ভারতের জলবায়ুর উপর ক্রান্তীয় পূবালী জেটবায়ু এবং উপক্রান্তীয় পশ্চিমী জেট বায়ুর প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। এই দুটি জেট বায়ুর মধ্যে ক্রান্তীয় পূবালী জেট বায়ু গ্রীষ্মকালে বা বর্ষাকালে এবং উপক্রান্তীয় পশ্চিমী জেট বায়ুটি শীতকালে প্রবাহিত হয়। এর ফলে ভারতের জলবায়ু ব্যাপকভাবে নিয়ন্ত্রিত হয় । যেমন-
1. ক্রান্তীয় পূবালী জেট বায়ুর প্রভাবঃ
ক্রান্তীয় পূবালী জেট বায়ু জুন মাস নাগাদ ভারতের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এই সময় এই জেট বায়ু চীনের দক্ষিণ উপকূল থেকে আরম্ভ করে 12° থেকে 15° অক্ষাংশ বরাবর থাইল্যান্ড এবং ভারত হয়ে পশ্চিমে সাহারা মরুভূমি পর্যন্ত এই বায়ুটি বিস্তৃত হয়। মালয়েশিয়া থেকে ভারত পর্যন্ত এই বাতাসের গতিবেগ থাকে 100 থেকে 200 কিলোমিটার প্রতি ঘন্টায়। পশ্চিম দিকে বাতাসের গতিবেগ কমতে থাকে। ভারতে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর সক্রিয়তা অনেকাংশেই এই জেট বায়ুর উপর নির্ভর করে। এই বায়ুপ্রবাহ স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি উত্তর দিকে সরে গেলে মৌসুমী বায়ুর ছেদ দেখা যায় অর্থাৎ বৃষ্টি একটানা ভাবে না হয়ে মাঝে মাঝে বৃষ্টিপাতের বিরতি লক্ষ্য করা যায়। এছাড়া বর্ষাকালে ভারতের উপর যেসকল নিম্নচাপ, ঘূর্ণিঝড় প্রভৃতি সৃষ্টি হয় তাদের তীব্রতা এই জেট বায়ুর ওপর নির্ভর করে।
ক্রান্তীয় পূবালী জেট বায়ু |
2. উপক্রান্তীয় পশ্চিমী জেট বায়ুর প্রভাবঃ
উপক্রান্তীয় পশ্চিমী জেটবায়ু দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু ফিরে যাবার পর অর্থাৎ অক্টোবর-নভেম্বর মাসে ভারতে আবির্ভূত হয় এবং প্রায় মে মাস পর্যন্ত ভারতের ওপর এই জেট বায়ুর অবস্থান করে। ভারতবর্ষে শীতের তীব্রতা এবং স্থায়ীত্ব এই পশ্চিমী জেট বায়ুর অবস্থান এবং সক্রিয়তার ওপর অনেকটাই নির্ভর করে। এই বাতাস যতই দক্ষিণ দিকে সরে যায় শীতের তীব্রতা ততই বাড়তে থাকে। ফেব্রুয়ারি মাস নাগাদ এই বাতাস সর্বাধিক দক্ষিণদিকে অবস্থান করে। তারপর ধীরে ধীরে উত্তর দিকে সরতে থাকে। ফলে শীতের তীব্রতাও ধীরে ধীরে কমতে থাকে ।
উপক্রান্তীয় পশ্চিমী জেট বায়ু |
ভারতের আবহাওয়া এবং জলবায়ুতে জেট স্ট্রিমের প্রভাব সীমাহীন। শীতকাল এবং গ্রীষ্মকালের স্থায়িত্ব এবং তীব্রতা, বর্ষাকালের বৃষ্টিপাত ঋতু পরিবর্তন প্রভৃতি বিষয়গুলি অনেকাংশে জেট বায়ুর অবস্থান এবং গতিপ্রকৃতির ওপর নির্ভর করে।