পলি মৃত্তিকা (Alluvial soil)- অআঞ্চলিক মৃত্তিকা
আবস্থানঃ
গঙ্গা সমভূমি, ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় এবং অন্যান্য নদী উপত্যকাগুলিতে দেখা যায়। এই মৃত্তিকা ভারতের প্রায় 45.6 শতাংশ স্থান দখল করে আছে। মোট আয়তন প্রায় 15 লক্ষ বর্গ কিলোমিটার।
বৈশিষ্ট্যঃ
১. প্রাচীন পলিমাটি কে ভাঙ্গড় বা বাগর বলে। এই অঞ্চলের জলাভূমির মাটিকে ধাঙ্কার (Dhankar) বলে। পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম অঞ্চলে এই মাটিকে ঘুটিং বলে।
২. অধিক ধৌত প্রক্রিয়ায় মাটিতে চুন জাতীয় পদার্থের আধিক্য দেখা দেওয়ায় এই মাটির সৃষ্টি হয়েছে।এই মাটি অপেক্ষাকৃত অনুর্বর।
৩. নবীন পলিমাটিকে খাদার ( উত্তরপ্রদেশে ) এবং বেট ( পাঞ্জাবে ) বলা হয়।
৪. এই মাটি উর্বর।
৫. অপেক্ষাকৃত শুষ্ক অঞ্চলে লবণযুক্ত ক্ষারধর্মী প্রাচীন পলিমাটি দেখা যায়। যা ঊষর বা কলার নামে পরিচিত।
প্রধান উদ্ভিদঃ
ধান, গম, পাট, আখ, ডাল, তৈলবীজ প্রভৃতি এই মাটিতে ভালো জন্মায়।
কৃষ্ণ মৃত্তিকা বা কালো মাটি (Black Soil)- আঞ্চলিক মাটি
ভারতের প্রায় 17 শতাংশ স্থান দখল করে আছে কৃষ্ণমৃত্তিকা মোট আয়তন 5.50 লক্ষ বর্গ কিলোমিটার।
অবস্থানঃ
মহারাষ্ট্র, গুজরাট, পশ্চিম মধ্যপ্রদেশ,কর্ণাটক, অন্ধ্রপ্রদেশ এবং তামিলনাড়ুতে দেখা যায়।
বৈশিষ্ট্যঃ
১. লাভা গঠিত ব্যাসল্ট শিলা থেকে এই মাটির সৃষ্টি হয়।
২. স্থানীয় ভাষায় এই মাটির নাম রেগুর বা রেগারা (তেলেগু শব্দ)।
৩. কাদা বা পলির (50-80%)ভাগ বেশি থাকায় জল ধারণ ক্ষমতা বেশি।
৪. এই মাটি খুব উর্বর।
৫. টাইটানিয়াম অক্সাইড এর পরিমাণ বেশি থাকায় এই মাটির রং কালো।
৬. কৃষ্ণ মৃত্তিকা তুলা চাষের উপযোগী হওয়ায় একে Black Cotton Soil বলে।
প্রধান ফসলঃ
তুলো বা কার্পাস, আখ, গম, চিনাবাদাম, তামাক প্রভৃতি।
লালমাটি বা লোহিত মৃত্তিকা ( Red Soil) - আঞ্চলিক মাটি
অবস্থানঃ
কর্ণাটক, উড়িষ্যা, মধ্যপ্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম এবং বাঁকুড়া জেলা, ঝাড়খন্ড প্রভৃতি। তামিলনাড়ুতে এই মাটি সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। ভারতবর্ষের প্রায় 11 শতাংশ অঞ্চল এই মাটি দখল করে আছে।
বৈশিষ্ট্যঃ
১. অধিক উষ্ণতা এবং আর্দ্রতার প্রভাবে আগ্নেয় এবং রূপান্তরিত শিলা গভীর আবহবিকারের মাধ্যমে এই মাটির সৃষ্টি করে।
২. ফেরিক অক্সাইড এর পরিমাণ বেশি হয় বলে এই মাটির রং লাল।
৩. এই মাটি অনুর্বর।
প্রধান ফসলঃ
জোয়ার, বাজরা, রাগী, বিভিন্ন তৈলবীজ।
ল্যাটেরাইট মাটি (Laterite Soil)- আঞ্চলিক মাটি
অবস্থানঃ
কর্ণাটক, তামিলনাড়ু, অন্ধ্রপ্রদেশ, ঝাড়খন্ড, পশ্চিমবঙ্গ, ছোটনাগপুর মালভূমি প্রভৃতি। ভারতবর্ষের প্রায় 8 শতাংশ অঞ্চল এই মাটি অধিকার করে আছে।
বৈশিষ্ট্যঃ
১. ল্যাটিন শব্দ 'ল্যাটার' এর অর্থ 'ইট'। ইটের মত শক্ত হয় বলে এই মাটির এই রকম নাম।
২. অধিক উষ্ণতা এবং অধিক আদ্রতা যুক্ত অঞ্চলে এই মাটির সৃষ্টি হয়।
৩. লৌহ এবং অ্যালুমিনিয়াম অক্সাইড এর পরিমান বেশি হয় এবং ম্যাগনেসিয়াম এর পরিমাণ কম হয়।
৪. মৃত্তিকার উপরে স্তর থেকে সিলিকা অপসারিত হয়, সেক্সুই অক্সাইড জমাটবদ্ধ হয় এবং ল্যাটেরাইট মৃত্তিকা সৃষ্টি হয়।
৫. এই মাটি অনুর্বর হয়।
