার প্রয়োজন।

ii) বৃষ্টিপাত: নারকেল চাষের জন্য বৃষ্টিপাত এক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। গড়ে 100-225 সেন্টিমিটার বৃষ্টিপাতযুক্ত অঞ্চলে নারকেল চাষ হয়।

iii) বাতাস: সামুদ্রিক নোনা হাওয়া নারকেল চাষের পক্ষে বিশেষ উপযোগী।


খ) মাটি

       সমুদ্রিক নোনা মাটি নারকেল চাষের পক্ষে আদর্শ। এই কারণে সমুদ্র উপকূলবর্তী নোনা মাটিতে সবচেয়ে বেশি নারকেল চাষ হয়।

গ) ভূমির অবস্থা 

        সমুদ্র তীরবর্তী অঞ্চলে নারকেল চাষ ভালো হয়। তবে সমুদ্র থেকে দূরবর্তী অঞ্চলে 600-1000 মিটার উচ্চতায়ও নারকেল চাষ করা হয়।।

ঘ) শ্রমিক 

         গাছ লাগানো, পরিষ্কার করা, নারকেল পাড়া প্রভৃতি কাজের জন্য প্রচুর দক্ষ ও সুলভ শ্রমিকের প্রয়োজন হয়। 

ঙ ) চাহিদা ও বাজার 

        সারা বছর বাজারে নারিকেলের চাহিদা থাকলে এর উৎপাদন বেশি হয়।

চ) অন্যান্য অবস্থা 

        উচ্চ ফলনশীল নারকেলের বীজ, কীটনাশক সার প্রভৃতি ব্যবহারের সুবিধা পাওয়া গেলে নারকেলের উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। এসবের জন্য প্রচুর মূলধনের প্রয়োজন হয়।


নারকেলের ব্যবহার লেখ।

        নারকেলের প্রতিটি অংশই মানুষের কোন না কোন কাজে ব্যবহৃত হয়। তাই এর চাষ খুব গুরুত্বপূর্ণ। বহুবিধ ব্যবহারের জন্য আয়ুর্বেদিকশাস্ত্রে নারকেল গাছকে 'তৃণরাজ' বলে। নারকেলের ব্যবহারের নিচে আলোচনা করা হলো,- 

i) ফল 

 ১. কাঁচা অবস্থায় ফলকে ডাব বলে। এর থেকে সুস্বাদু জল পাওয়া যায়। ডাবের জলের ভেষজ গুণের জন্য শ্রীলঙ্কায় একে "লিভিং ফার্মেসি" বা চলমান ঔষধ বলে। 

২. উপকূলবাসী অনেক উপজাতির কাছে ডাবের জল একমাত্র পুষ্টির উৎস। এই কারণে হাওয়াই দ্বীপে ডাবের জলকে 'ডিউ অফ হেভেন' বা 'স্বর্গের শিশির' বলা হয়।

৩. পাকার পর এর সাদা শাস অংশ থেকে দুধ পাওয়া যায়  এছাড়া এই অংশ খাওয়া যায় ও বিভিন্ন সুস্বাদু দ্রব্য তৈরিতে ব্যবহার করা যায়।

৪. নারকেল ফলের সাদা অংশ থেকে তেল তৈরি হয়। এই তেল থেকে আবার শ্যাম্পু, চুলের রং, মাউথ ওয়াশ, সাবান প্রভৃতি তৈরি হয়।

৫. নারকেল থেকে বিভিন্ন মিষ্টি তৈরি হয়। যেমন- নাড়ু, পিঠে, চন্দ্রপুলি প্রভৃতি।

ii) মূল 

      নারকেলের মূল ঔষধ তৈরিতে (কলেরা, আমাশয়) ব্যবহার করা হয়।

iii) কান্ড 

      কাণ্ড ঘরবাড়ি তৈরি, বিভিন্ন আসবাবপত্র তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। এছাড়া জ্বালানি হিসেবেও এর ব্যবহার আছে।

iv) পাতা 

      পাতার শক্ত অংশ জ্বালানি কাজে ব্যবহার করা হয়। পাতার মাঝের কাঠি দিয়ে ঝাড়ু তৈরি করা হয়।

v) ছোবড়া

      পাকা ফলের বাইরের অংশকে ছোবড়া বলে। ছোবড়া দিয়ে দড়ি, পাপোশ, গদি ইত্যাদি তৈরি করা হয়।

vi) ফলের শক্ত খোলক 

           ফলের শক্ত খোলক বিভিন্ন হস্তশিল্পে ব্যবহৃত হয়। এছাড়া এই খোলক গুঁড়ো করে ত্বকের পরিচর্যার বিভিন্ন উপাদান বা ঔষধ তৈরি হয়।


