মৌসুমী শব্দের উৎপত্তি আরবি শব্দ মৌসিম (Mousim) বা মালয় শব্দ মনসিন (Monsin) থেকে, যার অর্থ ঋতু।
মৌসুমী বায়ু কাকে বলে?
যে বায়ু গ্রীষ্মঋতুতে যেদিক থেকে প্রবাহিত হয় শীতঋতুতে তার ঠিক বিপরীত দিক থেকে প্রবাহিত হয়, তাকে মৌসুমী বায়ু বলে।
মৌসুমী বায়ু ক্রীড়াক্ষেত্র কাকে বলে?
ভারতকে মৌসুমী বায়ুর ক্রীড়াক্ষেত্র বলা হয়। মনে করা হয় পৃথিবীর মধ্যে ভারতবর্ষ এমন একটি দেশ যেখানে আদর্শ মৌসুমী বায়ু দেখা যায়।
ছদ্ম মৌসুমী বায়ু কাকে বলে?.
যে সকল অঞ্চলে বছরের একটি ঋতুতে নিয়মিতভাবে এবং ধারাবাহিকভাবে বায়ু প্রবাহিত হয়, কিন্তু বছরের অন্য সময় বিপরীত দিক থেকে বায়ু প্রবাহিত হয় না বা অন্য কোন দিক থেকে বায়ু প্রবাহিত হয়, এই ধরনের বায়ুকে ছদ্ম মৌসুমী(Pseudo-monsoon) বা মৌসুমী ভাবাপন্ন(Monsoon tendencies) জলবায়ু বলে।
বিশ্বের মৌসুমী বায়ুর গবেষণা কেন্দ্রের নাম কি?
মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর এবং নিউদিল্লিতে আন্তর্জাতিক ম্যানেজমেন্ট কেন্দ্র।
ভারতের মৌসুমী বায়ুর গবেষণা কেন্দ্রের নাম কি?
দিল্লিতে অবস্থিত মৌসম ভবন।
মৌসুমী জলবায়ু অঞ্চলের অবস্থান
I) অক্ষাংশগত অবস্থান
নিরক্ষরেখার উভয়দিকে 10° থেকে 24° অক্ষরেখার মধ্যে এই জলবায়ুর অবস্থান করে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এই জলবায়ু 30° উত্তর অক্ষরেখা পর্যন্ত বিস্তৃত।
II) দেশীয় অবস্থান
পূর্ব এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ভারত, বাংলাদেশ, শ্রীলংকা, মায়ানমার, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, দক্ষিণ চীন, ফিলিপাইন দ্বীপপুঞ্জ।
আংশিক ভাবে দেখা যায় তাইওয়ান, কোরিয়া, জাপান প্রভৃতি দেশে।
গিনি, ভেনিজুয়েলা, সুরিনাম, উত্তর অস্ট্রেলিয়া প্রভৃতি দেশে ছদ্ম মৌসুমী জলবায়ু দেখা যায়।
মৌসুমী জলবায়ুর বৈশিষ্ট্য (Features of Monsoon Climate)
ক) উষ্ণতা সংক্রান্ত বৈশিষ্ট্য
i) মৌসুমী জলবায়ু অঞ্চলে বাৎসরিক গড় উষ্ণতার পরিমাণ 24° সেলসিয়াস।
ii) এখানে গ্রীষ্মকালীন গড় উষ্ণতা 27°-32° সেলসিয়াস।
iii) এখানে শীতকালীন গড় উষ্ণতা 10°-22° সেলসিয়াস।
iv) বাৎসরিক গড় উষ্ণতার প্রসর 3°-11° সেলসিয়াস।
v) স্থানভেদে দৈনিক উষ্ণতার প্রসর পরিবর্তিত হয়।
vi) পার্বত্য অঞ্চলে উষ্ণতা অনেক সময় হিমাঙ্কের নিচে থাকে।
খ) বায়ুর চাপ এবং বায়ুপ্রবাহ সংক্রান্ত বৈশিষ্ট্য
