উদ্ভিদের পুষ্টির জন্য 20 টি অপরিহার্য মৌলিক উপাদানের প্রয়োজন হয়। এদের মধ্যে নাইট্রোজেন (N), ফসফরাস (P), পটাশিয়াম (K) বা NPK প্রধান প্রাথমিক পরিপোষক। উদ্ভিদের দেহের গঠন এবং সুষ্ঠু বৃদ্ধির ক্ষেত্রে এই তিনটি মৌলের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। যেমন-
ক) নাইট্রোজেন (N)
বাতাসে নাইট্রোজেনের পরিমাণ 78% হলেও উদ্ভিদ সরাসরি বাতাস থেকে নাইট্রোজেন সংগ্রহ করতে পারেনা। মাটির মধ্যে থাকা বিভিন্ন যৌগ, যেমন- অ্যামোনিয়াম, নাইট্রাইট এবং নাইট্রেট থেকে উদ্ভিদ প্রয়োজনীয় নাইট্রোজেন সংগ্রহ করে। একমাত্র শুঁটি জাতীয় উদ্ভিদের মূলে থাকা গুটি (nodule) বাতাস থেকে সরাসরি নাইট্রোজেন সংগ্রহ করতে পারে।
মাটিতে নাইট্রোজেন স্থাপনকারী জীবাণু
বায়ুজীবী অ্যাজোটোব্যাকটর ব্যাকটেরিয়া অবায়ুজীবী ক্লসট্রেডিয়াম ব্যাকটেরিয়া মাটিতে নাইট্রোজেন স্থাপন করে। এছাড়া পাইন, লাইকেন প্রভৃতি উদ্ভিদের মূলে রাইজোবিয়াম নামক মিথোজীবী ব্যাকটেরিয়া মাটিতে নাইট্রোজেন স্থাপন করে।
উদ্ভিদ দেহে নাইট্রোজেনের গুরুত্ব
- নাইট্রোজেনের প্রভাবে উদ্ভিদের দ্রুত বৃদ্ধি ঘটে।
- গাছের কান্ড এবং পাতার সবুজ বর্ণ গঠনে নাইট্রোজেনের ভূমিকা অপরিসীম।
- ফল এবং শস্য নরম এবং রসালো হয় এবং প্রোটিনের পরিমাণ বাড়ায়।
- ক্লোরোফিল, অ্যামাইনো অ্যাসিড, প্রোটিন এবং প্রোটোপ্লাজমের প্রধান উপাদান হলো নাইট্রোজেন।
- নাইট্রোজেন শর্করা জাতীয় পদার্থের উৎপাদনকে নিয়ন্ত্রণ করে।
- গাছের শিকড়ের তুলনায় কাণ্ডের বৃদ্ধি দ্রুত করে।
- এটি উদ্ভিদের বীজ তৈরিতে সাহায্য করে এবং শস্যের খাদ্যগুণ বাড়ায়।
নাইট্রোজেনের অভাবজনিত লক্ষণ
- নাইট্রোজেনের অভাবে উদ্ভিদের কোষ বিভাজন বন্ধ হয়ে যায় ফলে উদ্ভিদ খর্বাকার হয়।
- ফল দেরিতে পাকে এবং বীজের মান খারাপ হয়।
- পাতা এবং কাণ্ড হলুদ হয়ে যায়।
অতিরিক্ত নাইট্রোজেনের ক্ষতিকর প্রভাব
- অতিরিক্ত নাইট্রোজেনের ফলে গাছের দ্রুত বৃদ্ধি হয় ফলে কোষের দেওয়াল পাতলা হয়ে যায় এবং রোগ পোকার আক্রমণ বেশি হয়।
- গাছের অতিরিক্ত বৃদ্ধি হওয়ায় গাছ ভারী হয়ে যায় এবং শস্য সহ মাটিতে পড়ে যায়।
- দানা শস্যে দানার পরিমাণ কমে যায় এবং খড়ের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।
- শস্য পাকতে সময় লাগে।
খ) ফসফরাস (P)
নাইট্রোজেনের পর গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টিমৌল হল ফসফরাস। মাটির মধ্যে থাকা অ্যাপেটাইট খনিজ এবং ফসফেটিক নুড়ি থেকে উদ্ভিদ ফসফরাস সংগ্রহ করে।
উদ্ভিদ দেহে ফসফরাসের গুরুত্ব
- প্রতিটি সজীব কোষে ফসফরাস উপস্থিত থাকে কারণ এটি DNA এর উপাদান।
