সমস্থিতি কি?
আইসোস্ট্যাসি কথাটি দুটি গ্রিক শব্দ 'Isos' অর্থ সমান বা 'equal' এবং 'Stasis' অর্থ নিশ্চল বা "Standing still" থেকে এসেছে। 1889 সালে আমেরিকার ভূ-তত্ত্ববিদ ডাটন "Isostasy" শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেছিলেন।
শিলার ঘনত্ব বা প্লবতার তারতম্যের জন্য ভূ-ত্বকীয় অংশগুলি, যেমন- পাহাড়, পর্বত, মালভূমি, সমভূমি, সমুদ্রতল বিভিন্ন উচ্চতায় অবস্থান করে।ভূ-ত্বকীয় অংশগুলি বিভিন্ন উচ্চতায় অবস্থান করে নিজেদের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করে। ভারসাম্য রক্ষা করার এই অবস্থাকে আইসোস্ট্যাসি বা সমস্থিতি বলে।
ভারসাম্য অবস্থা বিঘ্নিত হলে অগ্নুৎপাত, ভূমিকম্প প্রভৃতি ভূ-গাঠনিক প্রক্রিয়াগুলি সক্রিয় হয়।
সমস্থিতি তত্ত্বসমূহ
সমুদ্রতল থেকে বিভিন্ন উচ্চতা সম্পন্ন পাহাড়, পর্বত, মালভূমি, সমভূমি প্রভৃতি কি অবস্থায় রয়েছে সে সম্পর্কে বিভিন্ন মতবাদের প্রচলন আছে।
A. স্যার জর্জ এইরির মতবাদ (Theory of sir George Airy)
1855 সালে স্যার জর্জ এইরির তার সমস্থিতি মতবাদ প্রকাশ করেন। এইরির তত্ত্বটি পদার্থের ভাসমানতার ধর্মের ( law of floatation ) উপর প্রতিষ্ঠিত।
ক. মতবাদের স্বপক্ষে পরীক্ষা
এইরির মত অনুযায়ী একই ঘনত্বযুক্ত বিভিন্ন আকারের পদার্থকে তরলে ভাসিয়ে দিলে সেগুলি বিভিন্ন উচ্চতায় ভাসবে। তরলে ভেসে থাকা অংশের দৈর্ঘ্য ডুবে থাকা অংশের দৈর্ঘ্যের অনুপাতিক হবে। যেমন- কোন হিমশৈলের 1/10 অংশ জলের উপরে ভেসে থাকে এবং 9/10 অংশ জলের নিচে থাকে।
এছাড়া সমান বেধ যুক্ত বিভিন্ন দৈর্ঘ্যের কয়েকটি লোহার স্তম্ভকে পারদ পূর্ণ পাত্রে রেখে দিলে দেখা যাবে কম দৈর্ঘ্যের স্তম্ভগুলি কম উচ্চতায় এবং বেশি দৈর্ঘ্যের স্তম্ভগুলি বেশি উচ্চতায় ভাসবে।
খ. মতবাদ
এইরির মতে মহাদেশগুলি ( সায়াল, SiAl ) একই ঘনত্বযুক্ত শিলায় গঠিত। যার গড় ঘনত্ব 2.7 গ্রাম/ ঘন সেন্টিমিটার। মহাসাগরীয় ভূত্বক ( সিমা, SiMa ) অপেক্ষাকৃত ভারী পদার্থ দ্বারা গঠিত। যার গড় ঘনত্ব 3.0 গ্রাম/ ঘন সেন্টিমিটার।
এই কারণে মহাদেশীয় ভূখণ্ড গুলি ভারী ও ঘন সায়মার ( SiMa ) ওপর ভাসমান অবস্থায় রয়েছে। এখানে ভাসমানতার নিয়ম কাজ করে। তার মতে পর্বত, মালভূমি, সমভূমি বিভিন্ন উচ্চতায় অবস্থান করে। পর্বত যেহেতু অনেক উচ্চতায় রয়েছে ভাসমানতার নিয়ম অনুযায়ী পর্বতের নিচের অংশ (Root) ভূত্বকের গভীরে অনেক দূর পর্যন্ত আছে। মালভূমি ও সমভূমির উচ্চতা কম হওয়ায় এদের নিচের অংশ কম গভীরতা পর্যন্ত আছে।
