বায়ুমণ্ডল উত্তপ্ত হওয়ার পদ্ধতি
সূর্যকিরণ সরাসরি বায়ুমণ্ডলকে উত্তপ্ত করতে পারে না। বায়ুমণ্ডল কয়েকটি পদ্ধতিতে উত্তপ্ত হয়। যেমন-
১. পরিবহনঃ
পদার্থের অণুগুলি স্থান পরিবর্তন না করে যদি একটি অণু থেকে পার্শ্ববর্তী অণুতে তাপ সঞ্চালিত হয় তাকে পরিবহন পদ্ধতি বলে। যতক্ষণ না তাপের সমতা আসে ততক্ষণ এই পদ্ধতিতে তাপ সঞ্চালিত হতে থাকে।
সূর্যের তাপে প্রথমে ভূপৃষ্ঠে উত্তপ্ত হয়। উত্তপ্ত ভূপৃষ্ঠ থেকে সংলগ্ন বায়ুস্তর উত্তপ্ত হয়, সংলগ্ন বায়ুস্তর থেকে পার্শ্ববর্তী বায়ুস্তরে তাপের পরিবাহিত হয়। স্থির বায়ুতে এই প্রক্রিয়ায় তাপ সঞ্চালিত হয় বা উত্তপ্ত হয়।
২. পরিচলন পদ্ধতিঃ
সূর্যের তাপে প্রথমে ভূপৃষ্ঠ উত্তপ্ত হয়। উত্তপ্ত ভূপৃষ্ঠের সংস্পর্শে ভূপৃষ্ঠের সংলগ্ন বায়ু উত্তপ্ত ও হালকা হয়ে উপরে উঠে যায়। ফলে ভূপৃষ্ঠ সংলগ্ন অঞ্চলে শূন্যস্থানের সৃষ্টি হয়। শূন্যস্থান পূরণ করার জন্য উপরিভাগ থেকে অপেক্ষাকৃত শীতল এবং ভারী বাতাস ছুটে আসে। এই বাতাসও উষ্ণ ও হালকা হয়ে উপরে উঠে যায়। এইভাবে বায়ুমণ্ডল উত্তপ্ত হওয়ার পদ্ধতিকে পরিচলন পদ্ধতি বলে।
৩. বিকিরণ পদ্ধতিঃ
কোন মাধ্যম ছাড়া এক স্থান থেকে অন্য স্থানের তাপ সঞ্চালিত হওয়াকে বিকিরণ পদ্ধতি বলে। সূর্য এবং পৃথিবীর মাঝে এক বিশাল অংশ বায়ুশূন্য বা শূন্য মাধ্যম রয়েছে। এই শূন্য মাধ্যমের মধ্য দিয়ে সূর্যরশ্মি ক্ষুদ্রতরঙ্গ রূপে পৃথিবীতে পৌঁছায় এবং পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল এবং ভূপৃষ্ঠকে উত্তপ্ত করে।
৪. অ্যাডভেকশনঃ
উত্তপ্ত বাতাস ভূপৃষ্ঠের সমান্তরালে বা অনুভূমিকভাবে প্রবাহিত হয়ে অপেক্ষাকৃত শীতল অঞ্চলে উপস্থিত হয় এবং সেখানকার বায়ুমণ্ডলকে উত্তপ্ত করে। একে অ্যাডভেকশন বলে।
৫. তাপ শোষণ পদ্ধতিঃ
বায়ুমন্ডলে উপস্থিত জলীয়বাষ্প, ধূলিকণা, কার্বন ডাই-অক্সাইড প্রভৃতি সৌরশক্তিকে সরাসরি শোষণ করে এবং বায়ুমণ্ডলকে উত্তপ্ত করে। একে তাপ শোষণ প্রক্রিয়া বলে।
৬. লীনতাপ
জলীয়বাষ্প উপরে উঠে শীতল হয়ে ঘনীভূত হওয়ার সময় লীনতাপ পরিত্যাগ করে। এর ফলে বায়ুমণ্ডল উত্তপ্ত হয়।
এছাড়া ৭. আগ্নেয়গির ৮. উষ্ণপ্রস্রবণ ৯. তেজস্ক্রিয় পদার্থের উপস্থিতির কারণে বায়ুমণ্ডল উত্তপ্ত হয়।
- বায়ুর উষ্ণতা পরিমাপক যন্ত্রের নাম কি?