শ্রীলঙ্কার নারকেল উৎপাদক অঞ্চলের বিবরণ দাও।

ক) দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূল 

         শ্রীলঙ্কার সর্বশ্রেষ্ঠ নারকেল উৎপাদক অঞ্চল। এখানে দেশের প্রায় 90% নারকেল উৎপাদন হয়। এখানকার গামপাহা, মাতালে, কেগালে, মাতারা, কলম্বো অঞ্চলে প্রচুর নারকেল উৎপাদন হয়। কুরুনেলগালা শ্রীলঙ্কার বৃহত্তম নারকেল উৎপাদন কেন্দ্র।

খ) জাফনা উপদ্বীপ অঞ্চল 

           শ্রীলঙ্কার দ্বিতীয় প্রধান নারকেল উৎপাদক অঞ্চল। এখান থেকে শ্রীলঙ্কার 6% নারকেল উৎপাদন হয়। এখানকার জাফনা, মান্নার দ্বীপ, পয়েন্ট পেড্রো প্রভৃতি অঞ্চলে নারকেল উৎপাদন হয়।

গ) দক্ষিণপূর্ব উপকূল 

          এখানে শ্রীলঙ্কার সামান্য নারকেল উৎপাদন হয়। এখানকার বাত্তিকালোয়া থেকে পেট্রোভিল অঞ্চল পর্যন্ত অংশে নারকেল উৎপাদন হয়।


শ্রীলঙ্কার নারকেল চাষের সমস্যা 

           শ্রীলঙ্কা নারকেল উৎপাদনে উল্লেখযোগ্য স্থান অধিকার করলেও নারকেল চাষে বিভিন্ন সমস্যা দেখা যায়। যেমন,- 

১. শ্রীলঙ্কার নারকেল বাগিচার আয়তন ক্ষুদ্র ব্যক্তিগত মালিকানাধীন হওয়ায় বাণিজ্যিকারে উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে না।

২. নারকেল উৎপাদক অঞ্চলে অন্যান্য অধিক লাভজনক মসলা, সুপারি, লবঙ্গ, দারুচিনি, প্রভৃতি চাষ করায় নারকেল উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।

৩. নারকেল গাছে বিভিন্ন রোগ পোকা যেমন রিওফাইস, গুইরি- রোইনস পোকার দাপটে এবং গানডোমা রোগের উপদ্রবে নারকেল চাষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

৪. বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে নারকেল চাষে মন্দা এসেছে।


শ্রীলঙ্কায় নারকেল চাষ অধিক হয় কেন ?

১. আর্দ্র ক্রান্তীয় জলবায়ু 

         ক্রান্তীয় জলবায়ু নারকেল গাছ বৃদ্ধি এবং ফল উৎপাদনের জন্য আদর্শ। শ্রীলঙ্কায় বার্ষিক গড় উষ্ণতা 25°-30° সেলসিয়াস থাকে এবং বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ 200 সেন্টিমিটারের বেশি হওয়ায় নারকেল চাষের আদর্শ জলবায়ু এখানে রয়েছে।

২. সামুদ্রিক আবহাওয়া 

          শ্রীলঙ্কা একটি দ্বীপ রাষ্ট্র। দেশের কোন অংশই সমুদ্র থেকে দূরে অবস্থিত না হওয়ায় সামুদ্রিক আবহাওয়া সমগ্র দেশে বিরাজ করে, যা নারকেল উৎপাদনে অত্যন্ত সহায়ক। 

৩. চাহিদা 

        শ্রীলঙ্কার মানুষের খাবার তেলের চাহিদার অধিকাংশ মেটানো হয় নারকেল তেল থেকে। ফলে অভ্যন্তরীণ চাহিদা যেমন রয়েছে তেমনি বৈদেশিক চাহিদাও যথেষ্ট রয়েছে। 

৪. বৈদেশিক বাণিজ্য 

        ভারতে প্রসাধনী শিল্পে ব্যবহার করা নারকেল তেলের অনেকটাই শ্রীলঙ্কা থেকে আমদানি করা হয়। 

৫. সরকারের ভূমিকা 

        নজাতীয় আয়ের 2-3% আসে নারকেল থেকে। এই কারণে নারকেল উৎপাদন এবং তার বাণিজ্য সংক্রান্ত বিষয়ে শ্রীলঙ্কার সরকার যথেষ্ট সহযোগিতা করে।

৬. ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট

         উপনিবেশিক যুগে ইউরোপিয়ানরা শ্রীলঙ্কায় বাণিজ্যিক ভিত্তিতে নারকেল উৎপাদন শুরু করে। পরবর্তীতে শ্রীলঙ্কাবাসী সেগুলিকে অনুসরণ করে।


শ্রীলঙ্কার নারকেল ত্রিভুজ  ( Coconut Triangle)

         পুটটালাম, গামপোলা এবং কলম্বো এদের মধ্যবর্তী অঞ্চলটি নারকেল ত্রিভুজ নামে বিখ্যাত এখানে শ্রীলংকার ৭০% নারকেল উৎপাদন করা হয়। এর মধ্যবর্তী মূল নারকেল উৎপাদক অঞ্চলগুলি হল নিগম্বো, চিলাও ও কুরুনেলগালা।



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Top Post Ad

Below Post Ad

Ads Area