১. স্ট্যালাকটাইট
চুনাপাথরের গুহার ছাদ থেকে চুন দ্বারা গঠিত যে স্তম্ভের মত বা ঝুরির মতো অংশ ঝুলতে দেখা যায় তাকে স্ট্যালাকটাইট বলে।
সৃষ্টির কারণ:
চুনাপাথর যুক্ত অঞ্চলে ভূপৃষ্ঠের উপর দিয়ে প্রবাহিত জল ছিদ্রের মধ্য দিয়ে চুইয়ে নিচের দিকে নামতে থাকে। এই জল ফোঁটার আকারের গুহার ছাদে জমা হয়। ফোঁটার জল শুকিয়ে গেলে জলের মধ্যে থাকা ক্যালসিয়াম কার্বনেট চুনাপাথরের ছাদে জমা হয়। পরবর্তী প্রতিটি ফোঁটার মধ্যে থাকা ক্যালসিয়াম কার্বনেট একই স্থানে পরপর জমতে থাকে এবং জমাটবদ্ধ অংশ ঝুড়ির মত গুহার ছাদ থেকে নিচের দিকে ঝুলতে থাকে। যা পরবর্তীতে স্ট্যালাকটাইট নামে পরিচিত হয়।
উদাহরণ:
ভারতের উত্তরাখণ্ডের তপোকেশ্বর গুহা এবং বক্সা-জয়ন্তীর মহাকাল গুহায় এই ধরনের স্ট্যালাকটাইট দেখা যায়।
ড্রেপ (Drape):
চুনাপাথরের গুহার ছাদে একাধিক স্ট্যালাকটাইট পরপর গঠিত হলে দেখতে অনেকটা পর্দার মতো মনে হয় একে ড্রেপ বলে ।
২. স্ট্যালাগমাইটঃ
চুনাপাথরের গুহা মেঝে থেকে চুনাপাথর গঠিত অংশ উপরের দিকে স্তম্ভের মত উত্থিত হলে তাকে স্ট্যালাগমাইট বলে।
সৃষ্টির কারণঃ
চুনাপাথরের গুহার ছাদ থেকে চুন মিশ্রিত জল ফোঁটার আকারে গুহার মেঝেতে পড়তে থাকে। ফোঁটার মধ্যে থাকা জল বাষ্পীভূত হলে চুন মেঝেতে জমাটবদ্ধ হয়। ক্রমাগত জমাটবদ্ধ হতে হতে ক্যালসিয়াম কার্বনেট গঠিত অংশ স্তম্ভের আকারে উপরদিকে উত্থিত হয়।
উদাহরণ:
দেরাদুনের কাছে তপোকেশ্বর গুহায় স্ট্যালাগমাইট দেখা যায়।
গুহাস্তম্ভ বা কেভ পিলার
গুহার ছাদ থেকে স্ট্যালাকটাইট নিচের দিকে বৃদ্ধি পায় এবং গুহার মেঝে থেকে স্ট্যালাগমাইট উপরের দিকে বৃদ্ধি পায়।স্ট্যালাকটাইট এবং স্ট্যালাগমাইট ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে পেতে পরস্পর যুক্ত হয়ে যে স্তম্ভের মত ভূমিরূপ গঠিত হয় তাকে গুহাস্তম্ভ বা কেভ পিলার বলে।ভারতের বক্সা-জয়ন্তীর মহাকাল গুহায় এই ধরনের গুহাস্তম্ভ বা কেভ পিলার দেখা যায়।
৩. হেলিকটাইট
অনেক সময় চুনাপাথরের গুহায় চুন উপরদিকে , নীচেরদিকে , পাশেরদিকে এবং তির্যকভাবে বা বাঁকানোভাবে বৃদ্ধি পায়। তখন তাকে হেলিকটাইট বলে। গুহার মধ্যে চোঁয়ানো জলের পরিমাণ কম হলে জলের ফোঁটা তৈরি হয় না। এই রকম গুহায় বায়ুপ্রবাহের পরিমাণ বেশি হলে হেলিকটাইট গঠিত হয়।
স্ট্যালাকটাইট এবং স্ট্যালাগমাইট এর পার্থক্য
১. সংজ্ঞাঃ
কাস্ট অঞ্চলে গুহার ছাদ থেকে ঝুলন্ত চুনাপাথরের ঝুড়িকে স্ট্যালাকটাইট বলে।
কাস্ট অঞ্চলে গুহার মেঝে থেকে উপরের দিকে ওঠা চুনাপাথরের স্তম্ভকে স্ট্যালাগমাইট বলে।
২. অবস্থানঃ
স্ট্যালাকটাইট গুহার ছাদ থেকে নিচের দিকে ঝুলতে থাকে।
স্ট্যালাগমাইট মেঝে থেকে উপরের দিকে দণ্ডায়মান অবস্থায় থাকে।
৩. দৈর্ঘ্যঃ
স্ট্যালাকটাইটের দৈর্ঘ্য তুলনামূলক কম।
স্ট্যালাগমাইটের দৈর্ঘ্য তুলনামূলক বেশি।
৪. প্রকৃতিঃ
স্ট্যালাকটাইট ছাদের দিকে মোটা এবং ঝুলন্ত দিক তীক্ষ্ম হয়।
স্ট্যালাগমাইট মেঝের দিক মোটা এবং উপরের দিক সরু হয়।
৫. স্থায়িত্বঃ
স্ট্যালাকটাইটের স্থায়িত্ব কম। যেকোনো সময় ধ্বসে পড়তে পারে।
স্ট্যালাগমাইট জমাটবদ্ধ অবস্থায় থাকে।
৬. কাঠিন্যঃ
স্ট্যালাকটাইটের কাঠিন্য কম।এটি কোমল হয়।
স্ট্যালাগমাইট অধিক কঠিন হয়।