উঃ থার্মোমিটার ও থার্মোগ্রাফ।
- উষ্ণতা পরিমাপক একক কি?
উঃ ফারেনহাইট এবং সেন্ট্রিগ্রেট বা সেলসিয়াস।
- দিনের সর্বোচ্চ এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রা কখন পরিলক্ষিত হয়?
উঃ দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা পরিলক্ষিত হয় দুপুর 2 সময় এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রা পরিলক্ষিত হয় ভোর বেলায় সূর্যোদয়ের পূর্বে।
গড় তাপমাত্রা বা উষ্ণতা ( Mean temperature )
গড় তাপমাত্রা বা উষ্ণতা তিনভাবে পরিমাপ করা হয়।
গড় দৈনিক উষ্ণতা ( Mean daily temperature )
একটি দিনের সর্বোচ্চ এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রাকে যোগ করে তাকে 2 দিয়ে ভাগ করলে গড় দৈনিক উষ্ণতা পাওয়া যায়।
গড় দৈনিক উষ্ণতা = ( দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা + দিনের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ) / 2
কোন একদিনের প্রতি ঘন্টার তাপমাত্রার যোগফল কে 24 দিয়ে ভাগ করে গড় দৈনিক উষ্ণতা পাওয়া যায়।
গড় মাসিক উষ্ণতা ( Mean monthly temperature )
কোন স্থানের একটি মাসের প্রত্যেক দিনের গড় দৈনিক উষ্ণতাকে যোগ করে ওই মাসে দিন সংখ্যা দিয়ে ভাগ করলে গড় মাসিক উষ্ণতা পাওয়া যায়।
গড় বার্ষিক উষ্ণতা ( Mean annual temperature )
এক বছরের অর্থাৎ বারো মাসের গড় মাসিক উষ্ণতাকে যোগ করে তাকে দুই দিয়ে ভাগ করলে গড় বার্ষিকী উষ্ণতা পাওয়া যায়।
সঠিকভাবে গড় বার্ষিক উষ্ণতা পেতে গেলে এক বছরের প্রতিদিনের গড় উষ্ণতাকে যোগ করে সেই বছরের দিন সংখ্যা দিয়ে ভাগ করে গড় বার্ষিক উষ্ণতা পাওয়া যায়।
উষ্ণতার প্রসর ( Range of temperature )
কোন স্থানের কোন দিনের অথবা কোন বছরের সর্বোচ্চ উষ্ণতা এবং সর্বনিম্ন উচ্চতার বিয়োগফলকে ওই স্থানের উষ্ণতার প্রসর বলে।
দুই ধরনের উষ্ণতার প্রসর দেখা যায়।
দৈনিক উষ্ণতার প্রসর ( Daily range of temperature )
কোন স্থানের কোন দিনের সর্বোচ্চ উষ্ণতা বা গরিষ্ঠ উষ্ণতা থেকে সেই দিনের সর্বনিম্ন উচ্চতা বা লঘিষ্ঠ উষ্ণতা বিয়োগ করলে যে বিয়োগফল পাওয়া যায় তাকে দৈনিক উষ্ণতার প্রসর বলে।
দৈনিক উষ্ণতার প্রসর = ( দিনের সর্বোচ্চ উষ্ণতা বা গরিষ্ঠ উষ্ণতা - দিনের সর্বনিম্ন উচ্চতা বা লঘিষ্ঠ উষ্ণতা )
বার্ষিক উষ্ণতার প্রসর ( Annual range of temperature )
কোন স্থানের নির্দিষ্ট বছরের উষ্ণতম এবং শীতলতম মাসের গড় উষ্ণতার বিয়োগফলকে সেই স্থানের গড় বার্ষিক উষ্ণতার প্রসর বলে।
বার্ষিক উষ্ণতার প্রসর = ( উষ্ণতম মাসের গড় উষ্ণতা - শীতলতম মাসের গড় উষ্ণতা )