১. সমুদ্র ভৃগু (Sea Cliff)
ইংরেজি "Cliff" এর বাংলা প্রতিশব্দ 'ভৃগু' অর্থ "উঁচু খাড়া পাড়" বা পাহাড়ের খাড়া দিক। তরঙ্গের আঘাতে সমুদ্র উপকূলে যে খাড়া পাড় তৈরি হয় তাকে সমুদ্র ভৃগু বলে।
সমুদ্র তরঙ্গের আঘাতের সমুদ্রমূখী শিলাস্তরের খাঁজের সৃষ্টি হয়। যতই দিন যেতে থাকে খাঁজের নিম্নপ্রান্ত ক্ষয়প্রাপ্ত হয় এবং খাঁজের খাড়া ঢালের পশ্চাদপসারণ ঘটে। এইভাবে খাড়া ঢাল বিশিষ্ট ভৃগুর সৃষ্টি হয়।
স্তরীভূত শিলার নতি সমুদ্রের বিপ রীত দিকে হলে ভৃগু মসৃণ হয় এবং নতি সমুদ্রের দিকে হলে ভৃগু অমসৃণ হয়। উপকূলভাগ কঠিন ও নিরেট শিলায় গঠিত হলে ভৃগু ক্ষয় প্রতিরোধী হয়। যেমন- ভারতের পূর্ব উপকূলের ডলফিন নোজ, গোয়ার অঞ্জনা তটভূমির সমুদ্র ভৃগু।
২. তরঙ্গ কর্তিত মঞ্চ (Wave cut Bench)
ক্রমাগত সমুদ্র তরঙ্গের আঘাতের উপকূলের উঁচু খাড়া পাড় বা ভৃগু গুলো পিছু হটতে থাকলে ভৃগুর সামনে মঞ্চের মত এবং সমুদ্রের দিকে ঢাল বিশিষ্ট যে সমতল পৃষ্ঠের সৃষ্টি হয় তাকে তরঙ্গকর্তিত মঞ্চ বলে। যেমন- উত্তর কঙ্কন উপকূলে রাভাস নদীর দক্ষিনে 8 কিলোমিটার লম্বা এবং প্রায় 3 থেকে 4 মিটার উঁচু সমুদ্রমঞ্চ গড়ে উঠেছে। অবস্থান অনুযায়ী তরঙ্গ কর্তিত মঞ্চ তিন প্রকার। যথা- i. উচ্চ জোয়ার মঞ্চ ii. নিম্ন জোয়ার মঞ্চ এবং iii. জোয়ার মধ্যবর্তী মঞ্চ'।
৩. ব্লো হোল (Blow-hole)
সমুদ্র ভৃগুতে দুর্বল শিলা থাকলে তরঙ্গের আঘাতে সেখানে একটি গুহার সৃষ্টি হয়। সম্মুখ তরঙ্গের আঘাতে গুহার মধ্যে বায়ু সংকুচিত হয় এবং তরঙ্গ ফিরে যাবার সময় বায়ু প্রসারিত হওয়ায় গুহার দেওয়ালে প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি হয়। এর ফলে শিলাগাত্র শিথিল হয়। তখন গুহাটি ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে। কালক্রমে গুহার ছাদ ধ্বসে গিয়ে গর্তের সৃষ্টি হয়। এই গুহায় তরঙ্গ আঘাত করলে কিছু জল গর্ত দিয়ে ভূপৃষ্ঠে বেরিয়ে আসে। এই গুহা মুখটিকে বলে ব্লো হোল। স্কটল্যান্ডে একে বলে গ্লুপ (Gloup)।
৪. জিও (Geo)
ক্ষয়কার্য ক্রমাগত চলতে থাকলে ব্লো হোলের আয়তন বাড়ে এবং কালক্রমে গুহার ছাদ সম্পূর্ণ ধ্বসে গিয়ে একটি দীর্ঘ ও সংকীর্ণ খাড়ির সৃষ্টি হয়। স্কটল্যান্ডে এই ধরনের খাড়িকে বলে জিও(Geo)। যেমন- অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের উপকূলে জিও দেখা যায়।
