সিঙ্কহোল কি?
চুনাপাথর গঠিত অঞ্চলে পরস্পর ছেদকারী জয়েন্ট বা দারণ অংশে দ্রবণজনিত ক্ষয়কার্যের ফলে যে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র গর্তের সৃষ্টি হয় তাদের সিঙ্কহোল বলে।এই ধরনের গর্ত সংখ্যায় কয়েক শত হতে পারে। সিঙ্কহোল গুলি উপরিভাগে মৃত্তিকার স্তর দ্বারা ঢাকা থাকতে পারে।
শ্রেণীবিভাগঃ
আকারগত দিক থেকে সিঙ্কহোল দুই প্রকার। যথা-
১. শঙ্কু আকৃতিরঃ
যেসকল সিঙ্কহোল ফানেল বা শঙ্কু আকৃতির হয় অর্থাৎ যাদের উপরিভাগ প্রশস্ত এবং নিচের দিকে সংকীর্ণ হয় তাদের শঙ্কু আকৃতির সিঙ্কহোল বলে।
২. নলাকৃতিঃ
যেসকল সিঙ্কহোল নলের মত বা পাইপের মত আকারবিশিষ্ট হয় তাদের সিলিন্ড্রিক্যাল বা নলাকৃতি সিঙ্কহোল বলে।
সৃষ্টির কারণঃ
কার্বনিক অ্যাসিড মিশ্রিত বৃষ্টির জলের সঙ্গে ভূপৃষ্ঠের উপরিভাগের চুনাপাথর দ্রবীভূত হওয়ার ফলে এই ধরনের সিঙ্কহোল বা ক্ষুদ্রাকৃতি গর্তের সৃষ্টি হয়।
বৈশিষ্ট্যঃ
১. আবৃতঃ ভূপৃষ্ঠের উপরিভাগে পাতলা মৃত্তিকার স্তর দ্বারা ঢাকা থাকে।
২. আকৃতিঃ এগুলি ফানেল আকৃতির বা নলাকৃতি হয়।
৩. একত্রে অবস্থানঃ বিস্তীর্ণ অঞ্চলজুড়ে কয়েকশো সিঙ্কহোল একত্রে অবস্থান করে।
৪. গভীরতাঃ সিঙ্কহোলের গভীরতা গড়ে 3 থেকে 10 মিটার হয় মিটার পর্যন্ত হয়।
৫. জলের অনুপ্রবেশঃ সিঙ্কহোলের মধ্য দিয়ে বৃষ্টির জল ভূগর্ভে প্রবেশ করে।
উদাহরণঃ
আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের কেনটাকি এবং ইন্ডিয়ানা প্রদেশে সিঙ্কহোল দেখা যায়।
সোয়ালোহোল কি?
দ্রবণজনিত ক্ষয়কার্যের ফলে সিঙ্কহোলগুলি আরও প্রসারিত হলে সিঙ্কহোলের উপরে অবস্থিত মৃত্তিকার আবরণ ধ্বসে পড়ে। এছাড়া একাধিক সিঙ্কহোল পরস্পর যুক্ত হয়ে সৃষ্টি হওয়া অপেক্ষাকৃত বড় গর্ত যার মধ্য দিয়ে বৃষ্টির জল ভূ-অভ্যন্তরে প্রবেশ করে তাকে সোয়ালোহোল বলে।
সৃষ্টির কারনঃ
কার্বনিক অ্যাসিড মিশ্রিত বৃষ্টির জলের সঙ্গে দ্রবন কার্যের ফলে সিঙ্কহোলের ছাদ ধ্বসে গিয়ে এবং সিঙ্কহোলের আকার বর্ধিত হয়ে সোয়ালোহোল গঠন করে ।
শ্রেণীবিভাগঃ
১. দ্রবণজনিত সোয়ালোহোলঃ
এই ধরনের সোয়ালোহোল দ্রবণজনিত ক্ষয়কার্যের ফলে সৃষ্টি হয়।
২. ধ্বসজনিত সোয়ালোহোলঃ
এই ধরনের সোয়ালোহোল ধ্বসজনিত কারণে গড়ে ওঠে।
বৈশিষ্ট্যঃ
১. আকৃতিঃ শঙ্কু আকৃতির হয়। গর্তের ভূপৃষ্ঠের দিকের অংশ প্রসারিত এবং নিচের দিকে সংকীর্ণ হয়।
২. গভীরতাঃ 30 থেকে 50 মিটার গভীরতা যুক্ত হয়।
৩. নদীর অনুপ্রবেশঃ সোয়ালোহোলের মধ্য দিয়ে নদী ভূ-অভ্যন্তরে প্রবেশ করে।
উদাহরণঃ
ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জে সোয়ালোহোল দেখা যায়।
সিঙ্কহোল এবং সোয়ালোহোলের পার্থক্যঃ
১. সংজ্ঞাঃ
সিঙ্কহোলঃ কাস্ট অঞ্চলে দ্রবণ জনিত ক্ষয় কার্যের ফলে সৃষ্ট অতি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র গর্ত কে সিঙ্কহোল বলে।
সোয়ালোহোলঃ সিঙ্কহোল অপেক্ষা বড় গর্ত কে সোয়ালো হোল বলে।
২. আকৃতিঃ
সিঙ্কহোলঃ অপেক্ষাকৃত ক্ষুদ্র ফানেল আকৃতির হয়।
সোয়ালোহোলঃ ক্রমাগত দ্রবন কার্যের ফলে বৃহৎ ফানেল আকৃতির হয়।
৩. আবরণঃ
সিঙ্কহোলঃ মৃত্তিকার স্তর দ্বারা সিঙ্কহোলের মুখ ধাকা থাকে।
সোয়ালোহোলঃ সোয়ালোহোলের মুখ উন্মুক্ত থাকে বা খোলা থাকে।
৪. নদীর প্রবেশঃ
সিঙ্কহোলঃ সিঙ্কহোল ক্ষুদ্র আকৃতির হওয়ায় নদী ভূগর্ভে প্রবেশ করতে পারে না।
সোয়ালোহোলঃ সোয়ালোহোল আকারে বড় হওয়ায় নদী ভূগর্ভে প্রবেশ করে।
৫. সংখ্যাঃ
সিঙ্কহোলঃ কাস্ট অঞ্চলে সিঙ্কহোলের সংখ্যা অনেক বেশি।
সোয়ালোহোলঃ সোয়ালোহোলের সংখ্যা তুলনায় অনেক কম।
৬. গভীরতা এবং ক্ষেত্রমানঃ
সিঙ্কহোলঃ সিঙ্কহোলের গভীরতা এবং ক্ষেত্র মান কম।
সোয়ালোহোলঃ সোয়ালোহোলের গভীরতা এবং ক্ষেত্রমান অনেক বেশি।