জেট বায়ু কি?
সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে 10 থেকে 12 কিলোমিটার উচ্চতায় অর্থাৎ ট্রপোস্ফিয়ারের উর্ধ্বসীমায় পশ্চিম থেকে পূর্বে প্রবাহিত প্রবল গতিসম্পন্ন বাতাসকে জেট বায়ু বলে।জেট বায়ু আঁকাবাঁকা পথে প্রবাহিত একপ্রকার জিওস্ট্রপিক বায়ু।
জেট বায়ু প্রবাহ কে আবিষ্কার করেন?
জেট বায়ুপ্রবাহ আবিষ্কার করেন সি.জি. রসবি।
জেট বায়ু কোন স্তরে দেখা যায়?
ট্রপোস্ফিয়ার স্তরের উপরিভাগে দেখা যায়। অন্যভাবে বলা যায় ট্রপোপজের সামান্য নিচে জেট বায়ু দেখা যায়।
জেট বায়ুর উৎপত্তি
ঊর্ধ্ব বায়ুতে ঘর্ষণজনিত বাধার থাকেনা। এই অংশে উচ্চচাপ এবং নিম্নচাপের অবস্থানের জন্য উচ্চচাপ অঞ্চল থেকে নিম্নচাপের দিকে বাতাস প্রবাহিত হয়। বায়ু প্রবাহিত হওয়ার সময় বায়ুচাপের ঢাল এবং কোরিওলিস বল পরস্পর বিপরীতমুখী হওয়ার ফলে সমচাপ রেখার সমান্তরালে পশ্চিম থেকে পূর্বে বায়ু প্রবাহিত হয় একে জিওস্ট্রপিক বায়ু বলে। এই বায়ু জেট বায়ু নামে পরিচিত।
উষ্ণ ক্রান্তীয় বায়ু এবং শীতল মেরু বায়ু পরস্পর যেখানে মিলিত হয় সেই পরিবর্তনশীল অঞ্চলে জেট বায়ু প্রবাহিত হয়। এছাড়া উপক্রান্তীয় উচ্চচাপ এবং নিরক্ষীয় নিম্নচাপেরর মাঝে পূর্ব থেকে পশ্চিমে একটি জেট বায়ু প্রবাহিত হয় ।
জেট বায়ুর বৈশিষ্ট্য
1. জেট বায়ুস্রোত সমুদ্রতল থেকে 12 কিলোমিটার উচ্চতায় প্রবাহিত হয়।
2. জেট বায়ু সংকীর্ণ অংশে আঁকাবাঁকা সর্পিল পথে প্রবাহিত হয়।
3. জেট বায়ু পশ্চিম থেকে পূর্বে প্রবাহিত হয়। শুধুমাত্র ক্রান্তীয় জেট বায়ু পূর্ব থেকে পশ্চিমে প্রবাহিত হয়।
4. জেট বায়ু প্রবাহের গতি বেশি হয়, প্রায় 100 থেকে 500 কিলোমিটারের মধ্যে হয়।
5. জেট বায়ুর দৈর্ঘ্য কয়েক হাজার কিলোমিটার হয়। এর প্রস্থ কয়েক শত কিলোমিটার হয় এবং এক থেকে দুই কিলোমিটার পুরু হয়।
6.শীতকালে বাতাসের বেগ ক্রমশ বেশি হয় এবং এইসময় নিরক্ষরেখা দিকে কিছুটা সরে যায়।
7. এই বাতাস উত্তর গোলার্ধে 30° থেকে 60° অক্ষরেখার মধ্যে অর্থাৎ মধ্য অক্ষাংশে অবস্থান করে।
8. মেরু জেটবায়ু অনেক বেশি শক্তিশালী হয়।
জেট বায়ুর প্রকারভেদ
জেট বায়ু তিনভাগে বিভক্ত। যেমন- মেরু জেটবায়ু, উপক্রান্তীয় জেটবায়ু এবং ক্রান্তীয় জেট বায়ু।
1. মেরুদেশীয় জেটবায়ু
