ভারত মহাসাগরের সমুদ্রস্রোত
ভারত মহাসাগরের উত্তর ও দক্ষিণ অংশের স্রোতসমূহের মধ্যে বেশ পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। দক্ষিণ ভারত মহাসাগর উন্মুক্ত বলে এর স্রোতসমূহের সঙ্গে আটলান্টিক ও প্রশান্ত মহাসাগরের স্রোতের বেশ মিল দেখা যায়। কিন্তু উত্তর ভারত মহাসাগর স্থলভাগ দ্বারা বেষ্টিত বলে স্রোতসমূহের বৈশিষ্ট্য সম্পূর্ণ অন্য ধরনের।
[১] নিরক্ষীয় স্রোত (উষ্ণ) :
নিরক্ষরেখার উভয়দিকে উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব আয়নবায়ুর প্রভাবে নিরক্ষীয় স্রোত পূর্ব থেকে পশ্চিমে প্রবাহিত হয়। নিরক্ষরেখার উত্তরে প্রবাহিত স্রোতকে উত্তর নিরক্ষীয় স্রোত এবং নিরক্ষরেখার দক্ষিণে প্রবাহিত স্রোতকে দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোত বলে।
দক্ষিণ ভারত মহাসাগর স্রোত-
[2] পশ্চিম অস্ট্রেলিয়া স্রোত (শীতল) :
শীতল কুমেরু মহাসাগর থেকে একটি শীতল স্রোত পশ্চিমা বায়ুর প্রভাবে পশ্চিম থেকে পূর্বে অগ্রসর হয়ে অস্ট্রেলিয়ার পশ্চিম উপকূলে বাধা পায় এবং অস্ট্রেলিয়ার পশ্চিম উপকূল বরাবর উত্তর দিকে অগ্রসর হয়। এই স্রোত পশ্চিম অস্ট্রেলিয়া স্রোত নামে পরিচিত।
পশ্চিম অস্ট্রেলিয়া স্রোত ক্রমশঃ উত্তরদিকে অগ্রসর হয়ে দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোতের সঙ্গে মিলিত হয়। এর একটি অংশ অস্ট্রেলিয়ার উত্তর দিক দিয়ে পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়ে প্রশান্ত মহাসাগরের দক্ষিণে নিরক্ষীয় স্রোতের সঙ্গে মিশেছে।
[৩] মোজাম্বিক স্রোত (উষ্ণ) :
দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোত দক্ষিণ-পূর্ব আয়নবায়ুর প্রভাবে পূর্ব থেকে পশ্চিমে প্রবাহিত হয়ে আফ্রিকার পূর্ব উপকূলে মাদাগাস্কার দ্বীপের কাছে বাধা পেয়ে দু'টি শাখায় বিভক্ত হয়। মাদাগাস্কার দ্বীপের পশ্চিম দিক দিয়ে যে শাখাটি প্রবাহিত হয়েছে তাকে মোজাম্বিক স্রোত বলে।
ভারত মহাসাগরের সমুদ্রস্রোত |
[৪] মাদাগাস্কার স্রোত (উষ্ণ) :
মাদাগাস্কার দ্বীপের পূর্বদিক দিয়ে দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোতের যে দ্বিতীয় শাখাটি প্রবাহিত হয়েছে তা মাদাগাস্কার স্রোত নামে পরিচিত।
[৫] আগুলহাস স্রোত (উষ্ণ) :
মোজাম্বিক ও মাদাগাস্কার স্রোত মাদাগাস্কার দ্বীপের দক্ষিণে মিলিত হয়ে আগুলহাস স্রোত নামে দক্ষিণে প্রবাহিত হয় এবং অবশেষে শীতল কুমেরু স্রোতের সঙ্গে মিলিত হয়।
উত্তর ভারত মহাসাগর স্রোত-
[৬] সোমালি স্রোত (উষ্ণ) :
উত্তর নিরক্ষীয় স্রোত উত্তর-পূর্ব আয়নবায়ুর প্রভাবে পূর্ব হতে পশ্চিমে প্রবাহিত হয়ে আফ্রিকার পূর্ব উপকূলে বাধা পেয়ে উত্তর-পূর্বদিকে বেঁকে যায়। এই সময় উত্তর ভারত মহাসাগরের স্রোতগুলি মৌসুমী বায়ু দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে। দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোতের একটি শাখা উত্তর নিরক্ষীয় স্রোতের সঙ্গে মিলিত হয়ে সোমালি দ্বীপপুঞ্জের নিকট সোমালি স্রোত রূপে উত্তর-পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়।
[৭] মৌসুমী স্রোত :
উত্তর ভারত মহাসাগর উত্তরে এশিয়া মহাদেশের দ্বারা আবদ্ধ বলে এবং গ্রীষ্মকালে ও শীতকালে পরস্পরের বিপরীত দিকে দক্ষিণ-পশ্চিম ও উত্তর-পূর্ব মৌসুমী বায়ু প্রবাহিত হয় বলে এই অংশের সমুদ্রস্রোতগুলিও ঋতুভেদে দিক্ পরিবর্তন করে থাকে। মৌসুমী বায়ু দ্বারা প্রভাবিত এই স্রোতকে মৌসুমী স্রোত বলে।
[ক] দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী স্রোত (উষ্ণ) :
গ্রীষ্মকালে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী স্রোত আরব সাগর ও বঙ্গোপসাগরের মধ্য দিয়ে সুমাত্রা পর্যন্ত প্রবাহিত হয়। এর কিছু অংশ প্রশান্ত মহাসাগরে প্রবেশ করে।
[খ] উত্তর-পূর্ব মৌসুমী স্রোত (উষ্ণ) :
শীতকালে উত্তর-পূর্ব মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে বঙ্গোপসাগর থেকে আরব সাগরের দিকে প্রবাহিত বিপরীত স্রোতকে বলা হয় উত্তর-পূর্ব মৌসুমী স্রোত।
নিরক্ষীয় প্রতিস্রোত :
উত্তর ও দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোতের মধ্যভাগ দিয়ে একটি ক্ষীণ প্রো- বিপরীত দিকে প্রবাহিত হয়। একে নিরক্ষীয় প্রতিস্রোত বা ভারতীয় প্রতিস্রোত বলে।
আরও পড়ুন