- যে জলবায়ু অঞ্চলে বছরের বিভিন্ন সময়ে পরস্পর বিপরীত দিক থেকে বায়ু প্রবাহিত হয় সেই বায়ু মৌসুমী বায়ু নামে পরিচিত।
- ভারতকে বলা হয় - মৌসুমি জলবায়ুর দেশ।
- ভারতের জলবায়ু - ক্রান্তীয় মৌসুমী প্রকৃতির (Tropical Monsoon Type)।
- মৌসুমী বায়ুর প্রধান বিচরণ ক্ষেত্র বা ক্রীড়াক্ষেত্র (Play Field) - ভারত।
- মৌসুমি শব্দটি আরবি শব্দ "মৌসিম" (Mousim) মালায়ালম শব্দ "মনসিন" থেকে এসেছে যার অর্থ-- "ঋতু"।
- মৌসুমি বায়ু এক ধরনের সাময়িক বায়ু।
- মৌসুমী বায়ুকে সমুদ্রবায়ু এবং স্থলবায়ুর বৃহৎ সংস্করণ বলে।
ভারতের বিভিন্ন ঋতু
- গ্রীষ্মকাল (মার্চ থেকে মে)
- মধ্য ভারতের গড় উষ্ণতা থাকে 30° থেকে 45° সেলসিয়াস। উপকূল অঞ্চলের গড় উষ্ণতা থাকে 27° থেকে 30° সেলসিয়াস। পার্বত্য অঞ্চলের গড় তাপমাত্রা থাকে 15° থেকে 20° সেলসিয়াস।
- রাজস্থানের উষ্ণতা সর্বাধিক হয়। ভারতের উষ্ণতম অঞ্চল ব্রিয়াওয়ালি, বিকানের জেলা, রাজস্থান (প্রায় 56° সেলসিয়াস তাপমাত্রা)।
- পূর্ব ভারতে(পশ্চিমবঙ্গ, ঝাড়খন্ড প্রভৃতি) গ্রীষ্মকালে বজ্রবিদ্যুৎসহ ঝড় বৃষ্টি হয়। একে কালবৈশাখী বলে।উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে এই ঝড় পবাহিত হয় বলে একে "Norwester" বলে। গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ 15 থেকে 40 সেন্টিমিটার। এই কাল বৈশাখীকে অসমে "বরদৈছিলা" বলা হয়। বায়ুর গতিবেগ থাকে 60-80 কিলোমিটার প্রতি ঘন্টা ।
- উত্তর ভারত এবং উত্তর-পশ্চিম ভারতে উষ্ণ গরম বাতাস প্রবাহিত হয়। একে স্থানীয় ভাষায় লু (Loo) বলে।
- রাজস্থানে এইসময় ধূলিঝড় প্রবাহিত হয় একে আঁধি (ঘণ্টায় গতিবেগ 50 - 60 কিলোমিটার) বলে।
- কেরলে এই সময় সামান্য বৃষ্টি হয়। একে "আম্রবৃষ্টি"(15 - 40 সেন্টিমিটার) বলে। এই বৃষ্টিপাত কর্নাটকে কফি চাষের সুবিধা করে বলে একে "Cherry blossoms"(Mango Shower) বলে। তামিলনাড়ুতে একে বলে "কফি বৃষ্টি" (Coffee Rain)।
2. বর্ষাকাল বা মৌসুমী বায়ুর আগমনকাল (জুন থেকে সেপ্টেম্বর)
- ভারতবর্ষের গড় বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ 118 সেন্টিমিটার।
- গ্রীষ্মকালীন প্রচন্ড উষ্ণতায় উত্তর-পশ্চিম ভারতে গভীর নিম্নচাপ কেন্দ্রের সৃষ্টি হয়। নিম্নচাপ কেন্দ্রের আকর্ষনে দক্ষিণ গোলার্ধের ভারত মহাসাগর থেকে দক্ষিণ-পূর্ব আয়ন বায়ু ছুটে আসে। নিরক্ষরেখা অতিক্রম করার পর ফেরেলের সূত্র অনুসারে ডান দিকে বেঁকে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুরূপে প্রবাহিত হয়।
- এই সময়ের সমগ্র ভারতের তাপমাত্রা থাকে 25° থেকে 30° সেলসিয়াস।
- গঙ্গা অববাহিকা বরাবর এই সময় দীর্ঘ নিম্নচাপ বলয় (Monsoon Trough) অবস্থান করে।
- প্রতিবছর 5 জুন তারিখে মৌসুমী বায়ু কেরলে এসে পৌঁছায়। 15 জুলাইয়ের মধ্যে সমগ্র ভারতে পৌঁছায়।
মৌসুমী বায়ুর শাখা
- ভারতের প্রবাহিত মৌসুমী বায়ুর দুটি শাখায় বিভক্ত
