গিজার এক ধরনের উষ্ণ প্রস্রবণ। আইসল্যান্ডের স্থানীয় ভাষার শব্দ গিজির (Geysir) থেকে গিজার শব্দটি এসেছে, যার অর্থ "গর্জন করা"।
গিজারের সংজ্ঞা বা গিজার কাকে বলে?
যে উষ্ণ প্রস্রবণে ভূগর্ভের অতি উষ্ণ জল এবং বাষ্প কোন নির্দিষ্ট ছিদ্রপথ বা ফাটল দিয়ে নির্দিষ্ট সময় অন্তর প্রবল বেগে স্তম্ভের মত বা ফোয়ারার মতো উপরে উঠে আসে তাকে গিজার বলে। এই জল নির্গত হওয়ার সময় প্রচন্ড শব্দ হয়।
গিজারের উৎপত্তির কারণ বা সৃষ্টির কারণঃ
সদ্য মৃত আগ্নেয়গিরি অঞ্চলে অথবা জীবন্ত আগ্নেয়গিরি অঞ্চলে যেখানে ভূতাপীয় অবক্রম বেশি অর্থাৎ যেখানে অল্প গভীরতায় তাপমাত্রা দ্রুত হারে বৃদ্ধি পায় সেখানে গিজার সৃষ্টি হয়।
গিজার |
এই অঞ্চলে ভূপৃষ্ঠের অল্প নিচে ম্যাগমা গহ্বর অবস্থান করে। এই গহ্বর বায়ুপূর্ণ থাকে। ভৌমজল বিভিন্ন ফাটল ও ছিদ্রপথ দিয়ে ম্যাগমা গহ্বরে প্রবেশ করলে ম্যাগমার সংস্পর্শে এই জল প্রচন্ড উত্তপ্ত হয়। জলের উষ্ণতা থাকে প্রায় 200 ডিগ্রী সেলসিয়াস যা জলের স্ফুটনাঙ্ক থেকে অনেক বেশি। আধিক উষ্ণতায় কিছু পরিমাণ জল অতি উত্তপ্ত বাষ্পে পরিণত হয়। বাষ্প ম্যাগমা গহ্বরে বায়ুর সঙ্গে মিশ্রিত অবস্থায় প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করে। বাষ্পচাপ একটি নির্দিষ্ট সীমা (সংকটসীমা) অতিক্রম করলে উত্তপ্ত জলের সঙ্গে জলীয়বাষ্প ভূত্বকের ছিদ্রপথ বা ফাটল দিয়ে প্রচন্ড বেগে স্তম্ভের মত ফোয়ারা সৃষ্টি করে ভূপৃষ্ঠে নির্গত হয়। বায়ু এবং বাষ্পের চাপ কমে গেলে উষ্ণ জল নির্গমন বন্ধ হয়ে যায়। পুনরায় ম্যাগমা গহ্বরে জল প্রবেশ করে এবং বাষ্প চাপ বৃদ্ধি পেতে থাকে। একটি নির্দিষ্ট সময় অন্তর পুনরায় এই প্রক্রিয়া কার্যকর হয় এবং উষ্ণজল স্তম্ভের আকারে ভূপৃষ্ঠে নির্গত হয়।
গিজারের বৈশিষ্ট্যঃ
১. স্তম্ভের ন্যায় আকারঃ গিজার বাজারের জল স্তম্ভের মত আকার যুক্ত হয়ে উৎক্ষিপ্ত হয়।
২. নির্গত পদার্থঃ উষ্ণ জলের সঙ্গে অতি উষ্ণ বাষ্প নির্গত হয়।
৩. স্বল্প উৎক্ষেপন সময়কালঃ বাষ্প ও জলের চাপ কমে গেলে উৎক্ষেপণ বন্ধ হয়ে যায়।
৪. অঞ্চলঃ সদ্যা মৃত আগ্নেয়গিরি অথবা জীবন্ত আগ্নেয়গিরি অঞ্চলে গিজার বা গাইজার দেখা যায়।
৫. নির্দিষ্ট সময় অন্তরঃ অনবরত জল নির্গত না হয়ে নির্দিষ্ট সময় অন্তর নির্গত হয়।
৬.শব্দের উৎপত্তিঃ জল নির্গত হওয়ার সময় শব্দ সৃষ্টি হয়।
উদাহরণঃ
আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েলোস্টোন ন্যাশনাল পার্কের ওল্ড ফেইথফুল গিজারটি বিখ্যাত। এখানে প্রায় এক ঘন্টা অন্তর জল নির্গত হয়। স্থায়িত্বকাল থাকে প্রায় 5 মিনিট এবং স্তম্ভের উচ্চতা 60 মিটার পর্যন্ত হয়। এছাড়া নিউজিল্যান্ডের লেডিনস্ক বিখ্যাত গিজার।
উষ্ণ প্রস্রবণ এবং গিজারের পার্থক্যঃ
১. জলের নির্গমন
উষ্ণ প্রস্রবণে জল ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসে।
গিজারের জল স্তম্ভের মতো বা ফোয়ারার আকারে বেরিয়ে আসে।
২. সময়ের অন্তর
উষ্ণ প্রস্রবণে জল অনবরত বেড়িয়ে আসতে থাকে।
গিজারে নির্দিষ্ট সময় অন্তর জল বেড়িয়ে আসে।
৩. বাষ্পীভবন
উষ্ণ প্রস্রবণে জল গরম হলেও বাষ্পে পরিণত হয় না বা বাষ্পের পরিমাণ কম।
গিজারে অতিরিক্ত উষ্ণতা থাকায় জল বাস্পে পরিণত হয়।
৪. অবস্থান
উষ্ণ প্রস্রবণ আগ্নেয়গিরি অধ্যুষিত অঞ্চল ছাড়াও বিভিন্ন অঞ্চলে দেখা যায়।
গিজার শুধুমাত্র আগ্নেয়গিরি অঞ্চলে দেখা যায়।