1.পাত(Plate) কী? কেন বলা হয়?
পৃথিবীর ভূত্বক কয়েকটি খন্ডে বিভক্ত হয়ে অ্যাস্থেনোস্ফিয়ারের উপরিভাগে ভাসমান অবস্থায় রয়েছে। ভাসমান খন্ডগুলিকে পাত বলে। পাতগুলি সঞ্চরণশীল।
এই খন্ডগুলি গভীরতার তুলনায় বিস্তার অনেক বেশি। এই কারণেই খণ্ডগুলোকে পাত বলে।
2.পাত(Plate) শব্দটি কে প্রথম উল্লেখ করেছিলেন?
1965 খ্রিস্টাব্দে কানাডার ভূতত্ত্ববিদ জে.টি. উইলসন(J.T. Wilson) 'নেচার' পত্রিকায় প্রথম 'পাত' শব্দটি উল্লেখ করেন।পিঁচো (X. Le. Pichon) কে পাতসংস্থান তত্ত্বের জনক বলা হয়।
3.বৃহৎ পাত গুলির নাম লেখ।
ইউরেশীয় পাত, অস্ট্রেলিয়া পাত, ইন্দো-অস্ট্রেলিয়া পাত, আফ্রিকা পাত, আন্টার্টিকা পাত , উত্তর আমেরিকা পাত, দক্ষিণ আমেরিকা পাত, প্রশান্ত মহাসাগরীয় পাত (বৃহত্তম)।
4.মাঝারি পাত গুলির নাম লেখ।
এর সংখ্যা আটটি(8) যেমন- জোয়ান দা ফুকো পাত, কোকো পাত, নাজকা পাত, ক্যারিবিয়ান পাত, স্কোসিয়া পাত, আরবীয় পাত, ভারতীয় পাত, ফিলিপাইনস পাত।
5.ছোট পাত গুলির নাম লেখ।
মাদাগাস্কার পাত, সোমালি পাত, বার্মা পাত, পানামা পাত, টোঙ্গা পাত, ফিজি পাত, ইরান পাত, অ্যাড্রিয়াটিক পাত, গ্রিনল্যান্ড পাত, বার্মা পাত, শ্রীলঙ্কা পাত প্রভৃতি।
6.পাতপ্রান্ত( Plate Margin) এবং পাতসীমানা(Plate Boundary)?
একটি পাত যেখানে শেষ হচ্ছে তাকে পাতপ্রান্ত( Plate Margin) বলে। অপরদিকে দুটি পাত যেখানে পরস্পর মিলিত হয় তাকে পাতসীমানা(Plate Boundary) বলে বা পাত সীমান্ত বলে।
7.পাতসীমানা(Plate Boundary) কত প্রকার ও কি কি?
পাতসীমানা তিন প্রকার- অভিসারী পাতসীমানা( Convergent Plate Boundary) বা বিনাশকারী পাতসীমানা( Destructive Plate Boundary), প্রতিসারী পাতসীমানা( Divergent Plate Boundary) বা গঠনকারী পাতসীমানা( Constructive Plate Boundary) এবং নিরপেক্ষ পাতসীমানা( Conservative Plate Boundary)।
8.পাত কত প্রকার ও কি কি?
পাত তিন প্রকার- মহাদেশীয় পাত( Continent), মহাসাগরীয় পাত( Ocean), মহাদেশীয়-মহাসাগরীয়( Continent-Ocean) পাত।
9.প্লিউম(Plume) কী?
ম্যাগমার ঊর্ধ্বমুখী প্রবাহকে প্লিউম(Plume) বলে। প্লিউমের প্রভাবে ভূত্বক পাতলা এবং স্ফীত হয়। কখনো কখনো প্লিউম স্থান থেকে ম্যাগমা নির্গত হয় এবং আগ্নেয়গিরি গঠন করে। আফ্রিকার আহাজ্ঞার এবং টিবেসটি এইরকম আগ্নেয়গিরি প্লিউমের প্রভাবে সৃষ্টি হয়েছে। প্লিউম সাধারণত পাতের মধ্যবর্তী স্থানে গড়ে ওঠে।
10.তপ্ত বিন্দু( Hot Spot) কি?