গ. সমালোচনা
১. ভাসমান হিমশৈলের 9/10 অংশ জলের নিচে থাকে। সেই হিসেবে হিমালয় পর্বতের নিচে প্রথিত আছে 70784 মিটার। অপেক্ষাকৃত হালকা মহাদেশীয় অংশ ( সায়াল, SiAl ) ভারী সিমার ( SiMa ) মধ্যে এত গভীরে প্রথিত থাকা সম্ভব নয়।
২. 70784 মিটার বা প্রায় 71 কিলোমিটার গভীরতায় অতিরিক্ত উষ্ণতা এবং চাপে পদার্থ কঠিন অবস্থায় থাকে না বরং গলিত অবস্থায় থাকে।
B. প্রাটের মতবাদ (Theory of A Pratt)
1859 সালে আর্কডিকন জে এইচ প্রাট ভূত্বকের বিভিন্ন অংশের সমস্থিতি সম্পর্কে তার মতবাদ প্রকাশ করেন। তার এই মতবাদ প্রতিবিধানের নিয়ম বা প্রতিপূরনের নিয়মের ( law of compensation ) উপর প্রতিষ্ঠিত।
ক. মতবাদের স্বপক্ষে পরীক্ষা
সমান ওজনের একই ব্যাসার্ধ যুক্ত দুটি ভিন্ন ঘনত্বের বস্তুকে তরলে ভাসিয়ে দেওয়া হল-
ধরি হালকা পদার্থের গঠিত স্তম্ভের উচ্চতা ও ঘনত্ব যথাক্রমে h1 এবং p1 এবং ভারী শিলায় গঠিত স্তম্ভের উচ্চতা ও ঘনত্ব যথাক্রমে h2 এবং p2 । স্তম্ভের ভূমির ক্ষেত্রফল a । স্তম্ভ দুটি একটা নির্দিষ্ট তলের ওপর সমান চাপ দেয়।
শর্তানুসারে
h1. p1. a.g = h2. p2. a.g ( g = অভিকর্ষজ ত্বরণ )
h1. p1 = h2. p2
যদি h1>h2 হয় তাহলে p2>p1 হবে।
অর্থাৎ হালকা শিলার ঘনত্ব কম হওয়ায় তার উচ্চতা বেশি হবে এবং ভারী শিলার ঘনত্ব বেশি হওয়ায় তার উচ্চতা কম হবে।
খ. মতবাদের মূল কথা
তিনি ভাসমান ভূ-ত্বককে কতকগুলি স্তম্ভরূপে কল্পনা করেন। স্তম্ভগুলি প্রতিপূরণ তলের ওপর প্রতি বর্গ একক স্থানে সমান চাপ দেয়। ফলে কম ঘনত্বযুক্ত পদার্থ বেশি উচ্চতায় এবং বেশি ঘনত্বযুক্ত পদার্থ কম উচ্চতায় অবস্থান করে।
সুতরাং বলা যায় পর্বতের চেয়ে মালভূমি, মালভূমির চেয়ে সমভূমি বেশি ঘনত্বযুক্ত পদার্থ দ্বারা গঠিত। ফলে পর্বত মালভূমির থেকে, মালভূমি সমভূমির থেকে বেশি উচ্চতায় অবস্থান করে।
গ. সমালোচনা
১. প্রাট অ্যাস্থেনোস্ফিয়ারে অবস্থিত যে প্রতিবিধান তলের কথা বলেছেন তা সম্পূর্ণভাবে গ্রহণযোগ্য নয়।
২. ভূত্বকের প্রত্যেকটি খন্ডের ঘনত্ব সর্বত্র সমান হওয়া সম্ভব নয় ।
ঘ. গুরুত্ব
প্রাট প্রথম ভূত্বকের খন্ড গুলির অসম ঘনত্বের কথা বলেছেন।