খাদ্যশস্য হিসেবে ধানের পরেই গমের স্থান। পশ্চিম ভারতের একটি বড় অংশের মানুষ গমকে প্রধান খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে। ভারত গম উৎপাদনে পৃথিবীতে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে। ভারতের গম উৎপাদনের অনুকূল ভৌগোলিক পরিবেশ নিম্নে আলোচনা করা হল-
ক) গম উৎপাদনের অনুকূল ভৌগোলিক পরিবেশ
গম উৎপাদনের অনুকূল ভৌগোলিক পরিবেশকে দুটি ভাগে ভাগ করে আলোচনা করা যায়। যথা- A) অনুকূল প্রাকৃতিক পরিবেশ এবং B) অনুকূল অর্থনৈতিক পরিবেশ
A) অনুকূল প্রাকৃতিক পরিবেশ
1. জলবায়ু
গম নাতিশীতোষ্ণ এবং উপক্রান্তীয় জলবায়ু অঞ্চলের ফসল। গম চাষ করতে গেলে উষ্ণতা এবং বৃষ্টিপাত বেশি প্রয়োজন হয় না। এই কারণে শীতকালে ভারতে যে নাতিশীতোষ্ণ পরিবেশের সৃষ্টি হয় তখনই রবি শস্য হিসেবে গমের চাষ করা হয়।
১. উষ্ণতা
গমের বীজের অঙ্কুরোদগম এবং চারা বৃদ্ধির সময় 15° থেকে 16° সেলসিয়াস উষ্ণতায় প্রয়োজন হয়। গম পাকার সময় 18° থেকে 20° সেলসিয়াস উষ্ণতায় প্রয়োজন। 6° সেলসিয়াস উষ্ণতায় কম উষ্ণতা গম চাষে ক্ষতি করে। এছাড়া দ্রুত উষ্ণতা বৃদ্ধি গমের পক্ষে ক্ষতিকর।
২. বৃষ্টিপাত
গমের বীজের অঙ্কুরোদগম এবং চারা বৃদ্ধির সময় কমপক্ষে 50 সেন্টিমিটার বৃষ্টিপাতের প্রয়োজন হয়। গড়ে 50 সেন্টিমিটার থেকে 100 সেন্টিমিটার বৃষ্টিপাত যুক্ত অঞ্চলে গম চাষ ভালো হয়। 100 সেন্টিমিটারের অধিক বৃষ্টিপাত এবং একনাগাড়ে অনেকদিন ধরে বৃষ্টিপাত গম চাষে পক্ষে ক্ষতিকর।50 সেন্টিমিটারের কম বৃষ্টিপাত যুক্ত অঞ্চলে জলসেচের মাধ্যমে গমের চাষ করা হয়।
৩. আর্দ্রতা
বীজের অঙ্কুরোদগমের সময় আর্দ্র শীতল জলবায়ু প্রয়োজন। গাছের বৃদ্ধির সময় শুষ্ক আবহাওয়া, গমের পুষ্টির সময় কিছুটা আর্দ্র অবস্থা এবং ফসল কাটার সময় শুষ্ক আবহাওয়ার প্রয়োজন।
৪. কুয়াশা ও শিশির
ফল পাকার সময় কুয়াশা এবং শিশির গমের ফলন বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
৫. তুহিন
তুহিন গম চাষের পক্ষে ক্ষতিকর। গম উৎপাদিত অঞ্চলে কমপক্ষে 110 টি তুহিনমুক্ত দিনের প্রয়োজন।
2. মৃত্তিকা
বিভিন্ন প্রকার মাটিতে গম চাষ হয়ে থাকে। মূলত উর্বর দোআঁশ মাটি, এঁটেল, দো-আঁশ মাটিতে গমের চাষ ভালো হয়। এছাড়া দক্ষিণাত্যের কালো মাটিতে গমের উৎপাদন ভাল হয়।
3. ভূমি বা ভূ-প্রকৃতি
জমিতে জল দাঁড়িয়ে থাকলে গম চাষে ক্ষতি হয়। মৃদু ঢালযুক্ত উত্তম জলনিকাশি ব্যবস্থা যুক্ত সমতল ভূমিতে গম চাষ ভালো হয়।
B) অনুকূল অর্থনৈতিক পরিবেশ
4. শ্রমিক
ধানের মত গম চাষের ক্ষেত্রে অধিক শ্রমিকের প্রয়োজন হয় না। তবে জমিকর্ষণ, বীজবপন, সার প্রয়োগ, আগাছা নির্মূল, কাটাই এবং মাড়াইয়ের জন্য সুলভ ও দক্ষ শ্রমিকের প্রয়োজন হয়।
5. জলসেচ
50 সেন্টিমিটার কম বৃষ্টিপাত যুক্ত অঞ্চলে জলসেচের সাহায্যে গমের চাষ করা হয়। বীজবপনের তিন সপ্তাহ পরে, ছয় সপ্তাহ পরে, গমের শীষ বেরোনোর সময় এবং দানা পুষ্ট হওয়ার সময় জল সেচের প্রয়োজন হয়।
এছাড়া 6. উন্নত বীজ 7. রাসায়নিক সার 8. কীটনাশক প্রয়োগ 9. উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা 9. মূলধনের যোগান প্রভৃতির মাধ্যমে গমকে বাণিজ্যিক ফসলের পরিণত করা যায়।
খ) ভারতের গম চাষের সমস্যা
১. ভারতে হেক্টর প্রতি গমের উৎপাদন কম।
২. জলসেচের মাধ্যমে জমিতে লবনতা পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
৩. আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি ব্যবহারের অসুবিধা।
৪. উৎপাদিত গমের গুনগতমান অতটা উন্নত নয়।
৫. সঠিকভাবে গম সংরক্ষণের অভাব।
৬. গম উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য গৃহীত সবুজ বিপ্লবের প্রভাব পশ্চিম ভারতে সীমাবদ্ধ।
৭. আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার কম।
গ) গমচাষের সমস্যা সমাধানে গৃহীত ব্যবস্থা
১. উচ্চ ফলনশীল বীজ, কীটনাশক ও সারের ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে।
২. সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে গম কেনাবেচা করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
৩. নতুন নতুন গম সংরক্ষণাগার তৈরি করা হচ্ছে।
৪. উন্নত যন্ত্রপাতির ব্যবহার বৃদ্ধি করা হচ্ছে।
৫. বিভিন্ন পরিকল্পনার মাধ্যমে গম উৎপাদন বৃদ্ধির পরিকল্পনা গ্রহণ করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন
- ধান উৎপাদনের অনুকূল ভৌগোলিক পরিবেশ
- কার্পাস বা তুলা চাষের অনুকূল ভৌগোলিক পরিবেশ
- চা চাষের অনুকূল ভৌগোলিক পরিবেশ