ভূত্বকের যে অংশের তাপমাত্রা পার্শ্ববর্তী স্থানের তাপমাত্রা থেকে বেশি হয় সেই স্থানকে তপ্ত বিন্দু( Hot Spot) বলে। আগ্নেয় পদার্থ ভূপৃষ্ঠের নিকটে অবস্থান করার জন্য এরকম হয়। পৃথিবীতে এইরূপ 22 থেকে 25 টি তপ্ত বিন্দু রয়েছে।
11.পরিচলন স্রোত( Convection Current) কি?
আর্থার হোমসের( Arthur Holmes) মতে অ্যাস্থেনোস্ফিয়ারের উত্তপ্ত গলিত ম্যাগমা উপরের দিকে স্থানান্তরিত হয়ে ভূত্বকের তলদেশে বাধা পায় এবং পাশের দিকে পরস্পর এর বিপরীতে প্রবাহিত হয়। কিছুদুর গিয়ে নিচে নেমে যায়। নিম্নগামী স্রোতটি পুনরায় পূর্বের স্থান থেকে ঊর্ধ্বগামী হয়। এভাবে পরিচালন কোষ তৈরি করে। এর প্রভাবে পাত সঞ্চালন হয়।
12.পাত এর গতিবেগ কত?
প্রতিটি পাতের গতি এক রকম হয় না। তবে পাত গুলি বছরে সর্বোচ্চ 12 সেন্টিমিটার পর্যন্ত স্থানান্তরিত হয়।
13.অধঃপাত বলয় (Subduction zone) বা নিমজ্জমান অঞ্চল কি?
পাতসংস্থান তত্ত্ব অনুসারে বিনাশকারী পাত সীমানায় দুটি মহাসাগরীয় পাত পরস্পর মুখোমুখি হলে অপেক্ষাকৃত ভারী মহাসাগরীয় পাত হালকা মহাসাগরীয় পাতের নিচে প্রবেশ করে। যে অঞ্চলে নিমজ্জিত পাতটি প্রবেশ করে তাকে অধঃপাত মন্ডল(Subduction zone) বলে।। এই অংশে প্রায়ই ভূমিকম্প লক্ষ্য করা যায়। পেরু-চিলি খাতে এর নিদর্শন দেখা যায়।
14.বেনিয়ফ মন্ডল( Benioff Zone) কি?
পাতসংস্থান তত্ত্ব অনুসারে বিনাশকারী পাত সীমানায় একটি মহাদেশীয় পাত এবং একটি মহাসাগরীয় পাত পরস্পর মুখোমুখি হলে মহাসাগরীয় পাতটি অপেক্ষাকৃত ভারী হওয়ায় মহাদেশীয় পাতের নিচে প্রবেশ করে। মহাসাগরীয় পাতটির এই নিমজ্জিত ভূমিকম্প প্রবণ ঢালু পাতসীমানাকে Huge Beni-off এর নামানুসারে বেনিয়ফ মন্ডল( Benioff Zone) বলে।
বৈশিষ্ট্য-
i. গভীরতা- ভূ-অভ্যন্তরে 50 থেকে 250 কিলোমিটার পর্যন্ত গভীরতা থাকে।
ii. ঢাল- নিমজ্জিত পাতের নতি 45° হয় ।তবে 30° থেকে 80° ডিগ্রী পর্যন্ত হয়ে থাকে।
iii.প্রকৃতি- অত্যন্ত ভূমিকম্পপ্রবণ।
উদাহরণ- পেরু এবং চিলি খাতে দেখা যায়।
15.কর্ডিলেরা( Cordillera) কি?
