যে সকল স্থানে বৃষ্টিপাত বাৎসরিক 25 সেমির কম হয় সেখানে মরুভূমির সৃষ্টি হয়। মরুভূমি উষ্ণ এবং শীতল এই দুই রকমের হয়ে থাকে। বৃষ্টিপাতের পরিমাণ খুব কম হয় বলে মৃত্তিকা কণাগুলি আলগা প্রকৃতির হয়। উদ্ভিদের অনুপস্থিতির কারণে বায়ুপ্রবাহ এখানে প্রধান শক্তি হিসেবে কাজ করে। ফলে মরু অঞ্চলে বায়ুর ক্ষয় কার্যের ফলে গঠিত ভূমিরূপ এবং সঞ্চয় কার্যের ফলে গঠিত ভূমিরূপ দেখা যায়। বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কম হলেও হঠাৎ করে অধিক পরিমাণ বৃষ্টিপাত হওয়ার দরুন প্রবাহমান জলধারা এবং বায়ুর কাজের সম্মিলিত ভূমিরূপ গড়ে ওঠে। এরকমই কিছু ভূমিরূপ, যেমন- আর্গ(Erg), ওয়াদি(Wadi), হামাদা(Hammada),রেগ,সেরির,ধান্দ নিয়ে এখানে আলোচনা করা হলো-
আর্গ(Erg)
"Erg"একটি আরবি শব্দ। যার অর্থ পরিবর্তনশীল বালির অঞ্চল (Region of Shifting Sand)। I.G. Wilson এর মতে বালুকাময় মরুভূমিকে আর্গ (সাহারা মরুভূমিতে) বা কুম (আরবে দেখা যায়, যেমন- কারাকুম, কিজিলকুম) বলা হয়। অন্য কথায় বলা যায় যেসকল মরু অঞ্চলের বালি স্তূপের আকারে জমাটবদ্ধ হয়ে ছোট ছোট পাহাড়ের মত অবস্থান করে তাকে আর্গ(Erg) বলে।
আর্গ(Erg) |
বৈশিষ্ট্য-
i) আর্গ বিস্তীর্ণ এবং অনুভূমিক বালুকা রাশির স্তর।
ii) আর্গ এ ঢেউ খেলানো বালুকা সমুদ্র (Sea Sand) দেখা যায়।
iii) আর্গ সচল প্রকৃতির হয় অর্থাৎ বালুকারাশি এক স্থান থেকে অন্য স্থানে স্থানান্তরিত হয়। উদাহরণ- সৌদি আরবের রাব এল খালি পৃথিবীর বৃহত্তম আর্গ।
রেগঃ-
যেসকল মরু অঞ্চলে বালির সঙ্গে পাথরের টুকরো একসঙ্গে মিশে অবস্থান করে তাকে রেগ বলে। ভারতের জয়সলমীরে রেগ দেখা যায়।
রেগ |
হামাদা (Hammada)
মরু অঞ্চলে শক্ত পাথরের ঢাকা ভূমিকে হামাদা(Hammada) বলে। মরু বিজ্ঞানী I.G. Wilson এর মতে "শিলাময় বিস্তীর্ণ সমতল ভূমির মত ও বন্ধুর উন্মুক্ত মরুভূমিকে হামাদা(Hammada) বলে"।
হামাদা(Hammada) |
বৈশিষ্ট্যঃ
i) আমাদা উদ্ভিদ শূন্য মরুভূমি।
ii) হামাদা বায়ু প্রবাহের ফলে মসৃণ প্রস্তর এবং মেঝে দেখা যায়।
iii)বালির কোন অস্তিত্ব এখানে চোখে পড়ে না।
উদাহরণঃ
অস্ট্রেলিয়া এবং গোবি মরুভূমি হামাদা জাতীয় মরুভূমি।
সেরিরঃ
ছোট ছোট শিলাখণ্ড, নুড়ি দিয়ে ঢাকা ভূমিরূপকে সেরির বলে।
ওয়াদি (Wadi)
মরু অঞ্চলে অবস্থিত শুষ্ক নদীখাত গুলোকে ওয়াদি(Wadi) বলে।
সৃষ্টির কারণঃ
মরু অঞ্চলে ভূপৃষ্ঠের উপরিভাগের মৃত্তিকা আলগা প্রকৃতির হয়। হঠাৎ বৃষ্টিপাত হলে বৃষ্টির জলের সঙ্গে আলগা মৃত্তিকার বালুকণা প্রবাহিত হয়। যে স্থানে জল প্রবাহিত হয় সেখানে খাতের সৃষ্টি করে। পরবর্তীতে জল শুকিয়ে গেলে জল বাহিত পলি খাতের মধ্যে অবস্থান করে। এক্ষেত্রে নদীখাত গুলো শুষ্ক অবস্থায় থাকে। এদেরকে বলে ওয়াদি(Wadi)। আরবে রাব আল খালি মরুভূমিতে দেখা যায়।
ওয়াদি(Wadi) |
ধান্দঃ
মরু অঞ্চলে প্রবল বায়ুপ্রবাহের কারণে বালুকণাগুলি এক স্থান থেকে অন্য স্থানে উড়ে যায়। বায়ুর অপসরণ কার্যের ফলে ছোট-বড় নানা আকৃতির গর্তের সৃষ্টি হয়। রাজস্থান মরু অঞ্চলে এই ধরনের ছোট বড় গর্তকে ধান্দ বলে।
উদাহরণঃ আফ্রিকার সোনেরান মরুভূমি এবং থর মরুভূমিতে দেখা যায়।