প্রধান ফসলঃ
কাজুবাদাম, ট্যাপিওকা, কফি, রাবার।
মরু অঞ্চলের মাটি (Arid &Desert Soils)- আঞ্চলিক মাটি
অবস্থানঃ
রাজস্থানের মরুভূমি এবং সংলগ্ন পাঞ্জাব, হরিয়ানা ও গুজরাটে দেখা যায়। এই মাটি ভারতের প্রায় 4.5 শতাংশ অঞ্চল জুড়ে রয়েছে।
বৈশিষ্ট্যঃ
১. অধিক উষ্ণতা এবং 50 সেন্টিমিটার কম বৃষ্টিপাত হওয়ায় যান্ত্রিক আবহবিকার এর প্রভাবে বেলেপাথর জাতীয় শিলাস্তর থেকে এই মাটির সৃষ্টি হয়।
২. এই মাটিকে স্থানীয় ভাষায় সিরোজেম বলে।
৩. এই মাটিতে লবণের ভাগ বেশি থাকে।
৪. অধিক বাষ্পীভবনের কারণে মৃত্তিকার উপরিভাগে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম, সোডিয়াম প্রভৃতি লবণ সঞ্চিত হয়।
প্রধান ফসলঃ
জোয়ার, তৈলবীজ, বাজরা, রাগী।
পার্বত্য অঞ্চলের মাটি (Mountain Soil)- আঞ্চলিক মাটি
অবস্থানঃ
ভারতে প্রায় 8.7 শতাংশ স্থান জুড়ে এই মাটি রয়েছে। উত্তরে হিমালয় এবং দক্ষিণে নীলগিরি ও পশ্চিমঘাট পার্বত্য অঞ্চলে এই মাটি দেখা যায়।
বৈশিষ্ট্যঃ
১. এই মাটির রং ধূসর এবং মৃত্তিকা মূলত অম্ল প্রকৃতির।
২. পার্বত্য মাটিকে পডসল মাটিও বলা হয়।
৩. এই মাটির অপর নাম ধূসর বাদামি অরণ্য মাটি।
৪. কাশ্মীর উপত্যকায় এই মাটিকে বলে কারেওয়া।
৫. হিমাচল প্রদেশে কাটিল (পাথুরে মাটি)। কাকুর মিশ্রিত বেলে মাটি আপরুন নামে পরিচিত। কাঁদাতে দোআঁশ মাটি তালুন নামে পরিচিত।
৬. এই মাটি অনুর্বর হয়।
প্রধান ফসলঃ
চা-কফি, বিভিন্ন ফল, মসলা প্রকৃতি।
উপকূলের মাটি (Coastal Soil)- অআঞ্চলিক মাটি
আরব সাগর এবং বঙ্গোপসাগরের উপকূলবর্তী অঞ্চলে এই মাটি দেখা যায়। মূলত এই মাটি লবণাক্ত প্রকৃতির। নারকেল, তরমুজ ধান এখানকার প্রধান ফসল।
তরাই অঞ্চলের মাটি (Terai Soils)- আঞ্চলিক মাটি
পর্বতের পাদদেশে নদীবাহিত নুড়ি, কাঁকড়, বালি মিশ্রণে তরাই মাটির সৃষ্টি হয়েছে। এই মাটিকে ভাবর বলে। ধান, গম এই মাটিতে ভালো জন্মায়।
অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন
1. মধ্য ও নিম্ন গঙ্গা সমভূমি ভারতের চাল পাত্র।
2. কাবেরী বদ্বীপ অঞ্চলকে দক্ষিণ ভারতের শস্য ভান্ডার বলে।
3. নিম্ন সমভূমি ভারতের পাট ক্ষেত্র।
4. কর্নাটকের যোগ জলপ্রপাত এর নাম কাজু বাদামের আধিক্যের জন্য গেরসোপ্পা। 'গের' অর্থ "কাজুবাদাম" এবং 'সোপ্পা' কথার অর্থ "পাতা বা ঝোপ"।
5. উন্মুক্ত প্রান্তরে বা কৃষিক্ষত্রে জল প্রবাহের জন্য যে ক্ষয়ের সৃষ্টি হয় তাকে খোয়াই বলে। বীরভূমে দেখা যায়। 6. পলিমাটি অধিক নাইট্রোজেন ধারণ করে বলে এই মাটি উর্বর হয়।
7. Peaty Soil দেখা যায় কেরালাতে।
8. Cash Crop of Punjab হল তুলা।
9. মরু অঞ্চলের মাটিকে বলে ভৌত শুষ্ক মৃত্তিকা।
10. উপকূলবর্তী লবণাক্ত মৃত্তিকাকে বলে শারীরবৃত্তীয় শুষ্ক মৃত্তিকা।
11. ভারতের মরুভূমি গবেষণা কেন্দ্র Central Arid Zone Research Institute রয়েছে রাজস্থানের যোধপুর।
12.ভারতের প্রধান মৃত্তিকা গবেষণা কেন্দ্র (Indian Institute of Soil Science) কোথায় অবস্থিত?
উত্তরঃ মধ্যপ্রদেশের ভূপালে।
13.উত্তর-পশ্চিম ভারতের পাঞ্জাব, হরিয়ানায় অধিক জল সেচের কারণে মাটির লবণাক্ত হয়ে পড়ছে।
14. ভারতের সবচেয়ে বেশী অঞ্চল জুড়ে আছে কোন মৃত্তিকা ?
উত্তরঃ পলি মৃত্তিকা