কর্ডিলেরা শব্দটির অর্থ হল 'শৃংখল'। ভঙ্গিল পর্বতমালায় যদি সমান্তরালভাবে কয়েকটি পর্বতশ্রেণী অবস্থান করে তাকে কর্ডিলেরা( Cordillera) বলে।উত্তর আমেরিকার রকি পার্বত্য অঞ্চলে এইরূপ কর্ডিলেরা( Cordillera) দেখা যায় ।
16.বৃত্তচাপীয় দ্বীপমালা( Island Arc) কি? এর উদাহরণ দাও।
অভিসারী পাত সীমানায় দুটি মহাসাগরীয় পাত পরস্পর মুখোমুখি হলে অপেক্ষাকৃত ভারী মহাসাগরীয় পাতটি অপর পাতটির নিচে প্রবেশ কতি।অনেক গভীরে প্রবেশের জন্য নিমজ্জিত পাতটি গলে যায়। গলিত ম্যাগমা অগ্ন্যুদগমের মাধ্যমে বেরিয়ে এসে সমুদ্রের তলদেশে সঞ্চিত হয়ে আগ্নেয়গিরি সৃষ্টি করে। ক্রমাগত অগ্ন্যুৎপাতের ফলে এই আগ্নেয়গিরি গুলির উচ্চতা বৃদ্ধি পায়। পরবর্তীতে সমুদ্রপৃষ্ঠের উপরে জেগে ওঠে এবং আগ্নেয় দ্বীপ গঠন করে। এই দ্বীপগুলি সম্মিলিতভাবে বৃত্তচাপের মতো দেখতে হয় বলে এদের বৃত্তচাপীয় দ্বীপমালা( Island Arc) বলে। যেমন- হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জ, এলিশিয়ান দ্বীপপুঞ্জ।
17.সমুদ্রখাত( Trench) কি?
মহাদেশীয়-মহাসাগরীয় এবং মহাসাগরীয়-মহাসাগরীয় অভিসারী পাত সীমানায় যে সংকীর্ণ এবং গভীর অংশে সৃষ্টি হয় তাকে সমুদ্রখাত( Trench) বলে। পাতসীমানা বরাবর পাত গুলির নিচের দিকে বক্রতা থাকার জন্য সমুদ্রখাত সৃষ্টি হয়। যেমন- মারিয়ানা খাত, সুন্দা খা্ত, পের-চিলি খাত।
18.জিওসিনক্লাইন( Geosyncline) বা মহীখাত কি?
দুটি মহাদেশের মধ্যবর্তী স্থানে যে অগভীর সামুদ্রিক অংশ রয়েছে তাকে মহীখাত বা জিওসিনক্লাইন( Geosyncline) বলে। জিওসিনক্লাইনে মহাদেশ থেকে পলি পরিবাহিত হয়ে সঞ্চিত হয়। পরবর্তীকালে এই পলিরাশি ভাঁজপ্রাপ্ত হয়ে ভঙ্গিল পর্বত সৃষ্টি করে।
19.জিওক্লাইন( Geocline) কি?
মহাদেশের প্রান্তভাগে অবস্থিত অগভীর সামুদ্রিক অংশকে জিওক্লাইন( Geocline) বলে। জিও ক্লাইন অংশে ক্রমাগত পলি সঞ্চিত হয়। পরবর্তীকালে এই পলি ভাঁজপ্রাপ্ত হয়ে উত্থিত হয় এবং ভঙ্গিল পর্বত সৃষ্টি করে।
20.মায়োজিওক্লাইন( Miogeocline) কি?
জিওক্লাইনের যে অংশ মহাদেশের প্রান্তভাগে অবস্থিত তাকে মায়োজিওক্লাইন বলে। এই অংশে স্থলভাগ থেকে পলি এসে সঞ্চিত হয়।
21.ইউজিওক্লাইন( Eugeocline) কি?
জিওক্লাইনের যে অংশ মহীঢাল বরাবর অবস্থিত তাকে ইউজিজক্লাইন বলে।
22.মেলাঙ্গে( Melange) কি?
মহাসাগরীয়-মহাসাগরীয় অভিসারী পাত সীমানায় ভারী মহাসাগরীয় পাত হাল্কা মহাসাগরীয় পাতের নিচে প্রবেশ করে। যে পাতটি নিম্নগামী হয় সেই পাতের উপর সঞ্চিত পলিরাশি পাতের সঙ্গে নিম্নগামী না হয়ে অল্পগভীর স্থানে ভাঁজপ্রাপ্ত হয় এবং সংঘট্টচ্যুত হয়ে বৃত্তচাপীয় দ্বীপমালার বহিঃস্থ অংশের সৃষ্টি হয়। একে মেলাঙ্গে( Melange) বলে।
23.মোলাস কি?
