১. জলবায়ু অঞ্চল কি?
জলবায়ু অঞ্চল বলতে বোঝায় সমগোত্রীয় প্রকৃতির জলবায়ুর উপাদান বিশিষ্ট এক বা একাধিক অঞ্চল অর্থাৎ ভূপৃষ্ঠের যে সকল স্থানে আবহাওয়া ও জলবায়ুর উপাদানগুলি একই প্রকৃতির হয়, সেই সকল স্থানকে জলবায়ু অঞ্চল বলে। আবহাওয়াবিদ ট্রেওয়ারথার মতে- "ভূপৃষ্ঠে কোন স্থানে জলবায়ুর প্রধান উপাদানসমূহ এবং জলবায়ুর বৈশিষ্ট্য সামঞ্জস্যপূর্ণ ও সমলক্ষণ বিশিষ্ট হলে সেই স্থানকে জলবায়ু অঞ্চল বলে"।
২. নিরক্ষীয় জলবায়ুকে ক্রান্তীয় বৃষ্টি অরণ্য জলবায়ু বলে কেন?
নিরক্ষীয় জলবায়ু কেবলমাত্র নিরক্ষরেখা বরাবর সীমিত নয়। নিরক্ষরেখার উভয় দিকে 5° থেকে 10° অক্ষাংশ বরাবর বিস্তৃত। অত্যাধিক উষ্ণ এবং বৃষ্টিপাতের জন্য এখানে চিরসবুজ বনভূমি গড়ে উঠেছে। নিরক্ষীয় জলবায়ুর প্রভাব নিরক্ষীয় অঞ্চল ছাড়িয়ে ক্রান্তীয় অঞ্চল পর্যন্ত সম্প্রসারিত হয়। এর ফলে নিরক্ষীয় অঞ্চলের বনভূমির মত ক্রান্তীয় অঞ্চলে প্রায় একই ধরনের গাছের সমাবেশ দেখা যায়।এই কারনে নিরক্ষীয় জলবায়ুকে ক্রান্তীয় বৃষ্টি অরণ্য জলবায়ু বলে।
৩. নিরক্ষীয় জলবায়ু অঞ্চলে ঋতু পরিবর্তন দেখা যায় না কেন?
নিরক্ষীয় অঞ্চলে সূর্যরশ্মি সারাবছর লম্বভাবে কিরণ দেওয়ায় এবং দিন রাত্রির দৈর্ঘ্য এর বিশেষ পার্থক্য না থাকায় উষ্ণতার পরিমাণ সারা বছর প্রায় একই রকম থাকে। সারাবছর উষ্ণতার তারতম্য থাকে 2° থেকে 3° সেলসিয়াস। উষ্ণতার তারতম্য না হওয়ার কারণে এখানে ঋতু পরিবর্তন দেখা যায় না। তাই নিরক্ষীয় অঞ্চলে একটিমাত্র ঋতু উষ্ণ আর্দ্র ঋতু লক্ষ করা যায়।
৪. নিরক্ষীয় অঞ্চলের শীতকাল কি?
নিরক্ষীয় অঞ্চলে বার্ষিক উষ্ণতার প্রসর খুব কম হলেও দৈনিক উষ্ণতার প্রসর খুব বেশি অর্থাৎ 9° থেকে 10° সেলসিয়াস। অপরাহ্ণের সময় বা বিকালবেলায় তাপমাত্রা 29° থেকে 34° সেলসিয়াস হলেও রাত্রের তাপমাত্রা অনেক কম হওয়ায় এখানে অধিবাসীরা রাত্রে শীত অনুভব করে। সেজন্য বলা হয় "Night is the winter of the tropics" ।
৫. নিরক্ষীয় অঞ্চলে রাত্রিবেলা তাপমাত্রা হ্রাস পায় কেন?
প্রায় প্রতিদিন বিকেলে বৃষ্টির পরে রাত্রিবেলা আকাশ অপেক্ষাকৃত মেঘমুক্ত থাকে। মেঘমুক্ত আকাশ ভূপৃষ্ঠ থেকে তাপ বিকিরণে সাহায্য করে। এই কারণে নিরক্ষীয় অঞ্চলে রাত্রিবেলা তাপমাত্রা হ্রাস পায়।
৬. মৌসুমী বায়ুকে ঋতুভিত্তিক বায়ু বলা হয় কেন?
মৌসুমী নামটির বুৎপত্তিগত অর্থ হল 'ঋতু', অর্থাৎ গ্রীষ্ম ঋতুতে উত্তর গোলার্ধে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি এবং দক্ষিণ গোলার্ধে দক্ষিণ-পূর্ব মৌসুমী বায়ু অন্যদিকে শীত ঋতুতে উত্তর গোলার্ধে উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ু ও দক্ষিণ গোলার্ধে উত্তর-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু প্রবাহিত হয়। ঋতুভেদে বিপরীতধর্মী মৌসুমী বায়ুর কার্যকারিতা লক্ষ্য করা যায় বলে মৌসুমী বায়ুকে ঋতুভিত্তিক বায়ু বলে বলা হয়।
৭. মৌসুমী বায়ুর সাময়িক বিরতি বলতে কী বোঝ?
মৌসুমী বায়ু এক ধরনের ঋতুভিত্তিক বায়ু। মৌসুমী জলবায়ু অঞ্চলে মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে বৃষ্টিপাত সংঘটিত হলেও তা নিয়মিত ভাবে হয় না। সঠিক সময়ে এলেও কখনও কখনও বৃষ্টিপাত একনাগাড়ে না হয়ে সাময়িকভাবে বন্ধ থাকে। মৌসুমি বৃষ্টিপাতের এই অবকাশ পর্বকে মৌসুমী বায়ুর সাময়িক বিরতি বলে।
৮. মোনেক্স (MONEX) কি?
মোনেক্স কথাটির সম্পূর্ণ নাম হল মনসুন এক্সপেরিমেন্ট ( Monsoon Experiment) । এটি উপগ্রহ এবং আধুনিক প্রযুক্তির ভিত্তিতে মৌসুমী গবেষণা সংক্রান্ত একটি কর্মসূচি। এই কার্যক্রম বায়ুমণ্ডল গবেষণা প্রকল্পের অধীনে পরিচালিত হয়।
৯. ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু অঞ্চলে শীতকালে বৃষ্টি হয় কেন?
উষ্ণ গ্রীষ্মকাল এবং আর্দ্র শীতকাল ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ুর প্রধান বৈশিষ্ট্য। সূর্যের দক্ষিণায়নের সময় উপক্রান্তীয় উচ্চচাপ বলয় ক্রমশ দক্ষিণে সরে যায়। এর ফলে ভূমধ্যসাগরের তীরবর্তী অঞ্চল পশ্চিমা বায়ুর প্রভাবাধীন হয়। ভূমধ্যসাগর অঞ্চল থেকে আগত পশ্চিমা বায়ু এবং ভূমধ্য সাগরে সৃষ্টি হওয়া নাতিশীতোষ্ণ ঘূর্ণবাত এর যৌথ প্রয়াসে ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু অঞ্চলে শীতকালে বৃষ্টিপাত হয়।
১০. ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু পর্যটকদের আকৃষ্ট করে কেন?
ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু অঞ্চলে শুষ্ক গ্রীষ্মকাল (নাতিতীব্র উষ্ণতা) এবং আর্দ্র শীতকাল (নাতিতীব্র শীত) এবং সারা বছর ঝলমলে আবহাওয়া বিরাজ করে। এইরূপ অনুকূল জলবায়ু পর্যটকদের আকৃষ্ট করে।