- আরব সাগরের শাখাটি পশ্চিমঘাট পর্বতের পশ্চিম ঢালে বাধাপ্রাপ্ত প্রাপ্ত হয়ে প্রচুর শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত (Burst of Monsoon)ঘটায়। বৃষ্টিপাতের পরিমাণ 300 - 500 সেন্টিমিটার। পশ্চিমঘাট পর্বতের পূর্বঢালে বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চল সৃষ্টি হয়েছে। গড় বৃষ্টিপাত 75 সেন্টিমিটার। এই বায়ু রাজস্থানের উপর দিয়ে যাওয়ার সময় আরাবল্লী পর্বত সমান্তরালভাবে অবস্থান করায় বৃষ্টিপাত ঘটাতে পারে না। রাজস্থানে খুব কম বৃষ্টিপাত (25 সেন্টিমিটারের কম) হয়।
- বঙ্গোপসাগরের শাখাটির একটি অংশ মেঘালয় রাজ্যের খাসি পাহাড়ের প্রতিবাদ ঢালে (মৌসিনরাম) বাধাপ্রাপ্ত হয়ে প্রচুর বৃষ্টিপাত(1350 সেন্টিমিটার ) ঘটায়। মৌসিনরাম ভারত তথা পৃথিবীর সর্বাধিক বৃষ্টিবহুল স্থান।
- খাসি পর্বতের অনুবাদ ঢালে শিলংয়ে বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চল সৃষ্টি হয়েছে। এখানকার দৃষ্টিপাত 200 সেন্টিমিটার এর কম।
- বঙ্গোপসাগরের শাখার অন্য অংশটি হিমালয় পর্বতের দক্ষিণ ঢালে বাধাপ্রাপ্তধ হয়ে ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায়, পশ্চিমবঙ্গ, বিহার এবং উত্তর প্রদেশে বৃষ্টিপাত ঘটায়।
- এই বাতাস যতই পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয় জলীয়বাষ্পের পরিমাণ কমতে থাকায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমতে থাকে। এই কারণে ভারতের পূর্ব দিকের তুলনায় পশ্চিমের বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কম হয়।
3. শরৎকাল বা মৌসুমী বায়ুর প্রত্যাবর্তন কাল (অক্টোবর-নভেম্বর)
- এই সময় সূর্য ধীরে ধীরে মকরক্রান্তি রেখার দিকে' লম্বভাবে কিরণ দিতে থাকে।
- উচ্চচাপ যুক্ত বায়ুর সঙ্গে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর সংঘর্ষের ফলে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণবাতের সৃষ্টি হয়।যা "আশ্বিনের ঝড়" নামে পরিচিত ।
- এর প্রভাবে তামিলনাড়ু সহ সমগ্র পূর্ব উপকূলে বৃষ্টিপাত হয়
- এই সময়ে ভারতের উপকূল ভাগের ঘূর্ণিঝড়ের(Cyclone) সৃষ্টি হয়
- প্রত্যাবর্তনকারী মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে তামিলনাড়ু উপকূল বা করমন্ডল উপকূলে বৃষ্টি হয়। এই কারণে তামিলনাড়ু উপকূলে বছরে দুবার বৃষ্টিপাত হয়।
4. শীতকাল (ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি)
- শীতকালে উত্তর-পূর্ব দিক থেকে মৌসুমী বায়ু প্রবাহিত হয়। স্থলভাগের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয় বলে এই বায়ু শুষ্ক ( অর্থাৎ জলীয় বাষ্প থাকে না বা খুব কম থাকে) প্রকৃতির।
- এইসময় উপক্রান্তীয় পশ্চিমী জেটবায়ু হিমালয় পর্বতের দক্ষিণ দিক দিয়ে প্রবাহিত হয়।
- উত্তর-পশ্চিম ভারতের গড় উষ্ণতা থাকে 10° থেকে 15° সেলসিয়াস। মধ্যভারতে 20° সেলসিয়াস এবং দক্ষিণ ভারতে 25° সেলসিয়াস।
- লাদাখ এবং দ্রাস অঞ্চলের তাপমাত্রা - 40 ডিগ্রি পর্যন্ত পৌঁছে যায়। "দ্রাস" ভারতের শীতলতম (-48°সেলসিয়াস তাপমাত্রা) অঞ্চল।
