শিলস্তরে পীড়ন সৃষ্টি হলে সংনমন বা প্রসারণজনিত বলের প্রভাবে শিলাস্তরে ফাটলের সৃষ্টি হয়। ফাটল বরাবর দুপাশের শিলাখন্ড পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ে একে অন্য থেকে দূরে সরে গেলে তাকে চ্যুতি বা Fault বলে। ভূ-ত্বকে চ্যুতির সৃষ্টি হলে বিভিন্ন প্রকার ভূমিরূপ সৃষ্টি হয়। যথা -
১. চ্যুতি ভৃগু বা খাড়াতল (Fault Scarp)
চ্যুতির ফলে সৃষ্ট ঊর্ধ্বক্ষেপ এবং অধঃক্ষেপের মাঝে চ্যুতিতল বরাবর যে খাড়া ঢাল সৃষ্টি হয় তাকে চ্যুতি ভৃগু বলে।
চ্যুতি ভৃগুর উচ্চতা কয়েক সেন্টিমিটার থেকে কয়েকশো মিটার পর্যন্ত হয়। যেমন- দামোদর উপত্যকায় সৃষ্ট গ্রস্ত উপত্যকার চ্যুতি ভৃগুর উচ্চতা 1500 মিটারের বেশি।
২. পুনরুজ্জীবিত চ্যুতিভৃগু বা খাড়াতল (Resurrected Fault Scarp)
চ্যুতি ভৃগুর কিছু অংশ পলি দ্বারা ঢাকা পড়ে গেলে পরবর্তী সময়ে ক্ষয়কার্যের ফলে পলি অপসারিত হয়। ফলে ঢাকা পড়া চ্যুতিভৃগু ভূপৃষ্ঠে বেরিয়ে আসে বা দৃশ্যমান হয়। একে পুনরুজ্জীবিত চ্যুতিভৃগু বলে।
৩. চ্যুতিরেখা ভৃগু বা চ্যুতিরেখা খাড়াতল (Fault line Scarp)
ক্ষয়কার্যের ফলে চ্যুতি খাড়াতল সমতলে পরিণত হওয়ার পর চ্যুতিরেখার দুপাশে কঠিন ও কোমল শিলা থাকে। বৈষম্যমূলক ক্ষয়কার্যের ফলে কোমল শিলা দ্রুত ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। কঠিন শিলা কম ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে চ্যুতিরেখা বরাবর খাড়াঢালের সৃষ্টি করে। একে চ্যুতিরেখা ভৃগু বা চ্যুতিরেখা খাড়াতল বলে।
এই ভৃগু বা খাড়াতল মূলত তিন প্রকার,-
i) পুনর্ভবা চ্যুতিরেখা ভৃগু বা খাড়াতল (Resequent fault line scarp)
যেদিকে প্রথম চ্যুতিভৃগু সৃষ্টি হয়েছিল বৈষম্যমূলক ক্ষয় কার্যের ফলে যদি সেই দিকে চ্যুতিরেখা ভৃগু বা চ্যুতিরেখা খাড়াতল সৃষ্টি হয় তাকে পুনর্ভবা চ্যুতিরেখা ভৃগু বা খাড়াতল বলে।
ii) বিপরা চ্যুতিরেখা ভৃগু বা খাড়াতল (Obsequent fault line scarp)
চ্যুতিরেখার যেদিকে চ্যুতি খাড়াতল ছিল তার বিপরীত দিকে যদি চ্যুতিরেখা খাড়াতল সৃষ্টি হয় তবে তাকে বিপরা চ্যুতিরেখা ভৃগু বা খাড়াতল বলে।
iii) বিমিশ্র চ্যুতি ভৃগু বা খাড়াতল (Composite fault scarp)
ভৃগুর একাংশ সরাসরি চ্যুতির ফলে এবং অপর অংশ বৈষম্যমূলক ক্ষয়কার্যের ফলে সৃষ্টি হলে তাকে বিমিশ্র চ্যুতিভৃগু বা খাড়াতল বলে। এরকম অবস্থা দুইভাবে সৃষ্টি হতে পারে।