i) গ্রীষ্মকালে সূর্যরশ্মি লম্বভাবে পড়ায় স্থলভাগের ওপর নিম্নচাপ সৃষ্টি হয়। বাতাসের চাপ থাকে 999 - 1008 মিলিবার।
ii) শীতকালে সূর্যরশ্মি তির্যকভাবে পড়ায় স্থলভাগে উচ্চচাপ বিরাজ করে। বায়ুচাপের পরিমাণ থাকে 1014-1026 মিলিবার।
iii) গ্রীষ্মকালে মে-জুন মাসে মৌসুমী জলবায়ু অঞ্চলের কোথাও কোথাও উষ্ণবায়ু (লু, আঁধি ) দেখা যায়।
iv) গ্রীষ্মকালে স্থলভাগের নিম্নচাপ কেন্দ্রের দিকে সমুদ্রের উপর থেকে আর্দ্র বায়ু প্রবাহিত হয়। দক্ষিণ ও পূর্ব এশিয়ায় একে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু বলে।
v) শীতকালে স্থলভাগের উচ্চচাপ কেন্দ্র থেকে সমুদ্রের নিম্নচাপের দিকে শুষ্ক এবং শীতল বাতাস প্রবাহিত হয়। ভারতীয় উপমহাদেশে এই বায়ু উত্তর-পূর্ব মৌসুমী বায়ু নামে পরিচিত।
গ) বৃষ্টিপাত সংক্রান্ত বৈশিষ্ট্য
i) গ্রীষ্মকালে মৌসুমী জলবায়ু অঞ্চলে স্থানীয়ভাবে কোথাও কোথাও বিকেলের দিকে বজ্রবিদ্যুৎ সহ ঝড় বৃষ্টি হয়। একে পূর্ব ভারতে কালবৈশাখী, দক্ষিণ ভারতের আম্রবৃষ্টি, অসমে বরদৈছিলা বলে। এতে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ খুব বেশি হয় না।
ii) বর্ষাকালে সমুদ্র থেকে আগত আর্দ্র বায়ু (দক্ষিণ ও পূর্ব এশিয়ায় দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু) প্রবাহিত হয়। ফলে বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাতের 80-90 শতাংশ বৃষ্টিপাত হয়। মোট বৃষ্টিপাতের পরিমাণ 100-150 সেন্টিমিটার।
iii) বৃষ্টিপাতের অসম বন্টন এই জলবায়ুর একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য। যেমন- মৌসিনরামে পৃথিবীর সর্বাধিক বৃষ্টিপাত (1150 সেমি) হয়। কিন্তু পশ্চিমঘাট পর্বতের পূর্বে বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ 50 সেন্টিমিটার।
iv) বৃষ্টিপাতের সময় এবং পরিমাণে অনিশ্চয়তা রয়েছে।
v) মৌসুমী বায়ুর খামখেয়ালীপনার জন্য অতিবৃষ্টিপাত জনিত বন্যা এবং স্বল্প বৃষ্টিপাতের দরুন খরা হয়।
vi) শরৎকালীন বৃষ্টিপাত সাধারণত সমুদ্রের ওপর সৃষ্ট ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাতের (সাইক্লোন, টাইফুন প্রভৃতি) জন্য হয়।
vii) শীতকালে কোথাও কোথাও পশ্চিমীঝঞ্ঝার জন্য সামান্য বৃষ্টিপাত (10-40 সেমি) হয়।
viii) মৌসুমী বৃষ্টিপাতের অধিকাংশ শৈলোৎক্ষেপ প্রকৃতির হলেও পরিচলন বৃষ্টিপাত এবং ঘূর্ণবৃষ্টি এই জলবায়ু অঞ্চলের নানা স্থানে লক্ষ্য করা যায়।