Type Here to Get Search Results !

ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু(Mediterranean Climate)/ভৌগোলিক অবস্থান/জলবায়ুর বৈশিষ্ট্য

                    

             এককথায় উষ্ণ নাতিশীতোষ্ণ মন্ডলের অন্তর্গত মহাদেশগুলির পশ্চিমাংশের সামুদ্রিক জলবায়ুকে ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু বলে। ভূমধ্যসাগরের তীরবর্তী দেশগলিতে এই বিশেষ জলবায়ু পরিলক্ষিত হয় বলে একে ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু বলে।পৃথিবীর যে সকল স্থানে ভূমধ্যসাগরীয় তীরবর্তী দেশগুলির মত জলবায়ু দেখা যায় সেই জলবায়ুকে ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু বলে ।

ভৌগোলিক অবস্থান

অক্ষাংশগত অবস্থান: 

             উত্তর ও দক্ষিণ গোলার্ধের 30° থেকে 45° অক্ষাংশের মধ্যে মহাদেশের পশ্চিম দিকের দেশগুলিতে ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু দেখা যায়।

দেশীয়  অবস্থানঃ

              এশিয়া, ইউরোপ এবং আফ্রিকা এই তিনটি মহাদেশে ভূমধ্যসাগরে উপকূলভাগে এই জলবায়ুর প্রভাব সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। ইউরোপের পর্তুগাল, স্পেন, ফ্রান্স, ইতালি প্রভৃতি দেশের দক্ষিণ; এশিয়ার তুরস্ক-সিরিয়া, ইসরাইল-লেবানন প্রভৃতি দেশের পশ্চিমে; আফ্রিকার মিশর, লিবিয়া, মরক্কো দেশের উত্তরে এই জলবায়ু দেখা যায়।

ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ুর বৈশিষ্ট্য

উষ্ণতার বৈশিষ্ট্য

      গ্রীষ্মকালের উষ্ণতাঃ 

                গ্রীষ্মকালের গড় উষ্ণতা থাকে 21° থেকে 28° সেলসিয়াস। সমুদ্র উপকূল থেকে দূরবর্তী স্থানের দিকে উষ্ণতা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। 

      শীতকালীন উষ্ণতাঃ 

                 শীতকাল মৃদুভাবাপন্ন। শীতকালের গড় উষ্ণতা থাকে 4° থেকে 10° সেলসিয়াস। সমুদ্র থেকে দূরবর্তী উচ্চভূমিতে তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নিচে নেমে যায়। 

      বার্ষিক উষ্ণতার প্রসরঃ 

               বার্ষিক গড় উষ্ণতার প্রসর 11° থেকে 17° সেলসিয়াস। অবশ্য সমুদ্র থেকে যত দূরে যাওয়া যায় উষ্ণতার প্রসর ততই বাড়তে থাকে 

      দৈনিক উষ্ণতার প্রসরঃ

              ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু অঞ্চলে শীতকালের তুলনায় গ্রীষ্মকালে আকাশ মেঘমুক্ত থাকায় উষ্ণতার প্রসর খুব বেশি হয় প্রায় 0° থেকে 22° সেলসিয়াস। সমুদ্র থেকে দূরবর্তী স্থানে উষ্ণতার পার্থক্য খুব বেশি হয়। 

বায়ুচাপ সংক্রান্ত বৈশিষ্ট্য

গ্রীষ্মকালীন বৈশিষ্ট্যঃ

           বায়ুচাপ বলয়গুলি উত্তরে সরে যাওয়ায় উপক্রান্তীয় উচ্চচাপ বলয় ভূমধ্যসাগর ও তার সংলগ্ন অঞ্চলে অবস্থান করে। এই অঞ্চলে নিরক্ষীয় নিম্নচাপ বলয় এবং মেরুবৃত্ত  প্রদেশীয় নিম্নচাপ বলয়ের ঊর্ধ্বগামী বাতাস এই অঞ্চলে নিম্নগামী হয়। 

শীতকালীন বৈশিষ্ট্যঃ

           সূর্যের দক্ষিণায়ণের ফলে উপক্রান্তীয় উচ্চচাপ বলয় ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের দক্ষিণে অবস্থান করে। 

বায়ুপ্রবাহ  সংক্রান্ত বৈশিষ্ট্য

গ্রীষ্মকালঃ

         এই অঞ্চলে উপক্রান্তীয় উচ্চচাপ বলয় অবস্থান করায় বাতাস নিম্নগামী হয়। ফলে বায়ুপ্রবাহ দেখা যায় না। 

শীতকালঃ

        শীতকালে এখানে আর্দ্র পশ্চিমা বায়ুর প্রভাবে বৃষ্টিপাত হয়। এছাড়া মেরুপ্রদেশ থেকে আসা শীতল বায়ুর প্রভাবে নাতিশীতোষ্ণ ঘূর্ণবাতের সৃষ্টি হয়। ফলে বৃষ্টি হয়। 

স্থানীয় বায়ু প্রবাহঃ

         এই অঞ্চলে প্রবাহিত উষ্ণ স্থানীয় বায়ুগুলি হল- সিরোক্কো (স্পেন, ইতালি, আফ্রিকা), ঘিবলি (তিউনেশিয়া), খামসিন (আলজেরিয়া), লেভেচ (স্পেন), ব্রিকফিল্ডার (অস্ট্রেলিয়া), বার্গ (দক্ষিণ আফ্রিকা), সান্টাআনা (ক্যালিফোর্নিয়া)।

       এখানে প্রবাহিত শীতল স্থানীয় বায়ু হল- মিস্টাল (ফ্রান্সের রোন উপত্যকা), বোরা (অ্যাড্রিয়াটিক সাগরের তীরে)।

বৃষ্টিপাত সংক্রান্ত বৈশিষ্ট্যঃ

শীতকালীন বৃষ্টিঃ

          ১. ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু অঞ্চলে গ্রীষ্মকাল শুষ্ক এবং শীতকাল আর্দ্র প্রকৃতির হয় অর্থাৎ বৃষ্টি হয়। শীতকালে পশ্চিমা বায়ুর প্রভাবে এবং নাতিশীতোষ্ণ ঘূর্ণবাতের প্রভাবে বৃষ্টিপাত হয়।

         ২. বৃষ্টিপাতের পরিমাণঃ এখানকার গড় বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ 25 থেকে 90 সেন্টিমিটার কিন্তু পশ্চিমা বায়ুর গতিপথে পর্বত থাকলে তার প্রতিবাত ঢালে 125 সেন্টিমিটার বা তার বেশি বৃষ্টিপাত হয়।

         ৩. মেঘমুক্ত রৌদ্রোজ্জ্বল আবহাওয়ায় বছরের অধিকাংশ সময়ই আকাশ মেঘমুক্ত থাকায় প্রচুর সূর্যরশ্মি আসে। মৃদু উষ্ণ এবং রৌদ্রোজ্জ্বল আবহাওয়ার জন্য এই অঞ্চলে প্রচুর পর্যটক ঘুরতে আসে। এই কারণে একে বিনোদনের জলবায়ু বলা হয়। 

রৌদ্রোজ্জ্বল আবহাওয়া


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Top Post Ad

Below Post Ad

Ads Area