Type Here to Get Search Results !

উইলিয়াম মরিস ডেভিসের মরু ক্ষয়চক্র

               

                 মার্কিন ভূতত্ত্ববিদ উইলিয়াম মরিস ডেভিস 1905 সালে মরু ক্ষয়চক্রের ধারণা দিয়েছেন। এই ক্ষয়চক্রের সাহায্যে পৃথিবীর শুষ্ক মরু অঞ্চলের ভূমিরূপ কিভাবে প্রাথমিক অবস্থা থেকে ক্ষয়কার্যের মাধ্যমে পরপর বিভিন্ন পর্যায়ে ভূ-প্রকৃতির পরিবর্তন ঘটে এবং ভূমিভাগ তার বিকাশের শেষ অবস্থায় পৌঁছায় তার ধারনা নিম্নে দেওয়া হল,- 


ক)  মরু ক্ষয়চক্রের পূর্বশর্তঃ

           মরু অঞ্চলের ক্ষয়চক্র চলতে হলে যেসকল পূর্বশর্ত থাকা দরকার সেগুলি হল-

         ১.  মরু ক্ষয়চক্রের জন্য একটি শুষ্ক মরু পরিবেশ প্রয়োজন। যেখানে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ হবে 25 সেন্টিমিটারের কম। 

         ২.  একটি পর্বতবেষ্টিত মালভূমি বা একটি উচ্চ মালভূমির প্রয়োজন।

        ৩.  একটি স্থানীয় নিম্নক্ষয়সীমা (প্লায়া হ্রদ) থাকা প্রয়োজন।

         ৪.  প্রবাহিত জলধারা এবং বায়ুপবাহ ক্ষয়কারী শক্তি রূপে ক্রিয়া করবে।




খ) মরু ক্ষয়চক্রের পর্যায়ঃ 

            ডেভিসের মতে মরু ক্ষয়চক্রের চারটি পর্যায় (Stage) আছে। যথা- 


         A) প্রাথমিক পর্যায়ঃ

               ১. ক্ষয়চক্রের প্রাথমিক পর্যায়ে  কতকগুলি পর্বতবেষ্টিত অববাহিকার সৃষ্টি হয় এবং প্রত্যেকটি অববাহিকায় কেন্দ্রমুখী অনুগামী নদীর সৃষ্টি হয়।  

              ২.  নদী উপত্যকাগুলি ক্ষুদ্র, অগভীর এবং সংকীর্ণ হয়।  

             ৩.  কেবলমাত্র বর্ষাঋতুতে অববাহিকার মধ্যস্থলে জল সঞ্চিত হয়ে প্লায়া হ্রদের সৃষ্টি করে।

             ৪.  অববাহিকার তলদেশ বা প্লায়া হ্রদ ক্ষয়ের শেষ সীমা হিসেবে কাজ করে।


         B) যৌবন পর্যায়

                 পর্বতগুলিতে ক্ষয়কার্যের ফলে সৃষ্ট ক্ষয়জাত পদার্থগুলি মধ্য অববাহিকায় সঞ্চয়ের মধ্য দিয়ে যৌবন অবস্থা শুরু হয়। এই অবস্থার প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি হল- 

               ১. পর্বতের ঢাল বেয়ে প্রবাহিত অনুগামী নদীগুলি পর্বতের ঢালে  'V' আকৃতির উপত্যকা সৃষ্টি করে।

               ২. নদীবাহিত পদার্থ পর্বতের ঢাল বরাবর নেমে এসে অববাহিকায় সঞ্চিত হয়ে পাখার ন্যায় ভূমিরূপ সৃষ্টি করে। একে পলল শঙ্কু বলে। 

              ৩. অধিকাংশ নদী পলল শঙ্কুর মধ্যে হারিয়ে যায়।

              ৪. নদী অদৃশ্য হলেও জল চুঁইয়ে চুঁইয়ে উপত্যকার মধ্যভাগে সঞ্চিত হয়ে প্লায়া হ্রদ গঠন করে।

              ৫. শুষ্ক ঋতুতে প্লায়া হ্রদ শুকিয়ে গেলে অববাহিকায় লবণ সঞ্চয় হয়। 

              ৬. শুষ্ক প্লায়ায় বায়ুর ক্ষয় কার্যের ফলে কিছু স্থানের পলি অপসারিত হয়ে গর্তের সৃষ্টি হয়। একে বায়ুতাড়িত গর্ত ( Deflation hollow) বলে। 

             ৭.  বালিরাশি বায়ুতাড়িত হয়ে স্থানে স্থানে বালিয়াড়ি সৃষ্টি করে।

             ৮.  পর্বতের উপরিভাগে ক্ষয় এবং অববাহিকায় সঞ্চয়ের ফলে ভূমির আপেক্ষিক উচ্চতা কমতে থাকে অর্থাৎ বলা যায় স্থানীয় ক্ষয়সীমার পরিবর্তন হয়।


        C) পরিণত পর্যায়ঃ

              মরু অঞ্চলের ক্ষয়চক্রের পরিণত অবস্থার বৈশিষ্ট্যগুলি নিম্নরূপ,-

               ১. ক্ষয়ের মাধ্যমে পর্বতের পশ্চাৎপসরণ ঘটতে থাকে।

              ২. মধ্য অববাহিকাগুলি ক্ষয়ের ফলে আরো প্রশস্ত হয় এবং জলবিভাজিকাগুলি সংকীর্ণ হয়। উপত্যকা ক্রমশ ভরাটের ফলে উঁচু হতে থাকে।

             ৩. পিছু হটতে থাকা পর্বতের পাদদেশে থেকে উপত্যকা পর্যন্ত মৃদু ঢালযুক্ত সমভূমির সৃষ্টি হয়। 

             ৪. পর্বতের ঢালের নিম্নাংশের পলল শঙ্কুগুলি সংযুক্ত হয়ে পলিগঠিত সমভূমি বা বাজাদা সৃষ্টি হয়।

            ৫. বাজাদার উপরে পাতলা পলি দ্বারা আবৃত নগ্ন ভূমিশিলাকে পেডিমেন্ট বলে।

            ৬. জলবিভাজিকাগুলি সংকীর্ণ হতে থাকে। ফলে নদীগ্রাসের ঘটনা ঘটে। 

            ৭. নদীগ্রাসের ফলে নদীগুলি একত্রিত হওয়ায় পৃথক পৃথক নিম্ন ক্ষয়সীমার অবলুপ্তি ঘটে। একটিমাত্র সাধারন ক্ষয়সীমা অঞ্চলটির ক্ষয়কার্যকে নিয়ন্ত্রণ করে। 


         D) বার্ধক্য পর্যায়ঃ

             মরু ক্ষয়চক্রের বার্ধক্যে অবস্থার বৈশিষ্ট্যগুলি নিম্নরূপ-

             ১. সমগ্র অঞ্চল জুড়ে প্রায় সমতল ভূমি অবস্থান করে যা পেডিপ্লেন নামে পরিচিত। 

             ২. পেডিপ্লেন বা পাদসমভূমির মাঝে কোথাও কোথাও ক্ষয় প্রতিরোধী কঠিন শিলা গঠিত টিলা অবস্থান করে। এদের ইনসেলবার্জ বলে। 

            ৩.  উপত্যকার বিভিন্ন স্থানে বালিয়াড়ি দেখা যায়।

            ৪. কোন কোন স্থানে বায়ুতাড়িত গর্ত দেখা যায়।



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Top Post Ad

Below Post Ad

Ads Area