কৃষিজ ফসল উৎপাদনে ভারত পৃথিবীতে উল্লেখযোগ্য স্থান অধিকার করলেও ভারতীয় কৃষির কিছু সমস্যা রয়েছে। যেমন--
ভারতীয় কৃষির সমস্যা
1. ক্ষুদ্র কৃষিজম ও মাথাপিছু জমির আয়তন কমঃ
ভারতে মাথাপিছু জমির পরিমাণ এবং কৃষি জমির আয়তন উন্নত দেশের তুলনায় অনেক কম। জমির আয়তন ক্ষুদ্র হওয়ায় এবং জমি ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকায় কৃষি যন্ত্রপাতি ব্যবহার করতে অসুবিধা হয়।
2. ভূমি সংস্কারঃ
কয়েকটি রাজ্য বাদ দিয়ে ভারতের বাকি রাজ্যগুলিতে ভূমিসংস্কার কার্যকর না হওয়ায় জমিদারি প্রথার বিলোপ হয়নি।
3. মৌসুমী বৃষ্টির উপর নির্ভরশীলঃ
ভারতের কৃষি উৎপাদন মৌসুমে বৃষ্টিপাতের ওপর অত্যধিক নির্ভরশীল। বৃষ্টিপাতের খামখেয়ালীপনা, অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টির কারণে ফসল উৎপাদন ব্যাহত হয়।
4. জলসেচের সমস্যাঃ
ভারতের প্রায় 65 শতাংশ জমিতে জলসেচের ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়নি। ফলে অধিকাংশ অঞ্চলের কৃষিজমিগুলি বহুফসলি নয়।
5. জমির মালিকানাঃ
ভারতের অধিকাংশ কৃষিশ্রমিক ভূমিহীন। তারা অন্যের জমিতে চাষ করে। নিজের জমি না থাকায় ফসল উৎপাদন আশানুরূপ হয় না।
6. সীমিত কৃষি প্রযুক্তির ব্যবহারঃ
ভারতের কৃষিতে রাসায়নিক সার, কীটনাশক, যন্ত্রপাতির ব্যবহার সীমিত। সকল ফসল উৎপাদনের ক্ষেত্রে উন্নত বীজ ব্যবহার করা হয় না। এছাড়া সবুজ বিপ্লবের প্রভাব সর্বত্র সমান ভাবে পড়েনি।
7. প্রাচীন উৎপাদন পদ্ধতিঃ
ভারতীয় কৃষকরা এখনো লাঙ্গল, গরু দিয়ে জমি চাষ করে। ফসল কাটার ক্ষেত্রেও প্রাচীন পদ্ধতির প্রয়োগ করে থাকে।
প্রাচীন পদ্ধতিতে চাষ |
8. খাদ্যশস্যের প্রাধান্যঃ
ভারতের প্রায় 70 শতাংশ জমি খাদ্যশস্য উৎপাদনের জন্য ব্যবহার করা হয়। বাণিজ্যিক শস্য বা লাভজনক শস্য উৎপাদন তুলনামূলকভাবে কম।
9. কম উৎপাদনঃ
ভারতের অধিকাংশ কৃষক দরিদ্র। উন্নত বীজ, রাসায়নিক সার, কীটনাশক প্রভৃতির ব্যবহার কম হওয়ায় ফসল উৎপাদন কম হয়।
10. শস্য সংরক্ষণাগারের অভাবঃ
ফসল সংরক্ষণাগার বা হিমঘরের অভাব থাকায় প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ শস্যর অপচয় হয়।
সমাধান
1. উচ্চ ফলনশীল বীজঃ
স্বাধীনতার পর থেকে ভারতের কৃষি গবেষণা পরিষদ বিভিন্ন ফসলের উচ্চফলনশীল বীজের উদ্ভাবন করেছে এবং বর্তমানে কৃষিক্ষেত্রে তার প্রয়োগ হচ্ছে। স্বাধীনতার পর থেকে কৃষিতে উচ্চফলনশীল বীজের ব্যবহার করে ফসল উৎপাদন কয়েক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
2. রাসায়নিক সার ও কৃষি যন্ত্রপাতির প্রয়োগঃ
ভারতে বিভিন্ন সংস্থা রাসায়নিক সার এবং কৃষি যন্ত্রপাতি উৎপাদন করছে। উত্তর-পশ্চিম ভারতের এর প্রয়োগ বেশি হওয়ায় কৃষি উৎপাদন দ্রুত হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
3. জলসেচের প্রসারঃ
বিভিন্ন পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় বিভিন্ন বহুমুখী নদী পরিকল্পনার রূপায়নের ফলে জলসেচের প্রসার ঘটিয়ে জমিকে বহুফসলি জমিতে পরিণত করা হচ্ছে।
4. ঋণদানঃ
কৃষিজ উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য কৃষকদের সহজশর্তে ঋণ দানের প্রয়োজন। কৃষকদের ঋণ দান করতে সরকার অসংখ্য গ্রামীণ ব্যাংক, সমবায় ব্যাংক এবং কৃষি ব্যাংক স্থাপন করেছে।
5. কৃষি গবেষণা ও শিক্ষাঃ
ভারতের কৃষি গবেষণা পরিষদের প্রচেষ্টায় বিভিন্ন উচ্চফলনশীল বীজের উদ্ভাবন হচ্ছে এবং কৃষিক্ষেত্রে তার প্রয়োগ করা হচ্ছে।
6. সবুজ বিপ্লবের প্রসারঃ
শুধুমাত্র উত্তর-পশ্চিম ভারতের সবুজ বিপ্লবকে আবদ্ধ না রেখে ভারতের অন্যান্য স্থানে সবুজ বিপ্লবের প্রসার ঘটানো হচ্ছে।
7. কৃষি জমির পরিমাণ বৃদ্ধিঃ
পতিত বা অনাবাদি জমিকে উদ্ধার করে, জলসেচের প্রসার ঘটিয়ে সেগুলিকে চাষযোগ্য জমিতে পরিণত করা হচ্ছে।
8. সঠিক আবহাওয়ার পূর্বাভাসঃ
ফসল রোপণ, ফসল কাটা আবহাওয়ার ওপর অনেকটা নির্ভর করে। আবহাওয়ার পূর্বাভাস সঠিকভাবে দেওয়ার ফলে কৃষকদের সিদ্ধান্ত নিতে সুবিধা হচ্ছে।
9.সরকারি সহায়তাঃ
কৃষকদের আয় বৃদ্ধির জন্য কেন্দ্রীয় সরকার এবং বিভিন্ন রাজ্য সরকার বার্ষিক কিছু আর্থিক সহায়তা করছে।