নিরক্ষীয় জলবায়ু অঞ্চল কাকে বলে?
নিরক্ষরেখার উভয়দিকে 5°-10° উত্তর ও দক্ষিণ অক্ষরেখার মধ্যবর্তী স্থানে উষ্ণ আর্দ্র জলবায়ু বিরাজ করে। এই জলবায়ুকে নিরক্ষীয় জলবায়ু বলে এবং অঞ্চলকে নিরক্ষীয় জলবায়ু অঞ্চল বলে।
নিরক্ষীয় জলবায়ু অঞ্চলের অবস্থান ( Location of Equatorial Climatic Region)
I) অক্ষাংশগত অবস্থান
নিরক্ষরেখার উভয়দিকে 5° থেকে 10° অক্ষরেখার মধ্যবর্তী অংশে দেখা যায়।
II) দেশীয় অবস্থান
ব্রাজিলের আমাজন অববাহিকা, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, কঙ্গো-জাইরে অববাহিকা, ভারতের দক্ষিণভাগ, এছাড়া হন্ডুরাস, নিকারাগুয়া, কোস্টারিকা, পানামা, গুয়াতেমালা, শ্রীলঙ্কা প্রকৃতি।
নিরক্ষীয় জলবায়ুর বৈশিষ্ট্য
ক) উষ্ণতা সংক্রান্ত বৈশিষ্ট্য
i) সারা বছর প্রায় একই রকম উষ্ণতা
নিরক্ষীয় অঞ্চলে সূর্যরশ্মি সারাবছর লম্বভাবে বা প্রায় লম্বভাবে পতিত হয় এবং দিন ও রাতের দৈর্ঘ্য সমান থাকে বলে সারা বছর প্রায় একইরকম উষ্ণতা থাকে।
ii) বার্ষিক উষ্ণতার প্রসর
এই অঞ্চলে বার্ষিক গড় উষ্ণতা থাকে 24° থেকে 27° সেলসিয়াস। বার্ষিক উষ্ণতার প্রসর থাকে 2°-3° সেলসিয়াস। তবে সমুদ্র উপকূল বা দ্বীপসমূহে উষ্ণতার প্রসর আরও কম থাকে।
iii) দৈনিক উষ্ণতার প্রসর
দিনের বেলায় আগত সৌরশক্তির জন্য উষ্ণতা বেশি হয়। বিকালে বৃষ্টিপাত এবং রাতে তাপবিকিরণের ফলে রাতের উষ্ণতা কম হয়। এই কারণে দৈনিক উষ্ণতার প্রসার হয় প্রায় 5°-15° সেলসিয়াস।
iv) সারা বছর উষ্ণ-আর্দ্র ঋতু
বার্ষিক উষ্ণতার প্রসর বেশি হয় না বলে এখানে কোন ঋতু পরিবর্তন হয় না। এখানে একটিমাত্র ঋতু উষ্ণ-আর্দ্র ঋতু বিরাজ করে।
v) রাত্রিকাল শীতকাল
এই অঞ্চলের সারা বছর উষ্ণ-আর্দ্র ঋতু বিরাজ করে। দিনের তাপমাত্রার তুলনায় রাত্রের তাপমাত্রা 15° সেলসিয়াস পর্যন্ত কম হওয়ায় এখানকার অধিবাসীরা রাত্রিকালে শীত অনুভব করে। একারণে বলা হয় "Night is the winter of the Topics".