30° থেকে 60 ডিগ্রি অক্ষাংশের মধ্যে উভয় গোলার্ধে এই বায়ু দেখা যায়। উষ্ণ উপক্রান্তীয় বায়ু এবং শীতল মেরু বায়ু যেখানে মিলিত হয় সেখানে সীমান্ত বরাবর জেট বায়ুর উৎপত্তি হয়। এই বায়ু পশ্চিম থেকে পূর্বে প্রবাহিত হয়। সব ধরনের জেট বায়ুর চেয়ে মেরুদেশীয় জেট বায়ু সবচেয়ে শক্তিশালী হয়।
2. উপক্রান্তীয় জেটবায়ু
উপক্রান্তীয় অঞ্চলে প্রায় 25° ডিগ্রি থেকে 30° অক্ষরেখা বরাবর ঊর্ধ্ব ট্রপোস্ফিয়ারে উপক্রান্তীয় জেটবায়ু প্রবাহিত হয়। মেরুদেশীয় জেটবায়ুর তুলনায় উপক্রান্তীয় জেট বায়ুর উচ্চতা অনেক বেশি, কিন্তু বেশ দুর্বল। এই বায়ু হ্যাডলি এবং ফেরেল কোষকে পৃথক করে।
3. ক্রান্তীয় জেটবায়ু
উত্তর গোলার্ধের গ্রীষ্মকালে আফ্রিকা ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ঊর্ধ্ব বায়ুমন্ডলে পূর্ব থেকে পশ্চিম দিকে পূবালী জেট স্ট্রিম প্রবাহিত হয়। এটি যথেষ্ট দুর্বল বায়ু স্রোত এবং প্রধানত গ্রীষ্মকালে পরিলক্ষিত হয়।
জেট বায়ুর প্রভাব
পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল সংক্রান্ত অন্যান্য বিষয়ের উপর জেট বায়ুর সরাসরি প্রভাব রয়েছে যেমন
১. ঘূর্ণবাত এবং প্রতিপ ঘূর্ণবাতের সৃষ্টিঃ
ঘূর্ণবাত এবং প্রতীপ ঘূর্ণবাতের চরিত্র জেটবায়ু নিয়ন্ত্রণ করে।
২. নাতিশীতোষ্ণ ঘূর্ণবাতের সৃষ্টিঃ
নাতিশীতোষ্ণ ঘূর্ণবাত যে অঞ্চলে সৃষ্টি হয় সেই অঞ্চলের উপর জেট বায়ুর আবির্ভাব হলে নাতিশীতোষ্ণ ঘূর্ণবাত শক্তিশালী হয়।
৩. ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাতের উৎপত্তিঃ
ঊর্ধ্ব ট্রপোস্ফিয়ারের বায়ু কেন্দ্রবিমুখ বা কেন্দ্রবহির্ভূত হলে নিম্ন ট্রপোস্ফিয়ারের বায়ু কেন্দ্রমুখী হয় অর্থাৎ বায়ু কেন্দ্রের দিকে প্রবাহিত হয়। ফলে ঝড় এবং বৃষ্টির পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।
৪. উলম্বভাবে বায়ু চলাচলঃ
জেট বায়ু কোথাও কেন্দ্রমুখী হয় এবং কোথায় কেন্দ্রবিমুখ হয়। ফলে ভূপৃষ্ঠ সংলগ্ন বায়ু যথাক্রমে কেন্দ্রবিমুখ হয় এবং কেন্দ্রমুখী হয়। ফলে বায়ু উলম্বভাবে চলাচল সংঘটিত হয়।
৫. উষ্ণতার ভারসাম্যঃ
জেটবায়ুর প্রভাবে বিভিন্ন অক্ষাশের বায়ুর মধ্যে উষ্ণতার ভারসাম্য সৃষ্টি হয়।
৬. বিমান চলাচলে বাধাঃ
ট্রপোস্ফিয়ারের কোথাও কোথাও জেট বায়ু প্রবাহের জন্য বিমান চলাচলে বাধা সৃষ্টি হয়।