Type Here to Get Search Results !

মৌসুমী বায়ু কাকে বলে?উৎপত্তি। দেশিয় অবস্থান। মৌসুমী জলবায়ু অঞ্চলের বৈশিষ্ট্য।

মৌসুমী বায়ু কাকে বলে? 

           বছরের বিভিন্ন ঋতুতে পরস্পর বিপরীত দিক থেকে প্রবাহিত সাময়িক বায়ুকে মৌসুমী বায়ু বলা হয়।


 মৌসুমী শব্দের উৎপত্তি 

           মৌসুমী কথাটি আরবি শব্দ "মৌসিন" বা মালয় শব্দ "মহসিন" থেকে এসেছে। যার অর্থ "ঋতু"। নিরক্ষরেখার উভয়দিকে 10° থেকে 24° অক্ষাংশের মধ্যে মৌসুমী জলবায়ু পরিলক্ষিত হয়।

 

দেশিয় অবস্থানঃ 

            দক্ষিণ-পূর্ব এবং পূর্ব এশিয়ার ভারত, বাংলাদেশ, শ্রীলংকা, মায়ানমার, ইন্দোনেশিয়া প্রভৃতি দেশে।এছাড়া আফ্রিকার দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলের গিনি, সিয়েরালিওন প্রভৃতি দেশে। লাতিন আমেরিকার ভেনিজুয়েলা, সুরিনাম প্রভৃতি দেশে দেখা যায়।


 মৌসুমী জলবায়ু অঞ্চলের বৈশিষ্ট্যঃ 


  উষ্ণতা সংক্রান্ত বৈশিষ্ট্যঃ

           ১. মৌসুমী জলবায়ু অঞ্চলে বাৎসরিক গড় উচ্চতা পরিমাণ থাকে প্রায় 24° সেলসিয়াস।

           ২. এখানে গ্রীষ্মকালীন গড় উষ্ণতা থাকে 27° থেকে 32° সেলসিয়াস।

           ৩. এখানে শীতকালীন উষ্ণতা 10° থেকে 22° সেলসিয়াস।

           ৪. বাৎসরিক গড় উষ্ণতার প্রসর 3° থেকে 11° সেলসিয়াস।

           ৫. স্থানভেদে দৈনিক উষ্ণতার প্রসর পরিবর্তিত হয়।

          ৬. পার্বত্য অঞ্চলে উষ্ণতা অনেক সময় হিমাঙ্কের নিচে নেমে যায়। 


   বায়ুচাপ এবং বায়ুপ্রবাহ সংক্রান্ত বৈশিষ্ট্যঃ

        ১. গ্রীষ্মকালে সূর্যরশ্মি লম্বভাবে পতিত হওয়ার জন্য স্থলভাগের উপর নিম্নচাপ সৃষ্টি হয়।বাতাসের চাপ থাকে 999  মিলিবার থেকে 1008 মিলিবার।

       ২. শীতকালে সূর্যরশ্মি তীর্যকভাবে পতিত হওয়ায় স্থলভাগে উচ্চচাপ বিরাজ করে। বায়ুচাপের পরিমাণ 1014-1026 মিলিবার। 

       ৩. গ্রীষ্মকালে অর্থাৎ মে-জুন মাসে মৌসুমী জলবায়ু অঞ্চলের কোথাও কোথাও উষ্ণ জলবায়ু, যেমন- লু, আধি দেখা যায়।

       ৪. গ্রীষ্মকালে স্থলভাগের নিম্নচাপ কেন্দ্রের দিকে সমুদ্রের উপর থেকে আর্দ্র বায়ু প্রবাহিত হয়। দক্ষিণ ও পূর্ব এশিয়ায় একে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু বলে।

        ৫. শীতকালে স্থলভাগের উচ্চচাপ থেকে বাতাস সমুদ্রের নিম্নচাপের দিকে প্রবাহিত হয়। এই বাতাস শুষ্ক এবং শীতল প্রকৃতির হয়। ভারতীয় উপমহাদেশে এই বাতাস উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ু নামে পরিচিত। 

বৃষ্টিপাত সংক্রান্ত বৈশিষ্ট্যঃ 

       ১. গ্রীষ্মকালে মৌসুমী জলবায়ু অঞ্চলে স্থানীয়ভাবে কোথাও কোথাও বিকেলের দিকে বজ্রবিদ্যুৎ সহ ঝড় বৃষ্টি হয় একে পূর্বভারতে কালবৈশাখী, দক্ষিণ ভারতে আম্রবৃষ্টি বলে। এতে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ খুব বেশি হয় না।

        ২. বর্ষাকালে সমুদ্র থেকে আগত আর্দ্র বায়ু (যেমন- দক্ষিণ ও পূর্ব এশিয়ায় দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু) প্রবাহিত হয়। ফলে বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাতের 80 থেকে 90 শতাংশ বৃষ্টিপাত এই সময় হয়। মোট বৃষ্টিপাতের পরিমাণ 100 থেকে 150 সেন্টিমিটার।

        ৩. বৃষ্টিপাতের অসম বন্টন মৌসুমী জলবায়ুর একটি অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য। যেমন- মৌসিনরাম ( পৃথিবীর সর্বাধিক বৃষ্টিপাত হয়) যার বৃষ্টিপাতের পরিমাণ 1392 সেন্টিমিটার। আবার পশ্চিমঘাট পর্বতের পূর্ব ঢালে বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ 50 সেন্টিমিটার। 

        ৪. বৃষ্টিপাতের সময় এবং পরিমাণে অনিশ্চয়তা রয়েছে।

        ৫. মৌসুমী বায়ুর খামখেয়ালীপনার জন্য অতি বৃষ্টিপাত জনিত বন্যা এবং স্বল্প বৃষ্টিপাতের জন্য খরার সৃষ্টি হয়। 

       ৬. শরৎকালীন বৃষ্টিপাত সাধারণত সমুদ্রের উপর সৃষ্ট ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাতের (যেমন- সাইক্লোন, টাইফুন প্রভৃতি ) জন্য হয়।

      ৭. শীতকালে কোথাও কোথাও পশ্চিমীঝঞ্ঝার জন্য সামান্য বৃষ্টিপাত (10-40 সেমি) হয়। 

      ৮. মৌসুমি বৃষ্টিপাতের অধিকাংশই শৈলোৎক্ষেপ প্রকৃতির হলেও পরিচলন বৃষ্টিপাত এবং ঘূর্ণবাত জনিত বৃষ্টিপাত এই অঞ্চলের নানা জায়গায় লক্ষ্য করা যায়। 


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Top Post Ad

Below Post Ad

Ads Area