অ্যাস্থেনোস্ফিয়ার কি? বা অ্যাস্থেনোস্ফিয়ার কাকে বলে?
ভূত্বকের নিচে বা গুরুমন্ডলের উপরিভাগে যে থকথকে, সান্দ্র, নমনীয় প্লাস্টিকের মত দুর্বল স্তর রয়েছে তাকে অ্যাস্থেনোস্ফিয়ার বা ক্ষুব্দমন্ডল বলে।
ভূবিজ্ঞানী ব্যারেল এই স্তরকে অ্যাস্থেনোস্ফিয়ার বা ক্ষুব্দমন্ডল নামে অভিহিত করেছেন।
অ্যাস্থেনোস্ফিয়ার এর অবস্থান:
পৃথিবীর ওপরের বা বাইরের একেবারে শক্ত আবরণকে ভূত্বক এবং তার নিচের স্তরকে গুরুমন্ডল বলে।ভূত্বকের নিচে এবং গুরুমন্ডলের উপরিভাগে অ্যাস্থেনোস্ফিয়ার বা ক্ষুব্দ মন্ডল স্তরটি অবস্থান করে।
অ্যাস্থেনোস্ফিয়ার স্তরের তাপমাত্রা:
ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রতি 33 মিটার গভীরতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে তাপমাত্রা 1° সেলসিয়াস বৃদ্ধি পায়। এইভাবে অ্যাস্থেনোস্ফিয়ার স্তরের তাপমাত্রা হয় 1100° থেকে 1400° সেলসিয়াস।
অ্যাস্থেনোস্ফিয়ার স্তরের গভীরতা:
অ্যাস্থেনোস্ফিয়ার স্তরের গভীরতা সম্পর্কে মতভেদ রয়েছে। কেউ কেউ মনে করেন যে এই স্তরের গভীরতা 60 থেকে 210 কিলোমিটার। কেউ কেউ মনে করেন এই স্তরের গভীরতা 100 থেকে 150 কিলোমিটার। কেউ কেউ মনে করেন গভীরতা প্রায় 200 থেকে 600 কিলোমিটার।
অ্যাস্থেনোস্ফিয়ার এর ঘনত্বঃ
এই স্তরটি গুরুমন্ডলের উপরিভাগে অবস্থিত। এর ঘনত্ব 3.4 থেকে 4.4 গ্রাম/ঘন সেন্টিমিটার।
অ্যাস্থেনোস্ফিয়ার স্তরটি কঠিন না তরল?
অ্যাস্থেনোস্ফিয়ার স্তরটি সম্পূর্ণ কঠিন নয় আবার সম্পূর্ণ তরলও নয়। কঠিন এবং তরলের মধ্যবর্তী নমনীয় অবস্থায় অ্যাস্থেনোস্ফিয়ার স্তরটি রয়েেছে।
অ্যাস্থেনোস্ফিয়ার এর উপাদানঃ
এই স্তরটির মূল উপাদান ম্যাগনেসিয়াম, লোহা, ক্রোমিয়াম, সিলিকন প্রভৃতি।
অ্যাস্থেনোস্ফিয়ার এর বৈশিষ্ট্যঃ
১. সান্দ্রতাঃ কঠিন এবং কোমল এর মধ্যবর্তী সান্দ্র অবস্থায় রয়েছে।
২. ভূমিকম্প তরঙ্গের গতিঃ ভূমিকম্পের P এবং S তরঙ্গের গতি এই স্তরে এসে হঠাৎ কমে যায়।
৩. পাত এর অবস্থানঃ মহাদেশীয় এবং মহাসাগরীয় পাতগুলি এই স্তরের উপর ভাসমান অবস্থায় রয়েছে।
৪. বিভিন্ন ভূগাঠনিক ক্রিয়া-কলাপঃ অগ্নুৎপাত, ভূমিকম্প প্রভৃতি অ্যাস্থেনোস্ফিয়ার স্তর থেকে সংঘটিত হয় বলে একে ক্ষুব্দমন্ডল বলে।
অ্যাস্থেনোস্ফিয়ার স্তরের গুরুত্বঃ
অ্যাস্থেনোস্ফিয়ার স্তরটি সান্দ্র প্রকৃতির হওয়ায় উপরিভাগে অবস্থিত ভূত্বকের মহাদেশীয়় এবং মহাসাগরীয় পাত অ্যাস্থেনোস্ফিয়ার এর উপর ভাসমান অবস্থায় রয়েছে। ফলে পাতগুলি এক স্থান থেকে অন্য স্থানে স্থানান্তরিত হয় অর্থাৎ পাতের চলন হয়। ফলস্বরূপ পর্বত সৃষ্টি, ভাঁজ, চ্যুতি গঠন হয়ে থাকে। এছাড়া অ্যাস্থেনোস্ফিয়ার স্তরের উপস্থিতির জন্য অগ্ন্যুদগম, ভূমিকম্প প্রভৃতি ঘটনা ঘটে থাকে।
অ্যাস্থেনোস্ফিয়ার স্তরটি নমনীয় বা সান্দ্র হয় কেন?
মহাদেশীয় ভূত্বক থেকে তেজস্ক্রিয় পদার্থ নির্গত হওয়ার জন্য অ্যাস্থেনোস্ফিয়ার স্তরের তাপমাত্রা বেশি। এছাড়া এই স্তরে অবস্থিত পেরিডোটাইট শিলায় 0.1% জল থাকে। অধিক তাপ, অত্যধিক চাপ এবং জলের উপস্থিতির জন্য অন্তত 5% পেরিডোটাইট শিলা গলে যায়। ফলে অ্যাস্থেনোস্ফিয়ার স্তরটি সান্দ্রতা প্রাপ্ত হয়।
অ্যাস্থেনোস্ফিয়ার কে স্বল্পগতিসম্পন্ন ( Low Velocity Zone) অঞ্চল বলে কেন?
ভূত্বকে P তরঙ্গের গতিবেগ সেকেন্ডে 8 কিলোমিটার। ভূত্বকের নিচে গুরুমন্ডল এর ঘনত্ব ভূত্বকের থেকে বেশি হওয়ায় ভূমিকম্প তরঙ্গের গতিবেগ বেশি হওয়ার কথা। কিন্তু ভূত্বকের নিচে প্রায় 100 কিলোমিটার গভীরতা পর্যন্ত P তরঙ্গের গতিবেগ সেকেন্ডে 8.3 কিলোমিটার হয় অর্থাৎ P তরঙ্গের গতি যে হারে বৃদ্ধি পাওয়ার কথা ছিল ততটা বৃদ্ধি পায় না। 100 কিলোমিটারের পরবর্তী অংশে P তরঙ্গের গতি কমতে থাকে এবং সেকেন্ডে প্রায় 8 কিলোমিটার হয়। অ্যাস্থেনোস্ফিয়ারে P তরঙ্গের গতিবেগ কমে যাওয়ার জন্য এই স্তরকে কম গতিসম্পন্ন স্তর বা Low Velocity Zone বলে।