৫. কোভ( Cove), বাইট (Bight) এবং উপসাগর (Bay)
সমুদ্রতরঙ্গের ক্রমাগত ক্ষয় কার্যের ফলে উপকূল ভাগ ক্রমশ পিছিয়ে যেতে থাকে। উপকূলের কোমল শিলা তরঙ্গের ক্রমাগত আঘাতে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে বৃত্তচাপের ন্যায় খাড়ির সৃষ্টি করে। একে কোভ বলে।
কম বাঁকযুক্ত দীর্ঘাকৃতি সাগরতটকে বাইট বলে।
উপকূল রেখার বাঁক খুব বেশি হলে তিন দিকে স্থল দ্বারা বেষ্টিত সমুদ্রের সৃষ্টি হয়। একে উপসাগর বলে। যেমন- গুজরাটের কাম্বে উপসাগর। ভারতের পশ্চিম উপকূলে অসংখ্য বাইট বা সমুদ্র বাঁক দেখা যায়।
৬. অগ্রভূমি (Head lnad)
সমুদ্র তরঙ্গের ক্ষয়কার্যের ফলে উপকূলে রেখা ক্রমশ পশ্চাৎ দিকে অগ্রসর হয়। এই পশ্চাদগামী উপকূলের যেসব কঠিন শিলাগঠিত অংশ তটভূমি থেকে সমুদ্রের দিকে প্রসারিত বা অভিক্ষিপ্ত থাকে তাকে মস্তক ভূমি বা অগ্র ভূমি বলে। যেমন ওয়াল্টেয়ারের ডলফিন নোজ। অগ্রভূমির সঙ্গে সম্পর্কিত ভূমিরূপ গুলি হল-
i. সমুদ্র গুহা (Sea Cave)
সমুদ্রে প্রসারিত অগ্রভূমির দুদিকে ক্রমাগত তরঙ্গের আঘাতে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে গহবর সৃষ্টি হয়। উভয় দিকের গহবর পরস্পর মিলিত হলে সমুদ্র গুহার সৃষ্টি করে। যেমন- স্কটল্যান্ড এর স্টাফা দ্বীপের ফিঙ্গলজ কেভ।
ii. স্বাভাবিক খিলান (Natural arch)
সমুদ্রের দিকে প্রসারিত অগ্রভূমির উভয় দিকের গহবর প্রসারিত হয়ে পরস্পর যুক্ত হলে মনে হয় যেন একটি সেতু দুটি পৃথক শিলা দেহকে যুক্ত করেছে। এইরকম সেতুকে স্বাভাবিক সেতু বলে। যেমন- অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়া প্রদেশের ডেভন, টরকে প্রভৃতি স্থানে সমুদ্র খিলান আছে।
iii. স্ট্যাক ( Stack)
ক্রমাগত ক্ষয়কার্যের ফলে যখন খিলান ধসে পড়ে তখন অগ্র ভূমির সামনের অংশ উপকূল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে সমুদ্রের উপর স্তম্ভের আকারে দাঁড়িয়ে থাকে। একে স্ট্যাক বলে। গোয়ার সমুদ্রতটে এইরকম স্ট্যাক দেখা যায়।
iv. স্ট্যাম্প ( Stamp)
সমুদ্র তরঙ্গ সমুদ্রের জলতল বরাবর স্ট্যাককে ক্রমাগত ক্ষয় করতে থাকে। ফলে স্ট্যাকের জলের উপরের অংশ ধ্বসে যায়। স্টাকের অবশিষ্টাংশ সমুদ্রপৃষ্ঠের সমান উচ্চতায় বা তার নিচে অবস্থান করে। একে স্ট্যাম্প বলে। গোয়ার সমুদ্র উপকূলে স্ট্যাম্প দেখা যায়।