আটলান্টিক মহাসাগরের সমুদ্রস্রোত
[১] নিরক্ষীয় স্রোত (উষ্ণ) :
আটলান্টিক মহাসাগরের নিরক্ষীয় অঞ্চলে পৃথিবীর আবর্তন গতি এবং উত্তর-পূর্ব আয়নবায়ু ও দক্ষিণ-পূর্ব আয়নবায়ুর প্রভাবে দু'টি উষ্ণ স্রোতের সৃষ্টি হয়।
[ক] উত্তর নিরক্ষীয় স্রোত :
নিরক্ষরেখার উত্তর দিক দিয়ে উত্তর-পূর্ব আয়নবায়ুর প্রভাবে যে উষ্ণ স্রোত পূর্ব থেকে পশ্চিমে প্রবাহিত হয়, তাকে উত্তর নিরক্ষীয় স্রোত বলে।
[খ] দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোত :
নিরক্ষরেখার দক্ষিণ দিক দিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব আয়নবায়ুর প্রভাবে যে উষ্ণ স্রোত পূর্ব থেকে পশ্চিমে প্রবাহিত হয়, তাকে দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোত বলে।
উত্তর নিরক্ষীয় স্রোত ও দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোতের মধ্যবর্তী একটি উষ্ণ স্রোত পশ্চিমে থেকে পূর্ব প্রবাহিত হয়, তাকে নিরক্ষীয় প্রতিস্রোত বলে।
■ দক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগরের সমুদ্রস্রোত -
কুমেরু মহাসাগর থেকে শীতল স্রোত পশ্চিমাবায়ুর প্রভাবে পশ্চিম থেকে পূর্বে প্রবাহিত হয়। এই শীতল স্রোতের দু'টি শাখা আটলান্টিক মহাসাগরে প্রবেশ করে—
আটলান্টিক মহাসাগরের সমুদ্রস্রোত |
[২] ফকল্যান্ড স্রোত (শীতল) :
কুমেরু স্রোতের একটি শাখা দক্ষিণ আমেরিকার পূর্ব উপকূল বরাবর সামান্য উত্তরে অগ্রসর হয়। ফকল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জের নিকট দিয়ে প্রবাহিত হয় বলে এর নাম ফকল্যান্ড স্রোত।
[৩] বেঙ্গুয়েলা স্রোত (শীতল) :
কুমেরু স্রোতের অপর শাখাটি আরও পূর্বদিকে অগ্রসর হয়ে আফ্রিকার দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলে বাধা পেয়ে উত্তরে বেঁকে যায় এবং বেঙ্গুয়েলার নিকট বেঙ্গুয়েলা স্রোতরূপে প্রবাহিত হয়। উত্তরদিকে ক্রমশঃ অগ্রসর হয়ে এই স্রোত দক্ষিণ-পূর্ব আয়ন বাযর প্রভাবে দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোতের সঙ্গে মিলিত হয়।
■ উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরের সমুদ্রস্রোত -
[৪] ব্রাজিল স্রোত (উষ্ণ) :
নিরক্ষরেখার দক্ষিণে দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোত দক্ষিণ-পূর্ব আয়নবায়ুর প্রভাবে পূর্ব থেকে পশ্চিমে অগ্রসর হয় এবং দক্ষিণ আমেরিকার ব্রাজিল উপকূলের নিকট সেন্ট রক অন্তরীপে বাধা পেয়ে দু'টি শাখায় বিভক্ত হয়। দক্ষিণ শাখাটি ব্রাজিলের উপকূল বরাবর ব্রাজিল স্রোতরূপে দক্ষিণ দিকে অগ্রসর হয় এবং একসময় শীতল কুমেরু স্রোতের সঙ্গে মিশে যায়।
[৫] ক্যারিবিয়ান স্রোত (উষ্ণ) :
দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোতের উত্তর শাখা নিরক্ষরেখা অতিক্রম করে ক্যারিবিয়ান (পশ্চিম ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জের নিকট) উপসাগরে উত্তর নিরক্ষীয় স্রোতের সঙ্গে মিলিত হয় এবং দু'টি শাখায় বিভক্ত হয়। পশ্চিম ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জের দক্ষিণ দিক দিয়ে যে শাখাটি প্রবাহিত হয় তাকে ক্যারিবিয়ান স্রোত বলে।
[৬] বাহামা স্রোত (উষ্ণ) :
ক্যারিবিয়ান উপসাগরের অপর শাখাটি পশ্চিম ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জের উত্তর দিক দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। বাহামা দ্বীপপুঞ্জের নিকট দিয়ে প্রবাহিত এই স্রোতের নাম বাহামা স্রোত।
[৭] ফ্লোরিডা স্রোত (উষ্ণ) :
ক্যারিবিয়ান স্রোত য়ুকাটন প্রণালী দিয়ে মেক্সিকো উপসাগরে প্রবেশ করে ফ্লোরিডা প্রণালীর মধ্য দিয়ে ফ্লোরিডা স্রোতরূপে প্রবাহিত হয় এবং বাহামা স্রোতের সঙ্গে মিলিত হয়।
[৮] উপসাগরীয় স্রোত (উষ্ণ) :
ফ্লোরিডা স্রোত পশ্চিমা বায়ুর প্রভাবে উত্তর-পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয় ও মেক্সিকো উপসাগরে উপসাগরীয় স্রোত নামে পরিচিত হয়।
উপসাগরীয় স্রোত
উত্তর-পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়ে মধ্য আটলান্টিকে তিনটি শাখায় বিভক্ত হয়—
[ক] ইরমিঙ্গার স্রোত (উষ্ণ) :
উত্তরের শাখাটি আইসল্যান্ডের দক্ষিণ পাশ দিয়ে প্রবাহিত হয়ে ইরমিঙ্গার স্রোত নামে গ্রীনল্যাণ্ডের পশ্চিমে শীতল লাব্রাডার স্রোতের সঙ্গে মিলিত হয়।
[খ] উত্তর আটলান্টিক স্রোত (উষ্ণ) :
মধ্যম শাখাটি উত্তর আটলাণ্টিক স্রোত নামে উত্তর-পূর্বদিকে ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জ ও উত্তর-পশ্চিম ইউরোপের পশ্চিম উপকূল দিয়ে অগ্রসর হয়। আরও উত্তরে নরওয়ের কাছে এই স্রোত নরওয়ে স্রোত নামে পরিচিত।
[গ] ক্যানারী স্রোত (শীতল) :
দক্ষিণের শাখাটি পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়ে আফ্রিকার উত্তর- পশ্চিমে ক্যানারী দ্বীপপুঞ্জের নিকট বাধা পেয়ে ক্যানারী স্রোতরূপে দক্ষিণে বেঁকে যায় এবং অবশেষে উত্তর নিরক্ষীয় স্রোতের সঙ্গে মিলিত হয়। ক্যানারী স্রোতের একটি শাখা আফ্রিকার গিনি উপকূলের নিকট গিনি স্রোত নামে প্রবাহিত হয়।
[৯] গ্রীনল্যাণ্ড স্রোত (শীতল) :
উত্তর সুমেরু মহাসাগর থেকে শীতল স্রোত গ্রীনল্যাণ্ডের পূর্ব উপকূল বরাবর দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত হয়। এর নাম গ্রীনল্যাণ্ড স্রোত।
[১০] লাব্রাডর স্রোত (শীতল) :
উত্তরে সুমেরু মহাসাগর থেকে আরও একটি শীতল স্রোত গ্রীনল্যাণ্ডের পশ্চিম উপকূল দিয়ে দক্ষিণ দিকে অগ্রসর হয় ও গ্রীনল্যাণ্ড স্রোতের সঙ্গে মিলিত হয়। উত্তর আমেরিকার পূর্বে লাব্রাডার উপদ্বীপের কাছে এই স্রোত লাব্রাডর স্রোত নামে পরিচিত। লাব্রাডর স্রোত আরও দক্ষিণে প্রবাহিত হয়ে নিউ ফাউন্ডল্যান্ডের কাছে নিউ ফাউন্ডল্যান্ড স্রোত নামে পরিচিত হয়।
আরও পড়ুন