vi) অস্বস্তিকর আবহাওয়া
উচ্চ তাপমাত্রা, অত্যধিক আপেক্ষিক আর্দ্রতা এবং বায়ুপ্রবাহ প্রায় না থাকায় বিকালের আবহাওয়া অসহনীয় হয়ে ওঠে। তবে সূর্যের উত্তরায়ন এবং দক্ষিণায়নের সঙ্গে নিরক্ষীয় নিম্নচাপ বলয় স্থান পরিবর্তন করলে আবহাওয়া কিছুটা আরামদায়ক হয়।
vii) কুয়াশা ও শিশির সৃষ্টি
রাতে তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় কুয়াশা ও শিশির সৃষ্টি হয়।
খ) বায়ুর চাপ এবং বায়ুপ্রবাহের বৈশিষ্ট্য
i) কম বায়ুচাপ ঢাল
উষ্ণতা বেশি হওয়ায় এখানে স্থায়ী নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়। বায়ুর চাপ থাকে 1009-1012 মিলিবার অর্থাৎ বায়ুর চাপঢাল খুব কম থাকে।
ii) ডোলড্রাম
অধিক উষ্ণতার কারণে এই অঞ্চলের নিম্নচাপ বিরাজ করে। বায়ুর চাপের ঢাল খুব কম হওয়ায় বায়ুপ্রবাহ দেখা যায় না। বায়ুপ্রবাহহীন এই অঞ্চল শান্ত থাকায় একে নিরক্ষীয় শান্তবলয় বা ডোলড্রাম (Doldrum) বলে।
iii) ITCZ
উত্তর-পূর্ব এবং দক্ষিণ-পূর্ব আয়ন বায়ু এই অঞ্চলে মিলিত হয় বলে এই অঞ্চলকে আন্ত:ক্রান্তীয় অভিসারী অঞ্চল বা ITCZ (Inter Tropical Convergence Zone) বলে।
iv) উর্ধ্বমুখী বায়ু ও পরিচলন বৃষ্টি
প্রচণ্ড সূর্যতাপে জলীয়বাষ্পপূর্ণ বাতাস উপরে উঠে যায় এবং প্রায় প্রতিদিন বিকালে পরিচলন বৃষ্টিপাত ঘটায়।
v) সমুদ্রবায়ু
উপকূলবর্তী অঞ্চলে বিকালের পরে সমুদ্রবায়ু প্রবাহিত হয়।
vi) বজ্রবিদ্যুৎ সহ বৃষ্টি
মাঝে মাঝে এই অঞ্চলে বজ্রবিদ্যুৎসহ বৃষ্টিপাত হয়।
গ) মেঘাচ্ছন্নতা এবং বৃষ্টিপাত সংক্রান্ত বৈশিষ্ট্য
i) মেঘাচ্ছন্ন আকাশ
প্রায় সারা বছর আকাশ 50 থেকে 60 শতাংশ মেঘাচ্ছন্ন থাকে। সকালে এবং রাত্রে আকাশ মেঘমুক্ত থাকে।
ii) 4 ঘটিকার বৃষ্টি
সকালের পর থেকে আকাশে মেঘ জমতে থাকে। বিকেল 3 টা থেকে 4 টে মধ্যে বজ্রবিদ্যুৎসহ প্রচুর বৃষ্টি হয়। একে Four o'clock rain বলে।
iii) পরিচলন বৃষ্টি
প্রবল সূর্যকিরণে জলীয় বাষ্পপূর্ণ বাতাস উপরে উঠে যায় (অর্থাৎ পরিচালন স্রোত সৃষ্টি করে)। উপরে এই বাতাস শীতল ও ঘনীভূত হয়ে পরিচলন বৃষ্টিপাত ঘটায়।
iv) কিউমুলোনিম্বাস মেঘের সৃষ্টি
জলীয় বাষ্পপূর্ণ বায়ু ওপরে উঠে পরিচলন প্রক্রিয়ায় কিউমুলোনিম্বাস মেঘের সৃষ্টি করে। এই মেঘ থেকে বজ্রবিদ্যুৎ সহ বৃষ্টিপাত হয়।
v) গড় বার্ষিক বৃষ্টিপাত
গড় বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ 250 সেন্টিমিটার। শুষ্কতম মাসেও বৃষ্টিপাত 6 সেন্টিমিটারের বেশি হয়।
vi) আর্দ্রতা
গড় আর্দ্রতা 75 শতাংশ থাকে। স্বস্তিসূচক মাত্রার (Human Comfort Index) মান কম হয়।
vii) বর্ষণ দিনের সংখ্যা
এই অঞ্চলে বর্ষণ দিনের সংখ্যা 75 থেকে 150 দিন। জাভা দ্বীপে বছরে প্রায় 300 দিন ঝড়বৃষ্টি হয়।
viii) বর্ষা বলয়ের স্থানান্তর
সূর্যের উত্তরায়ন এবং দক্ষিণায়নের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিরক্ষীয় নিম্নচাপ বলয় যথাক্রমে উত্তর এবং দক্ষিণে স্থানান্তরিত হয়। এই কারণে বলা হয় বৃষ্টি সূর্যের অনুগামী (Rain follows the sun)।
ix) সূর্যের উত্তরায়ণ এবং দক্ষিণায়নের সময় যখন সূর্য নিরক্ষীয় অঞ্চলের লম্বভাবে কিরণ দেয় তখন বৃষ্টিপাত বেশি হয়। ফলে বার্ষিক উষ্ণতার এবং বৃষ্টিপাতের লেখচিত্রে বৃষ্টিপাতের দুটি শীর্ষ লক্ষ্য করা যায়।