- উদ্ভিদের দেহের কোষ বিভাজনে সহায়তা করে।
- উদ্ভিদের শিকড় বৃদ্ধিতে, ফল বা শস্যের দ্রুত পাকতে সাহায্য করে।
- খড়ের তুলনায় শস্যের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।
- মাটিতে নাইট্রোজেন সৃষ্টিকারী জীবাণু বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
- ফ্যাট বা স্নেহ জাতীয় পদার্থ সৃষ্টিতে সাহায্য করে।
- শস্য এবং ফল সুস্বাদু হয়।
- এটি কান্ডকে দৃঢ় এবং সতেজ রাখে।
ফসফরাসের অভাবজনিত লক্ষণ
- উদ্ভিদের কোষ বিভাজন বন্ধ হয়ে উদ্ভিদ খর্বাকার হয়।
- উদ্ভিদের পাতা লালচে হয়ে পড়ে।
- উদ্ভিদের নাইট্রোজেন শোষণ ক্ষমতা কমে যায়।
- ফসল পাকতে সময় বেশি লাগে।
- উদ্ভিদের ফুলের সংখ্যা কম হয় এবং বীজের মান খারাপ হয়।
অতিরিক্ত ফসফরাসের ক্ষতিকর প্রভাব
- মাটিতে অতিরিক্ত ফসফরাস থাকলে উদ্ভিদ অন্যান্য খনিজ মৌল সংগ্রহ করতে পারেনা। ফলে উদ্ভিদের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়।
- উদ্ভিদের উৎপাদন ক্ষমতা কমে যায়।
- গাছের পরিপূর্ণ বিকাশের আগে ফুল, ফল এবং বীজ সৃষ্টি হয়। ফলে ফসল উৎপাদন ব্যাহত হয়।
পটাশিয়াম (K)
উদ্ভিদের তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য মৌল হলো পটাশিয়াম। মাটিতে পটাশিয়ামের প্রধান উৎস হলো পটাশ মাইকা, মাস্কোভাইট মাইকা, বায়োটাইট মাইকা প্রভৃতি।
উদ্ভিদদেহে পটাশিয়ামের গুরুত্ব
- উদ্ভিদের ক্লোরোফিল তৈরি এবং সালোকসংশ্লেষের হার বৃদ্ধি করে।
- অ্যামোনিয়া থেকে অ্যামাইনো অ্যাসিড এবং প্রোটিন তৈরিতে সাহায্য করে।
- ধান, গম জাতীয় উদ্ভিদের কাণ্ডকে শক্ত করে।
- ফলের রং এবং আয়তন বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
- উদ্ভিদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
- উদ্ভিদ দেহে লোহার পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।
- উদ্ভিদ দেহে শর্করা জাতীয় পদার্থ সৃষ্টি করতে সাহায্য করে।
পটাশিয়াম এর অভাবজনিত লক্ষণ
- পাতার চারদিকে হলুদ রঙের দাগ দেখা যায়।
- উদ্ভিদ খর্বাকার হয়ে পড়ে।
- উদ্ভিদের নিচের অংশ তামাটে বর্ণ ধারণ করে।
- পাতার প্রান্তভাগে হলুদ রঙের দাগ সৃষ্টি হয়। একে ক্লোরোসিস বলে। এরপর হলুদ পাতাগুলি শুকিয়ে নষ্ট হয়ে যায়। একে নেক্রোসিস বলে।
- উদ্ভিদের শিকড়ের বৃদ্ধি কমে যায়। ফলে গাছ দীর্ঘদিন মাটিতে দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না।
অতিরিক্ত পটাশিয়াম এর ক্ষতিকর প্রভাব
- গাছের পাতা ধূসর রং এর হয়।
- গাছের ফুল পরিপূর্ণ হওয়ার আগেই ঝরে পড়ে।
- ফলের ত্বক খুব বেশি পুরু হয়।