মারবার্ট মৃত্তিকার যে শ্রেণীবিভাগ করেছিলেন তাকে পরিবর্তিত করে বালদুইন (Baldwin) , কেলগ (Kellogg) ও থরপ (Thorp) 1948 সালে মাটির শ্রেণীবিভাগের নতুন পদ্ধতি প্রচলন করেন। পরবর্তীকালে থরপ এবং স্মিথ এই পদ্ধতিকে আরও সংশোধন করে 1949 সালে মাটির শ্রেণীবিভাগের একটি নতুন খসড়া প্রদান করেন। এটি U.S.D.A (United States Department of Agriculture) শ্রেণীবিভাগ নামে পরিচিত। এই শ্রেণীবিভাগ অনুসারে মাটিকে প্রধান তিনটি ক্রমে (Order) ভাগ করা যায়। যথা- আঞ্চলিক মাটি, আন্তঃ আঞ্চলিক মাটি এবং বহিরাঞ্চলিক মাটি।
ক) আঞ্চলিক মাটি (Zonal Soil)
আদিশীলা বা জনকশিলার প্রভাব ছাড়াই কেবলমাত্র জলবায়ু এবং স্বাভাবিক উদ্ভিদের ওপর ভিত্তি করে বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে যে মাটি গড়ে ওঠে তাকে আঞ্চলিক মাটি বলে। এই মাটির 6টি উপক্রম আছে এবং 22 টি মাটি গোষ্ঠী আছে।
উদাহরণ
চারনোজেম, পডসল, সিরোজেম, ল্যাটেরাইট, লালমাটি, সোলানচক, চেস্টনাট প্রভৃতি।
বৈশিষ্ট্য
- এই মাটি সৃষ্টিতে জলবায়ুর ভূমিকা সবচেয়ে বেশি থাকে বলে এই মাটিতে ক্লাইমোসিকোয়েন্স (Climosequence) বলে।
- এই মাটিতে A,B এবং C এই তিনটি স্তর সুস্পষ্ট ভাবে দেখা যায়।
- একই জলবায়ু এবং একই স্বাভাবিক উদ্ভিদযুক্ত অঞ্চলে একই ধরনের বৈশিষ্ট্যযুক্ত মাটি গড়ে ওঠে।
- এই মাটির প্রতিটি স্তরের গ্ৰথন, গঠন, PH ভিন্ন প্রকৃতির হয়।
- কৃষিকাজ এবং অন্যান্য অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপের জন্য এই মাটির গুরুত্ব বেশি।
- এই মাটি বেশ গভীর হয়।
খ) আন্তঃআঞ্চলিক মাটি (Intrazonal Soil)
একই জলবায়ু এবং স্বাভাবিক উদ্ভিদ অঞ্চলের মধ্যে স্থানীয়ভাবে ভূপ্রকৃতি এবং জনক শিলার পার্থক্যের উপর নির্ভর করে সুস্পষ্ট স্তরযুক্ত যে মৃত্তিকা গড়ে ওঠে তাকে আন্তঃ আঞ্চলিক মাটি বলে।
এই মৃত্তিকার 3 টি উপক্রম আছে এবং উপক্রমের অধীনে 12 টি প্রধান মৃত্তিকা গোষ্ঠী আছে।
উদাহরণ
সোলোনচাক, সোলনেৎজ, বগ বা জলাভূমির মাটি, হিউমিক গ্লেই মাটি, বাদামী অরণ্য মাটি, রেনজিনা মাটি প্রভৃতি।
বৈশিষ্ট্য
- আঞ্চলিক মৃত্তিকা বলয়ের মধ্যে গড়ে ওঠে।
- এই মাটির সৃষ্টিতে ভূপ্রকৃতি এবং আদিশীলার প্রভাব বেশি।
- এই মাটি খুব বেশি পুরু হয় না।
শ্রেণীবিভাগ
এই মাটির তিন প্রকারের হয়। যেমন-
১. লবণাক্ত মাটি
এই মাটির উপরে লবণ বা ক্ষারজাতীয় পদার্থ বেশি থাকে। বৃষ্টিপাত খুব কম হওয়ায় ধৌত প্রক্রিয়া কম হয় এবং বাষ্পীভবন বেশি হওয়ায় কৌশিক প্রক্রিয়ায় ভৌমজল মিশ্রিত লবণ মৃত্তিকার উপরিস্তরে সঞ্চিত হয়। মারবাট এই ধরনের মাটির নাম দিয়েছেন হেলোমরফিক। যেমন- সোলোনচাক, সোলনেৎজ।
২. চুনময় মাটি
এই মাটিতে চুনের পরিমাণ বেশি থাকে। মারবাট এই ধরনের মাটির নাম দিয়েছেন ক্যালসিমরফিক। যেমন- বাদামী বর্ণের মাটি।
৩. জলাভূমির মাটি
বিভিন্ন জলাভূমির তলদেশে এই মাটির সৃষ্টি হয়। মারবাট এই মাটির নাম দিয়েছেন হাইড্রোমরফিক। যেমন- পিট বা বগ মাটি।
গ) অ-আঞ্চলিক মাটি বা বহিরাঞ্চলিক মাটি (Azonal Soil)
উৎপত্তিস্থল থেকে বিভিন্ন প্রাকৃতিক শক্তির মাধ্যমে বাহিত হয়ে অন্য স্থানে সঞ্চিত হয়ে যে মাটি গঠিত হয় তাকে অ-আঞ্চলিক বা বহিরাঞ্চলিক মাটি বলে।
উদাহরণ
পলিমাটি, বেলেমাটি, লোয়েস, লিথোসল, রেগোসল প্রভৃতি।
বৈশিষ্ট্য
- মৃত্তিকা সৃষ্টিতে কোন সক্রিয় বা নিষ্ক্রিয় উপাদানের প্রাধান্য থাকে না।
- এই মাটি অপরিণত হয়।
- মাটিতে সবগুলি স্তর দেখা যায় না।
- এই মাটি যেখানে দেখা যায় সেখানে মাটির উৎপত্তি হয় না।