- ভূমধ্যসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণবাতের প্রভাবে উত্তর-পশ্চিম (পাঞ্জাব, হরিয়ানা, জম্মু-কাশ্মীর) ভারতে মাঝে মাঝে একনাগাড়ে 2-3 দিনের জন্য ঝিরিঝিরি বৃষ্টি (5-10 সেন্টিমিটার) হয়। একে পশ্চিমীঝঞ্জা বা পশ্চিমী ঝামেলা (Western Disturbance) বলে।
বৃষ্টিপাত সংক্রান্ত আরও কিছু তথ্য
- বছরে দুইবার বৃষ্টিপাত হয় - করমন্ডল উপকূল, পাঞ্জাব, হরিয়ানা।
- ভারতের শুষ্কতম অঞ্চল - রাজস্থানের জয়সলমীর(12 সেন্টিমিটার)।
- মৌসুমী বায়ুর আগমন সর্বপ্রথম লক্ষ্য করা যায় -- কেরল রাজ্যে।
- দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে বৃষ্টিপাত হয় -- 78.7%
- গ্রীষ্মকাল এবং বর্ষাকালে ভারতের মোট বৃষ্টিপাত হয় -- 84%
- শীতকালে বৃষ্টিপাত হয় -- 3%
- শরৎকালে মোট বৃষ্টিপাত হয় -- 13%
- ভারতের বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চল -- পশ্চিমঘাট পর্বতের পূর্বঢাল (কর্ণাটক, তামিলনাড়ু, অন্ধ্রপ্রদেশের দক্ষিণাংশ ,বেঙ্গালুরু) এবং মেঘালয়ের রাজধানী শিলং।
- মৌসুমী বায়ুকে ভারতের আসল অর্থমন্ত্রী (Real Finance Minister in India) বলা হয়।
অন্যান্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
- লাদাখকে ভারতের "Cold Desert"বলা হয়।
- রাজস্থানকে ভারতের উষ্ণ মরুভূমি বা Hot Desert বলে ।
- দক্ষিণ পশ্চিম মৌসুমি বায়ু ভারতে আগমনের সময় ভারতের উপর পূবালী জেট বায়ু প্রবাহিত হয়।
- ডিসেম্বর মাসে ভারতের যে অংশে সৌরশক্তি আগমনের পরিমাণ সর্বাধিক -- চেন্নাই।
- মেঘালয় কথার অর্থ -- মেঘের আলয় বা মেঘের দেশ।
- পশ্চিম ভারতের সর্বাধিক বৃষ্টিপাত যুক্ত অঞ্চল -- মালাবার উপকূল ।
- MONEX (Monsoon Experiment) হল -- মৌসুমী বায়ুর গবেষণা সংক্রান্ত একটি কর্মসূচি।
- স্বাভাবিকের তুলনায় বৃষ্টিপাত যখন 75 শতাংশের কম হয় তখন তাকে "খরা" বলে. ভারতের খরা প্রবণ অঞ্চল হল- রাজস্থান, গুজরাট, মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক, মধ্যপ্রদেশ। সর্বাধিক খরাপ্রবণ রাজ্য "রাজস্থান" ।
- স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের তুলনায় বৃষ্টিপাত 25% অধিক হলে তাকে "বন্যা" বলে। ভারতের বন্যাপ্রবণ অঞ্চল হল উত্তরপ্রদেশ, বিহার, পাঞ্জাব, অসম, পশ্চিমবঙ্গ। সর্বাধিক বন্যাপ্রবণ অঞ্চল "ব্রহ্মপুত্র উপত্যকা"।
জলবায়ু সংক্রান্ত কিছু সমমানযুক্ত রেখা
- সম বায়ু চাপ রেখা-Isobar
- সম সামুদ্রিক গভীরতার যুক্ত রেখা-Isobath
- সময় লবনতা যুক্ত রেখা- Isohaline
- সমবর্ষণ রেখা-Isohyets
- সমোষ্ণ রেখা- Isotherm
- সম সূর্যালোক রেখা- Isohels
কিছু গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্র
- বায়ুপ্রবাহের গতিবেগ - Anemometer
- বায়ুর চাপ - Barometer
- বায়ুর আপেক্ষিক আদ্রতা - Hygrometer
- বৃষ্টি মাপক যন্ত্র - Rain gauge
- বায়ু প্রবাহের দিক - Wind vane
- কোন স্থানের অক্ষাংশ নির্ণয় করার যন্ত্র - Sextant
- সমুদ্রের গভীরতা মাপক - Echo Sunder
- উচ্চতা মাপক - Altimeter
- নদীর জলস্রোত মাপক - Current meter