প্রাকৃতিকভাবে অথবা মনুষ্যসৃষ্ট কারণে মৃত্তিকার উপরিভাগ থেকে অথবা শীর্ষ স্তরের মৃত্তিকা অপসারিত বা ক্ষয়প্রাপ্ত হলে তাকে মৃত্তিকা ক্ষয় বলে। মৃত্তিকা ক্ষয়ের কারণগুলিকে একটি সমীকরণের সাহায্যে প্রকাশ করা যায়-
E = f (Cl,T,R,V,S…H)
এখানে,
E=মৃত্তিকা ক্ষয় (Erosion), f=অপেক্ষক, Cl=জলবায়ু (Climate), T=ভূপ্রকৃতি (Topography), R=শিলার ধরন (Rock), V=উদ্ভিদ (Vegetation), S=মাটির ধর্ম (Soil) এবং
H=মানুষ (Human)
এখানে মৃত্তিকা ক্ষয়ের প্রাকৃতিক কারণগুলি আলোচনা করা হলো।
1.জলবায়ু (Climate)
বৃষ্টির ফোঁটা এবং বৃষ্টির পরবর্তী পৃষ্ঠপ্রবাহ, তাপমাত্রা, বায়ুপ্রবাহ প্রভৃতি উপাদান মৃত্তিকার ক্ষয়কে প্রভাবিত করে। এর মধ্যে বৃষ্টির ফোঁটা এবং জলপ্রবাহ জনিত ক্ষয় সর্বাধিক হয়। বৃষ্টিপাতের পরিমাণ এবং স্থায়িত্বের ওপর মৃত্তিকা ক্ষয়ের পরিমাণ নির্ভর করে।
2.ভূপ্রকৃতি (Topography)
মৃত্তিকা ক্ষয় ভূ-প্রকৃতির ওপর অনেকটাই নির্ভর করে। ভূমির ঢাল, ভূমির ঢাল এর দৈর্ঘ্য, স্থানীয় উচ্চতা প্রভৃতি মৃত্তিকা ক্ষয়কে নিয়ন্ত্রণ করে। অধিক ঢাল যুক্ত অঞ্চলে পৃষ্ঠ প্রবাহের গতি বেশি হওয়ায় মৃত্তিকা ক্ষয় অধিক হয় এবং মৃদু ঢাল যুক্ত অঞ্চলে মৃত্তিকা ক্ষয় কম হয়।
ঢাল বেশি হওয়ায় মিত্তিকা ক্ষয় অধিক |
3.শিলার ধরন (Rock)
শিলার ভৌত এবং রাসায়নিক ধর্ম, যেমন- কাঠিন্য, গ্রথণ, সচ্ছিদ্রতা, প্রবেশ্যতা প্রভৃতি মৃত্তিকা ক্ষয়কে পরোক্ষভাবে নিয়ন্ত্রণ করে।
4.স্বাভাবিক উদ্ভিদ(Vegetation)
উদ্ভিদের আবরণ মৃত্তিকা ক্ষয়ের একটি প্রধান নিয়ন্ত্রক। যেমন-
i. উদ্ভিদ দ্বারা আচ্ছাদিত অংশে বৃষ্টির ফোঁটা তীব্র গতিতে মাটিকে আঘাত করতে পারে না, ফলে মৃত্তিকা ক্ষয় কম হয়।
ii. বৃষ্টির জল গাছের কান্ড, পাতায় আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে ধীরগতিতে মাটিতে এসে পৌঁছায়। ফলে অনুস্রবন প্রক্রিয়া অধিক হওয়ায় পৃষ্ঠপ্রবাহ কম হয়।
iii. উদ্ভিদের শিকড় মাটিকে শক্তভাবে আবদ্ধ করে ক্ষয়ের হাত থেকে রক্ষা করে।
iv. উদ্ভিদ বায়ুর গতিকে প্রতিহত করে মৃত্তিকা ক্ষয়কে রক্ষা করে।
v. উদ্ভিদ আচ্ছাদিত অঞ্চলে তাপমাত্রার পার্থক্য কম হওয়ায় মৃত্তিকায় ফাটল সৃষ্টি হয় না।
উদ্ভিদ আচ্ছাদন |
5.মাটির ধর্ম (Soil)
মৃত্তিকার ক্ষয় প্রতিরোধ ক্ষমতা মৃত্তিকা ক্ষয়কে নিয়ন্ত্রণ করে। মৃত্তিকার কাঠিন্য, কোমলতা এই ধর্মগুলি মৃত্তিকা কণার আকৃতি, গঠন, জৈব পদার্থের পরিমাণ প্রভৃতির ওপর নির্ভর করে। এই উপাদান গুলো সম্মিলিত ভাবে মৃত্তিকা ক্ষয়কে নিয়ন্ত্রণ করে।