Type Here to Get Search Results !

ভারতের চিনাবাদাম এবং ভারতের সয়াবিন চাষ

 তৈল বীজ বা তেল বীজ ( Oil Seeds ) কি?

      যে শস্য থেকে তেল পাওয়া যায় সেগুলিকে তৈলবিজ বা তেল বীজ বলে। যেমন- সর্ষে, চিনাবাদাম, সয়াবিন প্রভৃতি।

তৈলবীজের প্রকারভেদ:- 

        তৈলবিজ দুই প্রকার। যেমন- ভোজ্য তৈলবীজ এবং অভোজ্য তৈলবীজ। 

ক) ভোজ্য তৈলবীজ ( Edible Oilseeds)

       যে সকল শস্য থেকে মানুষের খাবারযোগ্য তেল পাওয়া যায়, তাদের ভোজ্য তৈলবিজ বলে। যেমন- সর্ষে, তিল, চিনাবাদাম, সয়াবিন প্রভৃতি।

খ) অভোজ্য তৈলবীজ ( Non - edible Oilseeds)

         যে সকল শস্য থেকে নিঃসৃত তেল মানুষ খেতে পারে না বরং বিভিন্ন শিল্পের কাজে ব্যবহার করা হয় সেগুলিকে অভোজ্য তৈলবীজ বলে। যেমন- তিসি, রেড়ি প্রভৃতি।


চিনাবাদাম

 চিনাবাদাম উৎপাদনের অনুকূল ভৌগোলিক পরিবেশের বিবরণ দাও।

     চিনাবাদাম উষ্ণ-ক্রান্তীয় অঞ্চলের ফসল। যে সকল স্থানে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কম হয় সেখানে চীনাবাদাম চাষ হয়। সাধারণত বর্ষার বৃষ্টিপাতের সময় খারিফ শস্যরূপে চিনাবাদাম রোপন করা হয়। চীনাবাদাম উৎপাদনের অনুকূল ভৌগোলিক পরিবেশ নিম্নে আলোচনা করা হলো।

১. জলবায়ু 

      চিনাবাদাম উষ্ণ ও ক্রান্তীয় অঞ্চলের মাঝারি বৃষ্টিপাতযুক্ত অঞ্চলে ভালো জন্মায়। বার্ষিক 20°-30° সেলসিয়াস তাপমাত্রা এবং 50-75 সেন্টিমিটার বৃষ্টিপাতযুক্ত অঞ্চলে চিনাবাদাম ভালো জন্মায়। 100 সেন্টিমিটারের অধিক বৃষ্টিপাত যুক্ত অঞ্চলে চিনাবাদাম তেমন জন্মায় না। চারা বৃদ্ধির সময় আর্দ্র জলবায় ু এবং ফসল পাকার সময় শুষ্ক শীতল জলবায়ুর প্রয়োজন হয়।


২. মৃত্তিকা 

       জৈবপদার্থ যুক্ত দোআঁশ ও বেলেদোআঁশ মাটিতে চিনাবাদাম সবচেয়ে ভালো জন্মায়। এছাড়া রেগুর মাটি এবং লোহিত মৃত্তিকা চিনাবাদাম জন্মানোর পক্ষে আদর্শ।


৩. জমি বা ভূপ্রকৃতি 

         গাছের গোড়ায় জল জমে থাকলে চিনা বাদাম গাছ মারা যায়। এই কারণে সুন্দর জলনিকাশি যুক্ত ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন। যাতে জল সহজেই বেরিয়ে যেতে পারে।


৪. জলসেচ 

      বৃষ্টিপাত খুব কম হলে জল সেচের প্রয়োজন হয়। কিছু উন্নত প্রজাতির চিনা বাদামের জন্য জল সেচ করতে হয়।


৫. শ্রমিক 

      চিনাবাদাম চাষের জন্য সুলভ শ্রমিকের প্রয়োজন হয়।


৬. অন্যান্য অবস্থা 

      কীটনাশক, উচ্চ ফলনশীল বীজ, মূলধন, সার প্রভৃতির যোগান চিনাবাদাম উৎপাদনের পক্ষে আদর্শ।


চিনাবাদামের ব্যবহার 

১. প্রোটিন এবং ভিটামিন সমৃদ্ধ হয়। মানুষ সরাসরি চিনাবাদামকে খাদ্যরূপে গ্রহণ করে। 

২. চিনাবাদাম থেকে ভারতের প্রায় 42 শতাংশ ভোজ্যতেল নিষ্কাশন করা হয়। 

৩. তেল নিষ্কাশনের পর অবশিষ্ট অংশ পশুখাদ্য এবং সার হিসেবে ব্যবহার করা হয়। 

৪. চিনাবাদাম থেকে নিঃসৃত তেল সাবান, মার্জারিন তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। 

৫. পশম, রেশম ও চর্মশিল্পে চিনাবাদাম নিঃসৃত তেল ব্যবহার করা হয়। 

৬. শিম্বিগোত্রীয় উদ্ভিদ হওয়ায় চিনাবাদাম চাষ করার পর মাটিতে নাইট্রোজেনের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।


চিনাবাদাম SAQ 


১. ভারতের প্রধান তৈলবীজের নাম কি?  

