ক) আখ বা ইক্ষু উৎপাদনের অনুকূল ভৌগোলিক পরিবেশ
ইক্ষু উৎপাদনের অনুকূল ভৌগোলিক পরিবেশকে দুটি ভাগে ভাগ করে আলোচনা করা যেতে পারে। যেমন- A. অনুকূল প্রাকৃতিক পরিবেশ এবং B. অনুকূল অর্থনৈতিক পরিবেশ।
A. অনুকূল প্রাকৃতিক পরিবেশ
1. জলবায়ু
আখ উষ্ণ এবং আর্দ্র ক্রান্তীয় জলবায়ু অঞ্চলের ফসল।
i. উষ্ণতা
বাৎসরিক গড় 20° সেলসিয়াস থেকে 27° সেলসিয়াস উষ্ণতা আখ গাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধি এবং ফলনের জন্য উপযোগী।
ii. বৃষ্টিপাত
100 সেন্টিমিটার থেকে 150 সেন্টিমিটার বৃষ্টিপাত যুক্ত অঞ্চলে আখ চাষ ভালো হয়। 100 সেন্টিমিটার কম বৃষ্টিপাত হলে জলসেচের প্রয়োজন হয়। কম বৃষ্টিপাত যুক্ত অঞ্চলে আখের রস কম হয়। মাত্রাতিরিক্ত বৃষ্টিপাত হলে আখে জলীয় অংশ বেশি থাকে ফলে আখ কম মিষ্টি হয়।
iii. আর্দ্রতা
আখের চারা বৃদ্ধির সময় আর্দ্র জলবায়ু প্রয়োজন হয় এবং আখ কাটার সময় রোদ ঝলমলে শুষ্ক আবহাওয়ার প্রয়োজন।
iv. সামুদ্রিক বাতাস
সামুদ্রিক লবণাক্ত বাতাস আখের ফলন বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
v. কুয়াশা এবং তুষারপাত
কুয়াশা ও তুষারপাত আখ চাষের ক্ষতি করে। সেই কারণে আখ চাষের জলবায়ু তুহিন মুক্ত হওয়া প্রয়োজন।
2. মৃত্তিকা
চুন এবং লবণযুক্ত দোআঁশ মাটিতে আখ চাষ ভালো হয়। এছাড়া সুষম জলধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন পলিমাটি, দোআঁশ মাটি, রেগুর মাটিতে আখের ফলন ভালো হয়। ক্ষারীয় মৃত্তিকায় আখ চাষ ভাল হয় না।
3. ভূমির প্রকৃতি
গাছের গোড়ায় জল জমে থাকলে গাছ পচে যায়। উত্তম জলনিকাশি যুক্ত অল্প ঢালু জমিতে আখ চাষ ভালো হয়।
B. অনুকূল অর্থনৈতিক পরিবেশ
4. শ্রমিক
আখ অত্যন্ত নিবিড় কৃষিকাজ। চারারোপণ করা, জমি তৈরি, আগাছা নিড়ানো এবং কীটনাশক প্রয়োগ, মাড়াই করা এবং বাজারে নিয়ে যাওয়া প্রভৃতি কাজের জন্য প্রচুর দক্ষ শ্রমিকের প্রয়োজন হয়।
5. পরিবহন
আখের রস থেকে চিনি, গুড় প্রভৃতি তৈরি করা হয়। এই কারণে আখ কাটার পর 24 থেকে 48 ঘণ্টার মধ্যে কারখানায় পাঠানোর প্রয়োজন, না হলে আখ শুকিয়ে গিয়ে উৎপাদন ব্যাহত হবে। এই কারণে পরিবহন ব্যবস্থা অত্যন্ত উন্নত থাকা প্রয়োজন।
এছাড়া 6. উন্নত বীজ 7. কীটনাশকের ব্যবহার 8. মূলধন প্রভৃতি আখ উৎপাদনে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে প্রভাব বিস্তার করে।
খ) ভারতের আখ চাষের সমস্যা
১. ভারতের হেক্টর প্রতি আখের উৎপাদন যথেষ্ট কম।
২.ভারতীয় আখের গুনগতমান বিশ্বমানের নয়।
৩. আখের রসের পূর্ণ উপযোগিতা পাওয়া যায় না।
৪.সময়মতো কারখানায় আখ না পৌঁছানোর জন্য রস শুকিয়ে যায়।
৫. পরিমিত সারের অভাব।
গ) আখ চাষের সমস্যা সমাধানের জন্য গৃহীত ব্যবস্থা।
১. উন্নত প্রজাতির আখ উৎপাদনে চেষ্টা চলছে।
২. জলসেচ সার প্রভৃতি দিয়ে উৎপাদন বৃদ্ধি করার চেষ্টা চলছে।
৩. প্রযুক্তির উন্নতির মাধ্যমে আখের রস থেকে জ্বালানি উৎপাদনের চেষ্টা চলছে।
আরও পড়ুন
- ধান উৎপাদনের অনুকূল ভৌগোলিক পরিবেশ
- গম চাষের অনুকূল ভৌগোলিক পরিবেশ
- কার্পাস বা তুলা চাষের অনুকূল ভৌগোলিক পরিবেশ
- চা চাষের অনুকূল ভৌগোলিক পরিবেশ
- কফি উৎপাদনে অনুকূল ভৌগোলিক পরিবেশ ।
- মিলেটস কি বা মিলেটস কাকে বলে?অনুকূল ভৌগোলিক পরিবেশ ।