- প্রথমে চ্যুতির ফলে ভৃগু বা খাড়াতল সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে নিচের দিকে বসে যাওয়া অংশ ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে চ্যুতিভৃগুর নিচে খাড়াতল সৃষ্টি করে।
- প্রথমে চ্যুতির একদিক ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে অপরদিকে ভৃগু বা খাড়াতল সৃষ্টি হলো এবং পরবর্তীতে ক্ষয়প্রাপ্ত অংশ বসে গিয়ে চ্যুতিরেখা ভৃগু বা খাড়াতলের নিচে চ্যুতিভৃগু বা খাড়াতলের সৃষ্টি হয়।
৪. পুনরুজ্জীবিত চ্যুতিরেখা ভৃগু (Resurrected fault line scarp)
চ্যুতিরেখা ভৃগু বা খাড়াতল পলি দ্বারা ঢাকা পড়লে এবং পরবর্তীতে ক্ষয়কার্যের ফলে পলি অপসারিত হলে ভৃগু বা খাড়াতল ভূপৃষ্ঠে বেরিয়ে আসে বা দৃশ্যমান হয়। একে পুনরুজ্জীবিত চ্যুতিরেখা ভৃগু বা খাড়াতল বলে।
৫. হোস্ট ও স্তূপ পর্বত (Horst and Block mountain)
ভূ-আলোড়নের প্রভাবে দুটি সমান্তরাল চ্যুতির মধ্যবর্তী অংশ উপরে উঠে যে বিস্তীর্ণ উচ্চভূমি গঠন করে তাকে হোস্ট বলে।
বিভিন্ন প্রাকৃতিক শক্তির দ্বারা হোস্ট ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে পাহাড় বা পর্বতরূপে অবস্থান করলে তাকে স্তূপ পর্বত বলে। যেমন- ভারতের সাতপুরা পর্বত, বিন্ধ্য পর্বত স্তূপ পর্বত।
৬. তির্যক চ্যুত স্তূপ পর্বত (Tilted fault Block mountain)
দুটি তীর্যক চ্যুতির মধ্যবর্তী অংশ তীর্যকভাবে উত্থিত হয়ে যে পর্বত সৃষ্টি করে তাকে তির্যক চ্যুত স্তূপ পর্বত বলে। এই পর্বতের এক পাশের ঢাল খুব খাড়া হয় এবং অপর পাশের ঢাল মৃদু হয়।
৭. গ্রস্ত বা স্রংস উপত্যকা (Rift valley)
দুটি প্রায় সমান্তরাল স্বাভাবিক চ্যুতির মধ্যবর্তী অংশ নিচে বসে গেলে অথবা উপরে উঠে গেলে নিচে বসে যাওয়া অংশকে গ্রস্ত বা স্রংস উপত্যকা বলে। যেমন- ভারতের নর্মদা, তাপ্তি, দামোদর উপত্যকা।
ক্ষুদ্রায়তন, সংকীর্ণ, খাড়া ঢালযুক্ত খাতকে গ্রাবেন (Graben) বলে।
৮. র্যাম্প উপত্যকা (Ramp valley)
দুটি প্রায় সমান্তরাল বিপরীত চ্যুতির মধ্যবর্তী অংশ নিচে বসে গিয়ে যে উপত্যকা সৃষ্টি করে তাকে র্যাম্প উপত্যকা বলে।
৯. ক্লিপ্পে (Klippe)
থ্রার্স্ট চ্যুতির বিচ্ছিন্ন বাহু বা ঊর্ধ্বস্তূপটি উৎপত্তিস্থল থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটারের বেশি দূরে স্থানান্তরিত হলে তাকে ক্লিপ্পে বলে। পরবর্তীতে ক্লিপ্পে ক্ষয়প্রাপ্ত হলে নিচের মূল শিলা বাইরে বেরিয়ে আসে।
আরও পড়ুন