Type Here to Get Search Results !

অরণ্য সম্পদের গুরুত্ব

     অরণ্য সম্পদের গুরুত্বকে দুটি পৃথক দিক থেকে আলোচনা করা যেতে পারে।

ক) অন্য সম্পদের অর্থনৈতিক গুরুত্ব

i) জ্বালানি কাঠের যোগান 

         অরণ্য থেকে প্রাপ্ত শক্ত ও নরম কাঠ বিশ্বের সর্বত্রই জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হয়। পৃথিবীতে উৎপাদিত মোট কাঠের শতকরা ৫০ ভাগ কাঠ জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হয়। দক্ষিণ আমেরিকা, আফ্রিকা এবং এশিয়া মহাদেশের সবচেয়ে বেশি কাঠ জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হয়।


ii) ভেষজ দ্রব্যের যোগান

      অরণ্য থেকে কালমেঘ, হরিতকি, বহেড়া, চিরতা, সর্পগন্ধা, সিঙ্কোনা ইত্যাদি ভেষজ দ্রব্য পাওয়া যায় এবং এগুলি ঔষধ তৈরিতে ব্যবহার করা হয়।


iii) উপজাত দ্রব্যের যোগান

        বনভূমি থেকে লাক্ষা, ধুনা, রজন, গদ, দারচিনি, মোম, মধু প্রভৃতি উপজাত দ্রব্য আহরণ করা হয়।

অরণ্য সম্পদের গুরুত্ব


iv) পশু পালনের সুবিধা

        তৃণভূমি অঞ্চলে গবাদি পশু পালন করা হয় এবং পশুচরণ শিল্প গড়ে তোলা হয়। যেমন- উত্তর আমেরিকার প্রেইরী, অস্ট্রেলিয়ার ডাউনস, নিউজিল্যান্ডের ক্যান্টারবেরি প্রভৃতি তৃণভূমি অঞ্চলে পশুপালন শিল্প গড়ে উঠেছে।


v) জীবিকার সুবিধা 

       বনভূমিকে কেন্দ্র করে কাষ্ঠ আহরণ শিল্প গড়ে ওঠে। ফলে বহু লোক কাঠ কেটে এবং কাঠ চেরাই করে জীবিকা নির্বাহ করে। বনভূমি থেকে মধু, মোম প্রভৃতি সংগ্রহ করেও বহু লোক জীবিকা নির্বাহ করে।


vi) পর্যটন শিল্পের বিকাশ 

       বনভূমি অসংখ্য পশুপাখির আবাসস্থল। পশুপাখি এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আকর্ষণে পৃথিবীর সব বনভূমিতে পর্যটকরা বেড়াতে যান। এই কারণে বনভূমি অঞ্চলে পর্যটন শিল্পে বিকাশ লাভ করেছে।


vii) জাতীয় আয় বৃদ্ধির সম্ভাবনা

        বনজ সম্পদের প্রাচুর্য দেশের জাতীয় আয় বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। কানাডা, আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, মায়ানমার ইত্যাদি দেশের জাতীয় আয়ের একটি বড় অংশ বনজ সম্পদ থেকে আসে।


খ) পরিবেশগত সম্পদ হিসেবে অরণ্যের গুরুত্ব

i) জলবায়ু নিয়ন্ত্রণ 

        অরণ্য জলবায়ুর উপর প্রভাব বিস্তার করে। গাছের পাতা থেকে প্রস্বেদন প্রক্রিয়ায় জলীয়বাষ্প নির্গত হয় ফলে বাতাসে জলীয়বাষ্পের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। এর ফলে বনভূমি সংলগ্ন বাতাস আর্দ্র হয় এবং বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।


ii) পরিবেশ দূষণ রোধ 

        অরণ্য পরিবেশকে দূষণমুক্ত করে। গাছ বায়ুমণ্ডল থেকে কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করে এবং অক্সিজেন বাতাসের ছেড়ে দেয়। ফলে প্রকৃতিতে অক্সিজেন এবং কার্বন-ডাই-অক্সাইডের ভারসাম্য বজায় থাকে।


iii) মৃত্তিকা ক্ষয় নিয়ন্ত্রণ 

        গাছের শিকড় মাটির কণাগুলিকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে রেখে মৃত্তিকা ক্ষয় নিয়ন্ত্রণ করে। পার্বত্য অঞ্চলে ভূমির ঢাল বেশি থাকায় সেখানে বনভূমি থাকা অবশ্য প্রয়োজনীয়।


iv) মরুভূমির প্রসার রোধ 

       মরুভূমির প্রান্ত দেশে অরণ্য বলয় সৃষ্টি করে বালি কণার বিস্তার প্রতিহত করা যায়। ভারতের থর মরুভূমির প্রসার রোধ করার জন্য এই মরুভূমির প্রান্তদেশে অরণ্য বলয় সৃষ্টি করা হয়েছে।


v) মৃত্তিকার উর্বরা শক্তি বৃদ্ধি

         গাছের ডাল পালা, পাতা, শিকড় ইত্যাদি মাটিতে মিশে জৈব পদার্থ উৎপন্ন করে। এই জৈব পদার্থ মাটির উর্বর শক্তি বৃদ্ধি করে।


vi) বন্যার প্রকোপ হ্রাস 

          বৃষ্টির জলের সঙ্গে প্রচুর পলি বাহিত হয়ে নদীর তলদেশে সঞ্চিত হয়। ক্রমাগত পলি সঞ্চয়ের ফলে নদীর গভীরতা হ্রাস পায়। এর ফলে বন্যার প্রকোপ বৃদ্ধি পায়। বনভূমি থাকলে বৃষ্টির জলের সঙ্গে বাহিত পলি কনার পরিমাণ কমে যায় এবং এই জল ভূগর্ভে অনেক বেশি প্রবেশ করায় বন্যার প্রকোপ কমে।


vii) ঝড়ের গতিবেগ নিয়ন্ত্রণ 

         অরণ্য বিধ্বংসী ঝড়ের হাত থেকে জীবন এবং সম্পত্তির হানি রোধ করে।


viii) জীব বৈচিত্র সংরক্ষণ 

        গাছপালা, পশুপাখি, কীটপতঙ্গ ইত্যাদি জীববৈচিত্রের ধারক ও বাহক হল অরণ্য। জীববৈচিত্র সংরক্ষণ আগামী প্রজন্মের জন্য বিশেষভাবে প্রয়োজন।



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Top Post Ad

Below Post Ad

Ads Area