ভঙ্গিল পর্বত উত্থানের শেষ পর্বে ভঙ্গিল পর্বতের পাদদেশে যে অবশিষ্ট মহীখাত অবস্থান করে সেখানে সবুজ বেলেপাথরের অবক্ষেপকে মোলাস বলে।
24.সিবনরেখা বা সন্ধিরেখা( Suture Line) কি?
অভিসারী পাত সীমানায় দুটি মহাদেশীয় পাত যে রেখা বরাবর পরস্পর মিলিত হয়, তাকে সিবনরেখা বা সন্ধিরেখা রেখা বলে।
25.ফ্লিশ কি?
ভঙ্গিল পর্বত সৃষ্টির শেষ পর্যায়ে পর্বতের পাদদেশে অবস্থিত অবশিষ্ট মহীখাতে পলির সঞ্চয় থেকে সৃষ্ট কংগ্লমারেট, ব্রেকশিয়া জাতীয় অপক্ষেপকে ফ্লিশ বলে।
26. মারল কি?
মহীখাতে স্থলবিধৌত পলিসঞ্চয় থেকে সৃষ্ট অপক্ষেপকে মারল বলে।
27.ফ্লেক টেকটনিকস( Flake Tectonics) কি?
মহাদেশীয়-মহাসাগরীয় অভিসারী পাত সীমানায় মহাসাগরীয় পাত মহাদেশীয় পাতের নিচে প্রবেশ করে। কিন্তু মহাসাগরীয় পাতের কিছু অংশ যদি প্রবেশ না করে মহাদেশীয় পাতের উপরে উত্থিত হয় বা উঠে যায় তাকে ফ্লেক টেকটনিকস বলে। একে বিপরীত নিমজ্জন (Obduction)ও বলে।
28.পৃথিবীর বৃহত্তম গ্রস্ত উপত্যকার নাম কি?
আফ্রিকার পূর্বদিকে অবস্থিত দ্য গ্রেট রিফট ভ্যালি(The Great Rift Valley) ।
29.ট্রান্সফর্ম চ্যুতি(Transform Fault) কি?
যখন দুটি পাত পরস্পরের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত না হয়ে অনুভূমিকভাবে বা পাশাপাশি পরস্পর পরস্পরকে অতিক্রম করে, এই ধরনের পাত সীমানাকে ট্রান্সফর্ম চ্যুতি(Transform Fault) বা নিরপেক্ষ পাত সীমানা বলে। যেমন- ক্যালিফোর্নিয়ার পশ্চিমে অবস্থিত সান আন্দ্রিজ চ্যুতি পৃথিবীর বৃহত্তম ট্রান্সফর্ম চ্যুতি।
30.ত্রিপাত সংযোগ(Tripple Junction or Tri-Junction Fault) কি?
যেখানে তিনটি পাত একসাথে মিলিত হয় তাকে ত্রিপাত সংযোগ(Tripple Junction or Tri-Junction Fault) বলে। এটি 'Y' আকৃতির পাত সীমানা। এই পাত সীমানা মূলত প্রতিসারী প্রকৃতির হয়। আফ্রিকার বৃহত্তম উপত্যকা বরাবর আফ্রিকার পাত, আরবিয় পাত এবং ভারত মহাসাগরিয় পাতের মিলনস্থলে ত্রিপাত সংযোগ দেখা যায়।
31.অলাকোজেন(Aolacogen) কি?
যে সীমানা বরাবর তিনটি পাত একে অপরের সঙ্গে মিলিত হয় তাকে ত্রিপাত সংযোগ বলে। এই সীমানা বরাবর দুটি পাত অধিক সক্রিয় থাকে বা তাদের গতি বেশি থাকে। তৃতীয় পাতটি দুর্বল থাকে এই দুর্বল পাতটিকে অলাকোজেন(Aolacogen) বলে। ভূসংস্থানগত দিক থেকে এই পাতটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