       উ: চিনাবাদাম।

২. চিনাবাদাম উৎপাদনে পৃথিবীতে ভারতের স্থান কত? 

      উ: প্রথম (2017-18, উৎপাদন 75.7 লক্ষ টন)


ভারতের কয়েকটি রাজ্যে চীনাবাদাম উৎপাদন,2017-18

 

রাজ্য উৎপাদন ( লক্ষ টন )
১. গুজরাট 39.4
২. রাজস্থান 12.6
৩. অন্ধ্রপ্রদেশ 10.5
৪. তামিলনাড়ু 9.6
৫. কর্ণাটক 5.


৩. চিনাবাদাম উৎপাদনে ভারতের কোন রাজ্য প্রথম স্থান অধিকার করে? 

      উ: গুজরাট।


সয়াবিন 

সয়াবিন উৎপাদনের অনুকূল ভৌগোলিক পরিবেশ:

ক) জলবায়ু 

       সয়াবিন মৃদু উষ্ণ এবং প্রায় শুষ্ক ক্রান্তীয় জলবায়ু অঞ্চলে জন্মায়। বাৎসরিক গড়ে 23°-25° সেলসিয়াস উষ্ণতা এবং 40-60 সেন্টিমিটার বৃষ্টিপাতের প্রয়োজন হয়। তুহিন বা তুষারপাত সয়াবিন চাষের পক্ষে ক্ষতিকর।

খ) মৃত্তিকা 

         আম্লিক দোআঁশ মৃত্তিকা, হালকা দোআঁশ মাটি সয়াবিন চাষের পক্ষে উপযোগী। এছাড়া লাল, হলুদ, পলিমাটিতে সোয়াবিন চাষ ভালো হয়।

গ) ভূপ্রকৃতি বা জমি 

        গাছের গোড়ায় জল জমে থাকলে সয়াবিন গাছের ক্ষতি হয়। এই কারণে মৃদু ঢালু সমতল ভূমি সয়াবিন চাষের পক্ষে উপযোগী।

ঘ) মূলধন 

        উচ্চ ফলনশীল বীজ, সার, কীটনাশক, শ্রমিক প্রভৃতি কাজে প্রচুর মূলধনের প্রয়োজন।


ঙ) অন্যান্য অবস্থা 

        জলসেচের সুবন্দোবস্ত, শ্রমিকের প্রাচুর্য, উন্নত কৃষি প্রযুক্তি, চাহিদা সয়াবিন উৎপাদনকে বৃদ্ধি করেছে।


সয়াবিনের ব্যবহার লেখো 

১. সয়াবিন প্রোটিন সমৃদ্ধ হওয়ায় মানুষের খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়।  অত্যধিক প্রোটিন সমৃদ্ধ বলে একে উদ্ভিজ্জ মাংস বলা হয়।

২. তেল নিষ্কাশনের পর তা থেকে মানুষের খাদ্য সয়াবিন নির্গত করা হয় তারপর অবশিষ্টাংশ পশু খাদ্য হিসেবে ব্যবহার হয়।

৩. সয়াবিন থেকে তৈরি ফোম রেফ্রিজারেটর, গাড়িতে ব্যবহার করা হয়।

৪. সয়াবিন থেকে বায়োডিজেল এবং লুব্রিক্যান্ট তৈরি হয়।

৫. সয়াবিন থেকে তেল, ময়দা, দুধ, সয়া সস প্রভৃতি তৈরি হয়।


সয়াবিন SAQ 

১. সয়াবিন উৎপাদনে ভারতের স্থান কত? 

  উ: পঞ্চম ।

পৃথিবীর প্রধান সয়াবিন উৎপাদক দেশ, 2019

দেশ উৎপাদন (কোটি মেট্রিক টন)
১. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র 12.85
২. ব্রাজিল 12.48
৩. আর্জেন্টিনা 4.45
৪. চীন 1.64
৫. ভারত 1.4


২. ভারতের কোন রাজ্য সয়াবিন উৎপাদনে প্রথম? 

    উ: মধ্যপ্রদেশ ।

ভারতের সোয়াবিন উৎপাদন, 2018-19

রাজ্য উৎপাদন (লক্ষ মে: টন)
১. মধ্যপ্রদেশ 72.1
২. মহারাষ্ট্র 45.5
৩. রাজস্থান 11.






একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Top Post Ad

Below Post Ad

Ads Area